ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজার মানুষের ওপর নৃশংসতম গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। এছাড়া বিমান হামলায় গাজা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। তাই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষ এই গণহত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছেন। ইসরাইলের এই গণহত্যার প্রতিবাদে সরব হয়ে ওঠেছে বাংলাদেশও। ফিলিস্তিনের গাজায় ‘চলমান গণহত্যা ও জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে’ প্রতিবাদে গত শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। ‘প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ’ ব্যানারে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে বাংলাদেশ ও ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে অংশ নেন লাখো মানুষ। এতে সাধারণ মানুষের ঢল নেমেছিল রাজধানী ঢাকায়।

সরেজমিনে দেখা গেছে, যেদিকে চোখ যায়, কেবল মানুষ আর মানুষ। গত পাঁচ আগস্টের পর জনতার এমন স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ, বিশাল জমায়েত আর দেখা যায়নি। হাতে হাতে ফিলিস্তিনের পতাকা, বুকে প্রতিশোধের আগুন, মুখে স্লোগান নিয়ে দৃপ্তপদভারে এগিয়ে চলেছে জনস্রোত। ‘ফিলিস্তিন জিন্দাবাদ’, ‘ইসরাইল নিপাত যাক’- হাজার হাজার মানুষের স্রোত গিয়ে মিশে ছিল উদ্যানে। ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচির গণজমায়েতে কর্মসূচি থেকে ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে ইসরাইলের গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে নিশ্চিত করা, গণহত্যা বন্ধে কার্যকর সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করার দাবি জানানো হয়। এছাড়াও ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও শান্তি কামনায় কর্মসূচিতে বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। মোনাজাতে ইসরাইলের ধ্বংস কামনা করা হয়।

মার্কিন বার্তাসংস্থা এপি : এদিকে বাংলাদেশীদের এই বিক্ষোভের খবর প্রকাশ করেছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও বার্তাসংস্থা। মার্কিন বার্তাসংস্থা ‘এপি’ও এই সংবাদ প্রকাশ করেছে। তাদের বরাতে খবরটি প্রকাশ করেছে ইসরাইলের প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম ‘টাইমস অব ইসরাইল’। বার্তাসংস্থা এপির প্রতিবেদনে ‘বাংলাদেশের রাজধানীতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে লাখো মানুষের বিক্ষোভ’ শীর্ষক শিরোনাম করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, শনিবার গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানাতে বাংলাদেশের রাজধানীতে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী সমাবেশ করেছেন।

ওয়াশিংটন পোস্ট : ওয়াশিংটন পোস্টের শিরোনামে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের রাজধানীতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রায় এক লাখ মানুষের সমাবেশ। বাংলাদেশের রাজধানীতে লাখো মানুষ ইসরাইলবিরোধী সমাবেশে অংশ নিয়েছে এবং গাজায় ইসরাইলী সামরিক আগ্রাসনের প্রতিবাদ জানিয়েছে।

ফার্স্টপোস্ট : সংবাদমাধ্যম ফার্স্টপোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আন্তর্জাতিক সংঘাতের কারণে সৃষ্ট জাতীয় সংকট: গাজায় ইসরাইলী হামলার বিরুদ্ধে বাংলাদেশে হাজারো মানুষের সমাবেশ।’ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই গাজায় ইসরাইলী হামলার নিন্দা জানিয়ে ঢাকায় বিক্ষোভ করেছেন হাজারো মানুষ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হন লাখো মানুষ। ফিলিস্তিনের পতাকা উড়িয়ে ‘ফ্রি, ফ্রি প্যালেস্টাইন’ স্লোগান দিতে থাকেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ইসরাইলের সহায়তাকারী হিসেবে অভিযুক্ত করে প্রতিবাদ জানান তারা।

টরন্টো স্টার: টরন্টো স্টার নামের একটি গণমাধ্যমে ‘বাংলাদেশের রাজধানীতে ইসরাইলের বিরুদ্ধে প্রায় এক লাখ মানুষের বিক্ষোভ সমাবেশ’ শীর্ষক শিরোনাম করা হয়েছে।

আরব নিউজ: আরব নিউজের খবরে দাবি করা হয়েছে, ঢাকার সমাবেশে অংশ নিয়েছিলেন ১০ লাখের বেশি মানুষ। এটাকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে ফিলিস্তিনের পক্ষে সবচেয়ে বড় সংহতি সমাবেশ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট: ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট বলেছে, সমাবেশে প্রায় এক লাখ মানুষ অংশ নিয়েছেন। এতে বিএনপিসহ ইসলামপন্থি দলগুলোর সমর্থনের কথা উঠে এসেছে প্রতিবেদনে।

আল-জাজিরা: কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল-জাজিরায় ঢাকার ‘মার্চ ফর গাজা’র কয়েকটি ছবি শেয়ার করা হয়েছে। ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ফিলিস্তিনপন্থি লাখো জনতা বাংলাদেশে বিক্ষোভে অংশ নিয়েছেন।

এছাড়াও টাইমস অফ ইন্ডিয়া, এমএসএন, স্টার ট্রিবিউন, সিটিভিসহ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে ঢাকায় বিক্ষোভের খবর প্রকাশ করা হয়েছে। গাজায় প্রায় দেড় বছর ধরে চলমান ইসরাইলী বর্বরতার প্রতিবাদে বিশ্বের দেশে দেশে বিক্ষোভ-প্রতিবাদ অব্যাহত রয়েছে। ইসরাইলী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক জনমত গঠন এবং মানবিক সহানুভূতি জাগ্রত করতেই বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হলো ব্যতিক্রমধর্মী এই গণজমায়েত।