বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিচার শুরু হয়েছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ৭৮ বছর বয়সী এই নেত্রীর মৃত্যুদ- হতে পারে বলে জানিয়েছেন প্রসিকিউটররা। বৃটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে এই মামলা চলছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, গত বছরের জুলাই-আগস্ট আন্দোলন চলাকালীন সময় শেখ হাসিনা রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে প্রতিবাদকারীদের বিরুদ্ধে ‘প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার’ করার নির্দেশ দেন, যার ফলে প্রায় ১,৪০০ জন নিহত হন। প্রসিকিউশন পক্ষ বলছে, অপরাধ প্রমাণিত হলে তার মৃত্যুদ- কার্যকর করা উচিত।

অভিযোগে আরও বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা মৃতদেহ পোড়ানোর এবং আহতদের চিকিৎসা না দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছিলেন। তবে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। জাতিসংঘ মানবাধিকার দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, গত বছর সরকারের বিরুদ্ধে ছড়িয়ে পড়া আন্দোলন দমনে এই সহিংসতায় প্রায় ১,৪০০ জন প্রাণ হারান।

আন্দোলনের পটভূমি

২০২৪ সালের জুলাই মাসে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তানদের জন্য সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। দ্রুত তা শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে রূপ নেয় এবং দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। ৫ আগস্ট, বিক্ষোভকারীরা রাজধানী ঢাকায় শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবনে প্রবেশের আগে তিনি হেলিকপ্টারে পালিয়ে যান। ওই দিনই নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত ৫২ জন নিহত হন, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম রক্তক্ষয়ী ঘটনা হিসেবে বিবেচিত।

অভিযোগ ও প্রমাণ

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ময়নুল করিম বলেন, আমরা ফোন রেকর্ড, অডিও-ভিডিও প্রমাণ এবং সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছি, যা প্রমাণ করে হত্যাকা- তার প্রত্যক্ষ নির্দেশেই সংঘটিত হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘কমান্ড রেসপনসিবিলিটির ভিত্তিতে শেখ হাসিনার মৃত্যুদ-ই প্রাপ্য। অন্যদিকে প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আদালতে বলেন, শেখ হাসিনার ১,৪০০ বার মৃত্যুদ- হওয়া উচিত; কিন্তু যেহেতু তা বাস্তবসম্মত নয়, তাই আমরা অন্তত একটি মৃত্যুদ-ের দাবি করছি। তিনি আরও যোগ করেন, ক্ষমতা আঁকড়ে ধরার আকাক্সক্ষায় শেখ হাসিনা নির্মম অপরাধে লিপ্ত হয়েছেন এবং তার কর্মের জন্য কোনো অনুশোচনাও নেই।

সহ-অভিযুক্ত ও পরবর্তী ধাপ

আদালত শেখ হাসিনা এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। দু’জনই বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি গত জুলাইয়ে আদালতে স্বীকারোক্তি দেন যে, শেখ হাসিনার নির্দেশে হেলিকপ্টার, ড্রোন ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে আন্দোলন দমন করা হয়েছিল।

সম্ভাব্য রায়

আজ রোববার থেকে শেখ হাসিনার আইনজীবী দল তাদের যুক্তি উপস্থাপন শুরু করবে এবং আগামী সপ্তাহে তা শেষ করার সম্ভাবনা রয়েছে। চূড়ান্ত রায় নভেম্বরের মাঝামাঝি ঘোষণা হতে পারে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে শেখ হাসিনার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে তা আন্দোলনের ভুক্তভেীীাগীদের মধ্যে বিতরণের প্রস্তাবও রয়েছে। অন্যদিকে শেখ হাসিনা দাবি করেছেন, নিরাপত্তা বাহিনী আত্মরক্ষার্থে গুলী চালাতে বাধ্য হয়েছিল। তবে তিনি ইতোমধ্যে আদালত অবমাননার দায়ে ছয় মাসের কারাদ-ে দ-িত হয়েছেন এবং দুর্নীতির মামলাতেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে।

টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ

শেখ হাসিনার ভাগ্নি ও ব্রিটিশ লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিককেও অনুপস্থিত অবস্থায় বিচার করা হচ্ছে। অভিযোগে বলা হয়েছে, তিনি তার খালাকে প্রভাবিত করে পরিবারের জন্য জমির প্লট বরাদ্দ নিয়েছিলেন। টিউলিপ সিদ্দিক এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

বাংলাদেশে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। সেখানে শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগকে সব কার্যক্রম থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে, ফলে তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি এখন নির্বাচনের প্রধান ফেভারিট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।