ঈদের মৌসুমে রাজধানীর বিভিন্ন আন্তজেলা বাস টার্মিনালে যাত্রীদের ভিড় থাকে চোখে পড়ার মতো। তবে এবারের চিত্র একেবারেই ব্যতিক্রম। গাবতলী ও মহাখালী বাস টার্মিনালে এখনো যাত্রীদের ভিড় দেখা যাচ্ছে না। এদিকে যাত্রী কম হলেও পরিবহনমালিকদের ভাড়া-বাণিজ্য তুঙ্গে। এসি বাসগুলোতে আদায় করা হচ্ছে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে ২০০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি।

মহাখালী বাস টার্মিনালে সরেজমিনে দেখা যায়, বেশির ভাগ এসি বাস কোম্পানির কাউন্টারে যাত্রী কম। তবু ভাড়া বাড়ানো হয়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। সিলেটগামী এসি বাসের টিকিটের দাম রাখা হচ্ছে ১২০০ টাকা, যেখানে নিয়মিত ভাড়া ৯০০ টাকা। রংপুরগামী এসি বাসের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে বাসভেদে ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকা, যেখানে আগে ছিল ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা। একই অবস্থা রাজশাহীগামী এসি বাসের ভাড়াও।

তবে বাসের টিকিট বিক্রির ওয়েবসাইটগুলোতে দেখা যায়, বিভিন্ন বাস কোম্পানি এবং বাসভেদে ২০০০ হাজার থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত এসি বাসের ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। তবে আগে এসব বাসের ভাড়া নেওয়া হতো ১৬০০ থেকে ১৮০০ টাকা।

ভুক্তভোগী যাত্রী মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘এখন ভিড় নেই, তবু ৩০০ টাকা বেশি ভাড়া নিচ্ছে। প্রশ্ন করলেই বলে গাড়ি চলে না, তেলের দাম বেশি, ঈদের বাজার, ফিরতি যাত্রী নেই, লোকসান হচ্ছে এসব অজুহাত দেয়। আমাদেরও যেহেতু প্রয়োজন, তাই যেতে হবে। কিছুই করার নেই।’

আরেক যাত্রী রিনা আক্তার বলেন, ‘ঢাকা থেকে ভেড়ামারা যাব। অনেক কষ্টে ৪ তারিখের একটা এসি বাসের টিকিট ম্যানেজ করেছি। ভাড়া নিয়েছে ১৮০০ টাকা। যদিও আগে এই রুটে ভালো মানের এসি বাসের ভাড়া নিত ১৪০০ টাকা। এখন ঈদের সময় অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু এখন তো সব স্বাভাবিক, তবু কেন এই জুলুম?’এ বিষয়ে একতা পরিবহন কোম্পানির টিকিট মাস্টার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ঈদের সময় যাত্রী কম, গাড়িগুলো প্রায় ফাঁকা যাচ্ছে। খরচ মেটাতে সামান্য ভাড়া বাড়াতে হচ্ছে।’

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার শীতাংশু শেখর বিশ্বাস বলেন, ‘আমরা নির্ধারিত ভাড়ার বাইরে অতিরিক্ত আদায়ের বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছি। যেকোনো যাত্রী যদি অভিযোগ করে, তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ভাড়া কম বেশি হওয়ার নিয়ম নেই। নির্ধারিত চার্ট অনুসরণ করতেই হবে। যাত্রী সংকট বা ছুটির অজুহাতে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া যাবে না। তবে বিআরটিএ এসি বাসের ভাড়া নির্ধারণ করে না। মালিকেরা নিজেদের মতো করে চালান।’

এদিকে বাসের ভাড়ার বিষয়ে শ্যামলী এন আর ট্রাভেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শুভঙ্কর ঘোষ রাকেশ বলেন, ‘এসি বাসের পেছনে আমাদের অনেক বাড়তি খরচ হয়। সরকারকে এ ধরনের গাড়ির জন্য ভ্যাটও দিতে হয়। এসি বাস তুলনামূলক বিলাসবহুল সেবা, তাই এর ভাড়াও সেই মানদন্ডেই নির্ধারিত হয়। এসব গাড়িতে যাঁদের সামর্থ্য আছে, তাঁরাই সাধারণত ভ্রমণ করেন। যাঁদের সামর্থ্য নেই, তাঁদের জন্য সাধারণ নন-এসি পরিবহন তো রয়েছে। আমরা লোকসান দিয়ে গাড়ি চালাতে পারি না। বিশেষ করে ঈদের সময় একদিকে যাওয়ার সময় যাত্রী থাকলেও ফেরার পথে গাড়িগুলো প্রায় খালি থাকে। এই পরিস্থিতি বিবেচনায় ভাড়া সামান্য বাড়ানো হয়, যেন নুন্যতম ব্যয়টা অন্তত উঠে আসে।’

এদিকে ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিনেও রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে গতকাল নির্ধারিত সময়েই ট্রেনগুলো ছেড়ে গেছে। সময়মতো ট্রেন ছাড়ায় যাত্রীরা স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। যাত্রীদের ভিড় নেই। স্টেশনে ছিল শৃঙ্খলা ও ব্যবস্থাপনার প্রশংসনীয় সমন্বয়।

ফলে অনেকে বলছেন, এবারের ঈদযাত্রা তুলনামূলক স্বাচ্ছন্দ্যের। একই সঙ্গে টিকিট ছাড়া স্টেশনে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না যাত্রীদের।ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও কোরবানির পশুর হাটে চাঁদাবাজি প্রতিরোধে অভিযান পরিচালনা করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এসব অভিযানে মোট ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রোববার সেনাবাহিনীর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে জানানো হয়, দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে জননিরাপত্তা নিশ্চিত ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সেনাবাহিনী নিরপেক্ষ ও পেশাদারভাবে দায়িত্ব পালন করছে।

তথ্যমতে, গত ৩০ মে রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাজধানীর উত্তরা ১০ নম্বর সেক্টরসংলগ্ন কামারপাড়া এলাকায় নিয়মিত টহলের সময় অবৈধ হাট বসানো, জোর করে নির্দিষ্ট হাটে গরু বিক্রিতে বাধ্য করা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়।

পরদিন ৩১ মে বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত আবদুল্লাহপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগে আরও চারজনকে আটক করা হয়। গ্রেফতার ব্যক্তিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সেনাবাহিনী জানিয়েছে, জননিরাপত্তা নিশ্চিত ও অপরাধ দমনে এ ধরনের অভিযান ভবিষ্যতেও চলবে।