যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত পাল্টা শুল্ক ৩৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে আনতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ। তবে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো চুক্তি সই হয়নি, এবং এ বিষয়ে আরও দর-কষাকষির সুযোগ রয়েছে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

গতকাল বুধবার সরকারি ক্রয় ও অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান শুল্কহার স্বস্তিদায়ক কি-না এমন প্রশ্নে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আর একটু কমলে ভালো হতো। তবে যেটা হয়েছে মোটামুটি, কিন্তু একে স্বস্তির জায়গা বলবো না। এ পাল্টা শুল্ক না থাকলেই ভালো হতো। বিশ্ব এমনিতেই অনেক চ্যালেঞ্জে রয়েছে। তবে তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশ খুব খারাপ অবস্থানে নেই। আমাদের আরএমজি (তৈরি পোশাক খাত) ভালো করছে। টেক্সটাইল ও নিট পণ্য যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত এডজাস্ট করতে পারবে। ওয়েভিং খাতে কিছুটা সমস্যা হতে পারে।’

তিনি জানান, চুক্তি সই হওয়ার আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আবারও দর-কষাকষিতে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। ‘বাণিজ্য উপদেষ্টা বশির সাহেব এখনো আসেননি। আমি ইউএস চেম্বারের ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের বাংলাদেশের বিষয়ে মনোভাব খুবই ইতিবাচক। তারা বলেছে, তোমরা শেভরন ও মেটলাইফের টাকা ফেরত দিয়েছো, অর্থ আটকে রাখো না। ব্যবসায়ীদের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতি ভালো মনোভাব রয়েছে।’

চুক্তি নিয়ে তিনি বলেন, ‘চুক্তি এখনো সই হয়নি। একটি আনুষ্ঠানিক চুক্তি হবে। সেখানে আমরা দেখবোÍকোন কোন জায়গায় আমাদের শুল্ক কমাতে হবে, কী কী আমদানি করতে হবে।’

শুল্ক সংক্রান্ত চুক্তিতে ‘নন-ডিসক্লোজার’ বিষয়ক প্রশ্নে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘যখন ওয়ান-টু-ওয়ান নেগোশিয়েশন হয়, অনেক কিছু বলা যায় না। এটা মাল্টিলেটারাল নেগোশিয়েশন নয়, যেমন, ডব্লিউটিও বা ইউএন, যেখানে সবাই জানে। এখানে ভিয়েতনাম, চীন, ভারত, পাকিস্তান, কোরিয়াসহ অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী আছে। কিছু জিনিস প্রকাশ করা যায় না।’

দেশের অর্থনীতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘খাদের কিনারা থেকে আমরা অনেকটাই উঠে এসেছি। এটা বুঝতে দৃষ্টি ও অন্তর্দৃষ্টি দরকার। সব কিছু ভাসাভাসা দেখে বিচার করলে হবে না। অর্থনীতি এক সময় প্রকুরিয়াস (ঝুঁকিপূর্ণ) অবস্থায় ছিল, এখন কিছুটা স্বস্তির জায়গায় এসেছি। তবে সামনে এখনো চ্যালেঞ্জ আছেÍমূল্যস্ফীতি, কর্মসংস্থান, জ্বালানি ও ট্যারিফ। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ব্যবসায়ীদের আস্থা ফিরিয়ে আনা ও বাণিজ্যে গতি আনা।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এমন প্রকল্পে মনোনিবেশ করছি, যেগুলো দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য এবং ব্যবসা-বাণিজ্যকে সহজ ও গতিশীল করতে সাহায্য করবে।’

মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি সম্পর্কে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘স্বস্তির দিকে যাচ্ছে, তবে সময় লাগবে। এটা এমন নয় যে ঘোড়ার রাশ ধরে টেনে ধরলেই থেমে যাবে। মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে কমছে। তবে নন-ফুড আইটেমগুলো আমাদের জন্য এখনো চ্যালেঞ্জিং।’

নির্বাচন ও বাজেট ঘাটতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের জন্য যে অর্থ প্রয়োজন, আমরা দেবোÍসেটা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। প্রভিশনাল হিসাব অনুযায়ী বাজেট ঘাটতি ৩.৬ শতাংশ, যেটা ৪.৫ শতাংশের মধ্যেই থাকবে।’

সংস্কার নিয়ে তিনি বলেন, ‘ইমিডিয়েট কিছু বিষয় বাস্তবায়ন করেছি। কিছু মিডটার্ম ও লংটার্ম কাজ রয়েছে। যেমন, ব্যাংক রেজুলেশন এটা সময়সাপেক্ষ। বাংলাদেশ ব্যাংক একটি রোডম্যাপ করছে। ক্যাপিটাল মার্কেট উন্নয়নে চেষ্টা চলছে। এনবিআরের বিষয়ে দ্রুত অধ্যাদেশ কিছুটা সংশোধন করবো। ডিসেম্বরের মধ্যে কিছু একটা করে ফেলার লক্ষ্য আছে।