বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার চলমান আন্দোলনের উত্তাল সময়েও যিনি পরিবার নিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার স্বপ্ন দেখেছিলেন, সেই মো. সাইফুল ইসলাম ’২৪ এর ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় গুলীবিদ্ধ হয়ে শাহাদাতবরণ করেন।
শহীদ মো. সাইফুল ইসলাম (৪৯) ছিলেন একজন কন্ট্রাকটর। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে দক্ষিণখানে বসবাস করছিলেন স্ত্রী ও একমাত্র কন্যাকে নিয়ে। জন্ম ১৯৭৫ সালের ১ জানুয়ারি, ঝালকাঠি সদরের দেউলকাঠি গ্রামে। শৈশবেই পরিবারের একমাত্র ভরসা হয়ে উঠেন তিনি। ১৫ বছর বয়সে পড়ালেখা ছেড়ে ঢাকায় আসেন জীবিকার খোঁজে। দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালানো শুরু করেন। পরে দক্ষিণখানের ব্যবসায়ী মসরু চৌধুরির অধীনে চাকরি পান।
স্বভাবে ছিলেন অতি বিনয়ী, নিরহংকারী ও দানশীল। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় অনেক অচেনা মানুষকেও তিনি নীরবে সহায়তা করেছেন। তার একমাত্র কন্যা বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী।
২৪ এর ৫ আগস্ট সন্ধ্যায় অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে দক্ষিণখানের ৪ নম্বর সেক্টরের কাছে তিনি গুলীবিদ্ধ হন। আহত অবস্থায় কুয়েত মৈত্রী হাসপাতাল, উত্তরা আধুনিক হাসপাতাল ও পরে আইচি হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
তার কন্যা সোহানা আক্তার মীম বলেন, বিকেলে বাবার সঙ্গে স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলেছিলাম। ভাবিনি ওই কথাই হবে আমাদের শেষ কথা।
শহীদ সাইফুল ইসলামের প্রথম জানাযা অনুষ্ঠিত হয় দক্ষিণখান নিপা গ্রুপের সামনে এবং দ্বিতীয় জানাণা হয় নিজ গ্রাম ঝালকাঠির দেউলকাঠিতে। পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
শহীদের এক প্রতিবেশী, ডা. হাবিব বলেন, সাইফুল ভাই ছিলেন সবার ভরসার জায়গা। এমন মানুষ আমাদের সমাজে বিরল।
এই সাহসী ও মানবিক মানুষটির মৃত্যুতে তার পরিবার, প্রতিবেশী ও আন্দোলনের সহযোদ্ধাদের মাঝে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে।