ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদির গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারসহ তিন দফা দাবি নিয়ে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি আবু সাদিক কায়েমসহ কয়েকজন নেতা। গতকাল সোমবার দুপুর ১টার দিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার কার্যালয় ঘেরাওয়ের জন্য পদযাত্রা নিয়ে সচিবালয় অভিমুখে যাত্রা শুরু করেন ডাকসুর নেতারা। দোয়েল চত্বরে তাদের পদযাত্রাটি পুলিশের বাধার মুখে পড়লে সেখান থেকে আলোচনার জন্য সাদিকসহ ডাকসুর কয়েকজন প্রতিনিধি সচিবালয়ের ভেতরে যান। আর বাকিরা শিক্ষা ভবন মোড়ে অবস্থান নেন।

তিনটি দাবি হল- হাদিকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার, দেশব্যাপী অভিযান চালিয়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার, নিষিদ্ধলীগের সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার।

শিক্ষার্থী-জনতাকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসু ভবনের সামনে থেকে এ পদযাত্রা শুরু করেন তারা। সেটি টিএসসি হয়ে, দোয়েল চত্বর এসে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। তখন ছাত্রজনতা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে সামনে এগিয়ে যান। এরপর কয়েকজন প্রতিনিধি সচিবালয়ে যান। আর শিক্ষা ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে ডাকসু নেতাদের জাহাঙ্গীরের দুই গালে, পেঁয়াজ মারো তালে তালে, সুশীলতার দিন শেষ, জবাব চায় বাংলাদেশ, এক হাদি হাসপাতালে, লক্ষ হাদি রাজপথে, আমরা সবাই হাদি হব, হাদির মুখে কথা কব’সহ নানা স্লোগান দিতে দেখা যায়। এর আগে রোববার রাতে ডাকসুর ভিপি আবু সাদিক কায়েম তিন দাবি জানিয়ে স্বরাষ্ট উপদেষ্টার কার্যালয় ঘেরাও করার ঘোষণা দেন।

তিন উপদেষ্টার পদত্যাগ চাইলেন ডাকসু ভিপি

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ চাইলেন ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম। পাশাপাশি আইন উপদেষ্টা এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে হবে বলে দাবি করেন তিনি। গতকাল বিকাল ৩টার দিকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে এসব কথা বলেন সাদিক কায়েম।

ডাকসু ভিপি ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে প্রথম ও অপরিহার্য পদক্ষেপ হিসেবে খুনি হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে প্রদত্ত রায় কার্যকর করার দাবি জানান। ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনর্বিবেচনার দাবির পাশাপাশি তিনি বৈঠকে আরও কয়েকটি দাবি উত্থাপন করেন। এ সময় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সাদিক কায়েম বলেন, আমাদের ভাই শরীফ ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের সঙ্গে জড়িত প্রত্যক্ষ হামলাকারী, পরিকল্পনাকারী ও সহায়তাকারীÑসব সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করতে হবে। গোয়েন্দা সংস্থাসহ রাষ্ট্রের সব সংশ্লিষ্ট অর্গানকে দ্রুত জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। যাদের গাফিলতি প্রমাণিত হবে, তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। তিনি আরও বলেন, যারা এই হামলাকে সমর্থন জুগিয়েছে, হাদি ভাই ও জুলাই বিপ্লবীদের হত্যাযোগ্য করে তুলেছেÑ সেই কালচারাল ফ্যাসিস্টদের সামাজিকভাবে সম্পূর্ণ বয়কট করতে হবে। এসব পদক্ষেপ অনতিবিলম্বে দৃশ্যমান করতে হবে।

ডাকসু ভিপি আরও দাবি করেন, আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নিষিদ্ধ লীগের বিরুদ্ধে এলাকাভিত্তিক চিরুনি অভিযান শুরু করতে হবে। নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠনের সব স্তরের সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার এবং সব ধরনের অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। তিনি বলেন, এই বিষয়ে সরকারের অবহেলা আমরা আর সহ্য করবো না। তিনি সতর্ক করে বলেন, এসব দাবি অনতিবিলম্বে বাস্তবায়ন না হলে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে দৃশ্যমান পরিবর্তন না এলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টাকে পদত্যাগ করতে হবে।

পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘ছোট ভাই সাদিক কায়েমদের দাবিগুলো সম্পূর্ণ যৌক্তিক। আমরা এসব দাবি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবো।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবিতে শাহবাগ অবরোধ

এদিকে, হাদির গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে শাহবাগ মোড় অবরোধ করে এনসিপির ছাত্র সংগঠন জাতীয় ছাত্রশক্তি। গতকাল সোমবার বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। তাতে শাহবাগ ও আশাপাশের এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। অবরোধে অ্যাকশন অ্যাকশন, ডাইরেক্ট অ্যাকশন, হাদির ওপর গুলি কেন, প্রশাসন জবাব চাই, এক-দুই-তিন-চার, জাহাঙ্গীর তুই গদি ছাড়’সহ নানা স্লোগান দেন ছাত্রশক্তির নেতাকর্মীরা।

সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আবু বাকের মজুমদার বলেন, আমরা আজকে শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছি। আমাদের আন্দোলন জনদুর্ভোগ তৈরি করার জন্য নয়। আমাদের কর্মসূচি জনমত ও ন্যায়ের কর্মসূচি। আমরা আশা করি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে যাতে জনদুর্ভোগ কম হয়।

শাহবাগ থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান বলেন, শাহবাগ মোড় আটকে দিয়ে তারা স্লোগান দেন। পুলিশ তাদেরকে বুঝিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে।