শুরু হলো ঈদ আনন্দ ভাগাভাগির করতে গ্রামের বাড়ি ফেরার আনুষ্ঠানিক যাত্রা। অবশ্য অনানুষ্ঠানিক যাত্রা আরও অনেক আগেই শুরু হয়েছে। বাচ্চাদের স্কুল ছুটি হওয়ার পর থেকেই সুযোগ বুঝে পরিবারের সদস্যদের বাড়ি পাঠানো শুরু করেন অনেক চাকুরীজীবী। কিন্তু যাদের আগে গেলে চলবে না; কেবল তারাই থেকে গেছেন ঈদ যাত্রায় নানা ভোগান্তি জানার পরও। সরকারের পক্ষ থেকে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা নিরাপদ করতে নানা তৎপরতার কথা জানা গেছে।
ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ সদর দপ্তর থেকে বেশকিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে সারাদেশে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ছাড়াও আনসার সদস্যরা এসময় মাঠে থাকবে।
পুলিশের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ঈদে রাজধানী থেকে এক কোটির বেশি মানুষ বাড়ি ফেরেন। অন্যদিকে ৩০ লাখের মতো রাজধানীতে প্রবেশ করেন। এই বিপুল সংখ্যক মানুষের বের হওয়া এবং প্রবেশের বিষয়টি নিশ্চিতে পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। নির্দেশনার অংশ হিসেবে কিছু সড়কে ২৫ মার্চের পর যাত্রীবাহী যানবাহন ছাড়া অন্য বাহন চলাচল না করার আহ্বান জানিয়েছে ডিএমপি।
নির্দেশনায় বলা হয়, ২৫ মার্চ থেকে ঈদের আগের রাত পর্যন্ত ঈদ যাত্রা সংশ্লিষ্ট যানবাহনের চলাচল সুগম করার জন্য জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অন্যান্য যানবাহন সমূহকে কিছু সড়ক এড়িয়ে চলার অনুরোধ করা হলো। এসব সড়কের মধ্যে রয়েছে- ১) ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক (এয়ারপোর্ট টু আব্দুল্লাপুর) ২) ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক (যাত্রাবাড়ী টু সাইনবোর্ড)৩) পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ে (৩০০ ফিট সড়ক) ৪) ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক (মিরপুর রোড: শ্যামলী টু গাবতলী)৫) ঢাকা-কেরানীগঞ্জ সড়ক (ফুলবাড়িয়া টু তাতিবাজার টু বাবুবাজারব্রিজ)৬) ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক (যাত্রাবাড়ী টু বুড়িগঙ্গাত্রীজ)৭) মোহাম্মদপুর বসিলা ক্রসিং হতে বসিলা ব্রিজ সড়ক ৮) আব্দুল্লাপুর টু ধউর ব্রিজ সড়ক।
এছাড়া মন্ত্রণালয়ের গৃহীত সিদ্ধান্তের আলোকে ২৫ মার্চ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত এবং ঈদ পরবর্তী তিন দিন মহাসড়কে ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও লরি চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য-দ্রব্য, পঁচনশীল দ্রব্য, গার্মেন্টস সামগ্রী, ওষুধ, সার এবং জ্বালানি বহনকারী যানবাহনসমূহ এর আওতামুক্ত থাকবে। এছাড়া আব্দুল্লাহপুর থেকে ধউর/আশুলিয়া সড়ক একমুখী করা হবে। আর বিআরটি লেন দিয়ে শুধু ঢাকা থেকে যানবাহন বের হবে। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানিয়ে ডিএমপি বলেছে, ঢাকা-আশুলিয়া মহাসড়কের উত্তরার আব্দুল্লাহপুর থেকে কামারপাড়া হয়ে ধউর ব্রিজ পর্যন্ত সড়কটিতে শুধুমাত্র ঢাকা মহানগর হতে বের হওয়ার জন্য (একমুখী) সব ধরনের যানবাহন চলাচল করবে। ওই সড়কের আশুলিয়া-ধউর-কামারপাড়া-আব্দুল্লাহপুর হয়ে ঢাকা প্রবেশ করবে এমন যানবাহন সমূহ আশুলিয়া-ধউর-পঞ্চবটি হয়ে মিরপুর বেড়িবাঁধ সড়ক দিয়ে গাবতলী/অন্য এলাকায় প্রবেশ করবে।
