প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, স্বাধীন ও দক্ষ বিচার বিভাগ গড়ে তুলতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লব নতুন সভ্যতা গড়ে তোলার সুযোগ করে দিয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা এই সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য বিচার বিভাগ সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থান ও গণহত্যা সব ধরনের অবিচারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের অবস্থানকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরেছে।

গতকাল রোববার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত ‘বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও দক্ষতা’ বিষয়ক এক জাতীয় সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টা বলেন, তরুণরা যে স্বপ্ন নিয়ে জুলাই অভ্যুত্থান করেছিল, সেটা পূরণ করার দায়িত্ব আমাদের। তরুণরা দেশ নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিল, তা বাস্তবায়ন সম্ভব, যদি সঠিক উপায়ে কাজ করা যায়।

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘স্বাধীনতার পর ৫৪ বছরে যে সংস্কারগুলো অসম্পূর্ণ ছিল, তা পূরণ করাই এখন অন্তর্বর্তী সরকারের মূল লক্ষ্য। এই সংস্কারের সুযোগ এনে দিয়েছে জুলাই গণঅভ্যুত্থান। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘অতীতের সরকারগুলো বিচার বিভাগকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে। কিন্তু আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, এই বিচার প্রক্রিয়াকে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ রাখতে।’

প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আজকে আমাদের জন্য একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত। কারণ আমরা সামনে জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর উদযাপন করবো। আমাদের তরুণরা রক্তের বিনিময়ে তাদের প্রত্যাশা জানিয়েছে এবং আমাদের দায়িত্ব হচ্ছেÑ তাদের নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়া। এসব কিছুই সম্ভব যদি শুরুটা সঠিকভাবে করা হয়। জুলাই অভ্যুত্থান আমাদের সেই সুযোগ এনে দিয়েছে। এই সুযোগ আর কখনও আসবে না। এই সুযোগ হাতছাড়া করা উচিত হবে না। ’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ একটা জটিল পরিস্থিতির মধ্যে আছে। হাজারো মানুষের ত্যাগের মধ্য দিয়ে হওয়া জুলাই গণঅভ্যুত্থান আমাদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার প্রমাণ। এই জাগরণ এসেছিল হাজারো মানুষের প্রাণের বিনিময়ে, যেখানে আরও কয়েক হাজার হতাহত হয়েছে। এখন আমরা যারা বেঁচে আছি, তাদের ওপর কিছু দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। এই দায়ভার শেষ তখনই হবে, যখন জুলাইয়ের মানবতাবিরোধী অপরাধের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে।’

তিনি বলেন, ‘তবে আমাদের মনে রাখতে হবেÑজুলাই অভ্যুত্থান ক্ষমতার পালাবদলের জন্য হয়নি। গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত যে গভীর আধিপত্য ও পক্ষপাতিত্ব রয়ে গেছে, তা ভেঙে ফেলার তীব্র আকাক্সক্ষার মধ্য দিয়ে এটি ইন্ধন পেয়েছিল। বিপ্লবের প্রতি আমাদের লক্ষ্যÑআমাদের সব কর্মের দ্বারা পরিচালিত একটি ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা, সাম্য ও মর্যাদা সৃষ্টি করা। এই অভ্যুত্থান পুরনো শৃঙ্খলা ভেঙে এমন একটি রাষ্ট্রকে উন্মোচিত করতে চেয়েছিল, যাতে কোনও একক দল কখনও মরিয়া বা কর্তৃত্ববাদী হয়ে উঠতে না পারে। এই আশা এবং অনুপ্রেরণা এখন আমাদের পুনরুত্থানের কঠিন কাজে সন্তুষ্টি জাগায়।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘চলমান সংস্কারের একজন স্টেকহোল্ডার হিসেবে আমাদের যা করার কথা, আমরা তা-ই করছি। যখন আমরা সংস্কারের কথা বলি, তখন কিন্তু অল্প কোনও কিছুর কথা বলি না, যেটি সময় এবং ক্ষমতার চাপে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আমরা সেসব কাজের কথাই বলছিÑযেগুলো বিগত ৫৪ বছরে করা হয়নি। আমরা সেই পরিবর্তনের কথা বলি, যা শক্তিশালী গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে। আমাদের ওপর যে সংস্কারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সেসব কাজের ফলে স্বৈরাচারতন্ত্র ভেঙে যাবে।’

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এতে অন্যান্যের মধ্যে আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল, বাংলাদেশের অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদীন, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

সভাপতির বক্তব্যে প্রধান বিচারপতি বলেন, বিচার বিভাগকে নিজের পায়েই শক্ত হয়ে দাঁড়াতে হবে। এটর্নি জেনারেল বলেন, আমরা আর এমন বিচার বিভাগ চাই না যে বিচার বিভাগ রাতে মোমবাতি জ¦ালিয়ে দেশের গণতন্ত্র হরণের রায় দিবে। আমরা এমন বিচার অঙ্গন চাই না যেখানে খাইরুল হকের মতো লোকেরা বিচার করবে। আমরা এমন বিচার বিভাগ চাই না যেখানে প্রফেসর ইউনূসের মতো সূর্য সন্তানেরা দ্বারে দ্বারে ঘুরতে থাকবে। তিনি বিচার বিভাগে যারা স্বৈরাচারের দোসর রয়েছে তাদের বিচারের আওয়াতায় আনার আহ্বান জানান।