ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িকভাবে কারাগার ঘোষণা করা হয়েছে। গত রোববার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে এ কথা জানানো হয়। প্রজ্ঞাপনে ঢাকা সেনানিবাসের বাশার রোডসংলগ্ন উত্তর দিকে অবস্থিত ‘এম ই এস বিল্ডিং নম্বর-৫৪’কে সাময়িকভাবে কারাগার হিসেবে ঘোষণা করা হয়। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনক্রমে এই আদেশ জারি করা হলো। আদেশটি অবিলম্বে কার্যকর হবে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, বাংলাদেশ ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ এর ধারা ৫৪১(১) এর ক্ষমতাবলে এবং The Prisons Act, 1894 (IX of 1894) এর ধারা ৩ (বি) অনুসারে, ঢাকা সেনানিবাসের বাশার রোড সংলগ্ন উত্তর দিকে অবস্থিত ‘এমইএস’ বিল্ডিং নং-৫৪-কে সাময়িকভাবে কারাগার হিসেবে ঘোষণা করা হলো। তবে কোন উদ্দেশ্যে ভবনটি সাময়িক কারাগার হিসেবে ব্যবহৃত হবে, সে বিষয়ে প্রজ্ঞাপনে বিস্তারিত উল্লেখ করা হয়নি।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলের গুম-নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের দুটি মামলায় এবং জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা একটি মামলায় মোট ২৫ জন সাবেক ও বর্তমান সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ৮ অক্টোবর গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। সেদিনই এই তিন মামলায় ট্রাইব্যুনালে ফরমাল চার্জ বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করেছিল প্রসিকিউশন। এরপর গত শনিবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করে জানানো হয়, ১৫ জন কর্মকর্তাকে সেনা হেফাজতে নেয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৪ জন বর্তমান সেনা কর্মকর্তা। আর একজন কর্মকর্তা অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে (এলপিআর) আছেন।
ট্রাইব্যুালে চার্জ গঠনের পর একটি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা তিন মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর যে ১৫ কর্মকর্তাকে হেফাজতে নেয়া হয়েছে, তাদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত সেনাবাহিনী নিজেদের হেফাজতে রাখতে চায়। এই বিষয়ে সেনা কর্তৃপক্ষের একটা ভাবনা হলো, বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসামী হওয়া এসব কর্মকর্তা সেনা হেফাজতে থাকবেন। মামলার নির্দিষ্ট তারিখে সেনাবাহিনী তাদের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করবে, আদালতের কার্যক্রম শেষে আবার হেফাজতে নিয়ে যাবে। এমন আলোচনার মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে ঢাকা সেনানিবাসের একটি ভবনকে সাময়িকভাবে কারাগার হিসেবে ঘোষণা করল। তবে এই কারাগারে কাদের রাখা হবে, তা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়নি।
আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সরকার যদি কোনো বাড়িকে সাবজেল বা উপকারাগার ঘোষণা করে, সেখানে মামলার আসামী রাখতে পারেন। এমন নজির এর আগেও রয়েছে। ২০০৭-০৮ সালে এক-এগারোর সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে গ্রেফতারের পর সংসদ ভবন এলাকায় দুটি বাড়িকে সাবজেল ঘোষণা করে সেখানে তাদের রাখা হয়েছিল।