এছাড়া ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের এয়ারপোর্ট টু গাজীপুর আসা ও যাওয়ার লেন দুটিতে শুধুমাত্র ঢাকা হতে বের হওয়ার জন্য (একমুখী ডাইভারসন) সব ধরনের যানবাহন ঢাকা হতে জয়দেবপুর চৌরাস্তার দিকে চলাচল করবে। উক্ত বিআরটি এর ঢাকায় প্রবেশের লেনটি দিয়ে কোনো যানবাহন ঢাকা অভিমুখে (ইনকামিং) আসতে পারবে না। মহাসড়কের অন্যান্য লেনের গাড়ি আগের মতো স্বাভাবিকভাবে চলাচল করবে। বিআরটি এর ঢাকা অভিমুখী যানবাহন সমূহ অন্যান্য যানবাহনের সঙ্গে স্বাভাবিক রাস্তা লেনে ঢাকায় আগমন করবে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. নাসিমুল গনি সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আগের চেয়ে আরো অনেক উন্নতি হয়েছে। তবে ঈদকে সামনে রেখে সারাদেশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সার্বক্ষণিক মনিটরিং করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা নিয়োজিত রয়েছেন। পুলিশ সদর দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে, এবার ঈদকেন্দ্রিক নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ সংখ্যক পুলিশ সদস্য দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে।
এছাড়া সারাদেশে র্যাবের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। র্যাবের বিপুলসংখ্যক সদস্য ঈদকেন্দ্রিক নিরাপত্তায় মাঠে থাকবে। এছাড়া বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সহায়তায় মাঠে থাকবে।
আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে রেল ও সড়ক পথে ঈদে ঘরমুখো মানুষের যাতায়াতে বিশেষ ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে ও বাস মালিকরা। গতকাল সোমবার ভোর ৬টায় ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে যাওয়া ধূমকেতু এক্সপ্রেসের যাত্রা শুরুর মাধ্যমে এবারের ঈদুল ফিতরের ট্রেনযাত্রা শুরু হয়। এদিন সকাল থেকে বেশ নির্বিঘ্নে রেল পথে ঢাকা ছেড়েছেন বলে জানিয়েছেন যাত্রীরা। সারাদিনে ৪৩টির মধ্যে ৪টি আন্তঃনগর ট্রেন ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়।
বাংলাদেশ রেলওয়ের নেয়া কর্মপরিকল্পনায় বলা হয়েছে বিনা টিকিটের যাত্রী প্রতিরোধে ঢাকা, বিমানবন্দর, জয়দেবপুর, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, রাজশাহী, খুলনাসহ সকল বড় বড় স্টেশনে জিআরপি, আরএনবি, বিজিবি ও স্থানীয় পুলিশ এবং র্যাবের সহযোগিতায় সার্বক্ষণিক প্রহরার ব্যবস্থা।
নাশকতা প্রতিরোধে চলন্ত ট্রেনে, স্টেশনে বা রেললাইনে নাশকতামূলক কর্মকা- প্রতিরোধে আরএনবি, জিআরপি ও রেলওয়ে কর্মচারীদের কার্যক্রম আরও জোরদার। এছাড়া র্যাব, বিজিবি, স্থানীয় পুলিশ ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্রিয় সহযোগিতায় নাশকতাকারীদের কঠোরভাবে দমন করা হবে।
টিকিটধারী যাত্রীদের ভ্রমণের সুবিধার্থে ঈদের আগে ২৬ মার্চ থেকে জয়দেবপুর স্টেশন থেকে ঢাকামুখী এবং ঢাকা স্টেশন থেকে জয়দেবপুরমুখী আন্তঃজোনাল আন্তঃনগর ট্রেনে কোনো টিকিট ইস্যু করা হবে না। জয়দেবপুরের পাশাপাশি বিমানবন্দর স্টেশন থেকে ঢাকাগামী এবং ঢাকা স্টেশন হতে বিমানবন্দরগামী আন্তঃনগর ট্রেনে কোনো টিকিট ইস্যু করা হবে না। এছাড়া ঈদ উপলক্ষে ঈদের ১০ দিন আগে এবং ঈদের পরের ১০ দিন পর্যন্ত ট্রেনে সেলুনকার সংযোজন করা হবে না।
প্রথম দিন সকাল থেকেই রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতে দেখা যায় প্রতিদিনকার নিয়মিত চিত্র। যাত্রী অপেক্ষায় মহাখালী, গাবতলী বাস টার্মিনালের কাউন্টারগুলো। যে কয়জন যাত্রী আসছেন তাদের নিয়েই ছেড়ে যায় গাড়ি। ফাঁকা থাকছে বেশিরভাগ আসন। এরমধ্যে যারা যাচ্ছেন স্বাচ্ছন্দ্যে যাত্রা করতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। আর পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, লম্বা ছুটির কারণেই এবার যাত্রী খরা। তবে তাদের আশা দুই দিন পর থেকে কিছুটা বাড়তে পারে যাত্রীচাপ।
এদিকে ঈদুল ফিতর পরবর্তী ফিরতি ট্রেনযাত্রা যাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। আগামী ৩ এপ্রিলের আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি হয় গতকাল । এবারের প্লাটফর্ম এবং সার্বিক ব্যবস্থাপনায় খুশি যাত্রীরা। যদিও ঈদের বাড়তি ট্রেনের সংখ্যা নিয়ে শঙ্কায় আছেন অনেকেই। এদিন বেশিরভাগই পরিবারের সদস্যদের বাড়ি পাঠাচ্ছেন কর্মজীবীরা।