আজ মঙ্গলবার, ১লা জুলাই। বছর ঘুরে আবার আমাদের মাঝে এলো ইতিহাসের বাঁক ঘুরিয়ে দেওয়া জুলাই মাস। আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া চূড়ান্ত আন্দোলনে দিশা হারিয়ে পলায়ন করে বিদায় হয় জাতির ঘাড়ে ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে চেপে থাকা স্বৈরাচার। মুক্তির স্বাদ পায় জাতি। স্বাধীনভাবে নিঃশ^াস নেওয়ার সুযোগ নিয়ে আসে দ্বিতীয় স্বাধীনতা। তাই জাতির কাছে জুলাই মুক্তির আন্দোলনের মাস। স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনের মাস। ভারতীয় আধিপত্যবাদ থেকে মুক্তির আন্দোলনের মাস। এই মাসের আন্দোলনের কারণেই দীর্ঘ ১৬ বছরের স্বৈরশাসক হাসিনার রাজত্বের মসনদ নড়বড়ে হয়ে যায়। আর আগস্টের মাত্র ৫ দিনের ধাক্কায় জীবন রক্ষার্থে স্বৈরাচার পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় পাশের দেশে। বড়ই আশ্চর্য্যরে বিষয় হলো- হাসিনার কাঁধে ভর করে পাশের দেশ ভারত বাংলাদেশে আধিপত্যবাদ এমনভাবে বিস্তার করে যে, এই দেশের মানুষকে গোলামীর জিঞ্জির পরিয়ে রাখতে চায় আজীবন। স্বাধীন একটি দেশকে ভারত তার করদ রাজ্যে পরিণত করার রূপরেখা বাস্তবায়নে ব্যস্ত হয়ে পরে স্বৈরাচার হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার আশ^াসে।

নরেন্দ্র দামোদর দাস মোদীর সরকার চেয়েছিল স্বৈরাচার হাসিনার কোলে ভর করে বাংলাদেশের বুকের ওপর দিয়ে বিনা শুল্কে ট্রাক চালিয়ে দিয়ে তার দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পণ্য পরিবহন করতে। করিডোরের নামে বাংলাদেশে এক ধরণের দখলীয় কৌশল ব্যবহার করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে চায় প্রতিবেশী দেশটি। হাসিনার মাধ্যমে ভারত নিশ্চিত করতে চেয়েছিল বাংলাদেশ স্বাধীন থাকবে কেবল নামেই। প্রকৃত অর্থে বাংলাদেশ পরিণত হবে করদ রাজ্যে। পাকিস্তান থেকে স্বাধীন হওয়া দেশটিকে তাদের তামাশার পাত্র বানানোর নীলনকশা সাজানো হচ্ছিল হাসিনাকে ক্ষমতায় রেখেই। হাসিনার মাধ্যমে বোকা বানিয়ে রাখতে চেয়েছিল এদেশের আঠারকোটি মানুষকে। মনে করেছিল, খুন-গুম করে আর আয়নাঘর নামের বন্দিশালায় আটকে রেখে গোলামির জিঞ্জির পরিয়ে দাবিয়ে রাখবে সবাইকে। কিন্তু নাহ: এতো কিছু করেও আটকে রাখা যায়নি বাংলার দামাল সন্তানদের।

যখন জাতি জানতে পারলো, হাসিনার স্বৈরাচারি শাসনের মাধ্যমে প্রকারান্তরে পুরো একটা জাতিকে দাবিয়ে রাখতে চায়; আধিপত্যবাদীরা সুজলা-সুফলা বাংলাকে করদ রাজ্যে পরিণত করতে চায়,তখন ১৮ কোটি মানুষ মুক্তির প্রহর গুনতে থাকে। অপেক্ষা করতে থাকে কোনো একটা উসিলার। অবশেষে জাতির সামনে আসে একটি প্লাটফর্ম। নাম বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন। আজকের এই দিনে আনুষ্ঠানিকভাবে জন্ম হয় এই সংগঠনের।

এই আন্দোলনটি মূলত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে শুরু হলেও, পরবর্তীতে এটি একটি বৃহত্তর আন্দোলনে রূপ নেয় যেখানে কর্তৃত্ববাদ, ফ্যাসিবাদ এবং স্বৈরাচারিতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অন্তর্ভুক্ত ছিল। গুম-খুন নির্যাতন উপেক্ষা করে এদেশের তারুণ্য রাস্তায় নামে। আন্দোলনে হাজার হাজার হতাহতের মাধ্যমে রক্তাক্ত জুলাই আমাদের সামনে নিয়ে আসে নতুন স্বাধীনতা। দেশের মানুষ দেখে নতুন স্বপ্ন। আজ যে জাতি মনে বীজ বুনছে নতুন বাংলাদেশের। জাতি চায় একটি বৈষম্যহীন এক মানবিক বাংলাদেশ।

দ্বিতীয় স্বাধীনতার আন্দোলনের মাস জুলাই-আগস্টকে স্মরণীয় করে রাখতে সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলো বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

কর্মসূচি

সরকারের পক্ষ থেকে এদিন মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা ও গির্জাসহ অন্যান্য উপাসনালয়ে শহীদদের স্মরণে এদিন দোয়া ও প্রার্থনা। জুলাই ক্যালেন্ডার দেওয়া হবে। জুলাই হত্যাযজ্ঞের খুনিদের বিচারের দাবিতে গণস্বাক্ষর কর্মসূচির শুরু হবে; যা চলবে ১ আগস্ট পর্যন্ত। জুলাই শহীদ স্মরণে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাবৃত্তি চালু হবে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকেও করা হয় কর্মসূচি। এদিন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির পক্ষ থেকে ১লা জুলাই রাজধানীর বাংলাদেশ-চীনমৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে গণঅভ্যূত্থান ২০২৪ : জাতীয় ঐক্য ও গণতান্ত্রিক অভিযাত্রা শীর্ষক আলোচনা সভা ও শহীদ পরিবারের সম্মানে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর দেশব্যাপী শাখায় শাখায় দোয়ার অনুষ্ঠান হবে। ১ জুলাই থেকে ৩০ জুলাই পর্যন্ত সারা দেশে ‘দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রা’ কর্মসূচি পালন করবে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।