অন্তর্বর্তী সরকার বিএনপিকে সংস্কারের কলা দেখাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সালাহ উদ্দিন আহমদ। গতকাল শনিবার দুপুরে আগামী ২ জুন কমিশনের বৈঠকের আমন্ত্রণের তথ্য দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এই অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, আমরা বলেছি, সংস্কার নিয়ে যেগুলো আলোচনা হয়েছে সেগুলো কম্পাইল করে জাতির কাছে প্রকাশ করেন। আগামী ২ তারিখ (২ জুন) আবার ডেকেছেন আমাদের প্রধান উপদেষ্টা। ভাবটা আমরা বুঝছি এরকম, আনুষ্ঠানিকতা-আয়োজনের কোনো কমতি নেই্। কিন্তু কাজের কোনো খবর নেই। আবার ডেকেছেন ২ তারিখে তৃতীয় পর্বের আলোচনার আবার শুভ উদ্বোধন হবে। কেনো? উদ্বোধন ক‘বার করতে হয়। তিনি বলেন, এই সংস্কার নিয়ে আর কতবার উদ্বোধন করবেন? প্রথম পর্যায়ে একবার উদ্বোধন করেছেন আলোচনার, দ্বিতীয় পর্যায়ের আবার উদ্বোধন করলেন, তৃতীয় পর্যায়ে গিয়ে আবার আপনারা এটা একত্রিত করলেন। এভাবে আাপনারা আমাদেরকে সংস্কারের কলা দেখাচ্ছেন।
রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের মুক্তিযোদ্ধা হলে জাতীয়তাবাদী কৃষক দলের উদ্যোগে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ৪৪তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ‘বাংলাদেশে কৃষি বিপ্লবে জিয়াউর রহমানের অবদান’ শীর্ষক আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
সালাহ উদ্দিন বলেন, সংস্কার হবে, সংস্কার আমাদের প্রধানত এজেন্ডা। তার চাইতেও বেশি বিচার ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে যারা মানবতা বিরোধী অপরাধে জড়িত ছিলো সবাইকে কাঠগড়ায় নিয়ে আসতে হবে, এটা আমাদের সর্বোচ্চ এজেন্ডা। কিন্তু নির্বাচন বাংলাদেশের মানুষকে এই ডিসেম্বরের মধ্যে দেবেন বলে আপনি (প্রধান উপদেষ্টা) আশ্বস্ত করেছিলেন। পরবর্তিতে আপনি সরে গেলেন. সেই কাজটি ঠিক করেননি।
সালাহ উদ্দিন বলেন, একটি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা, ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা, বৈষ্যমহীন একটি সমাজ প্রতিষ্ঠা, একটি শক্তিশালী সাংবিধানিক রাষ্ট্র পাওয়া, আমাদের সমস্ত গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাওয়ার জন্যই তো আমরা রক্ত দিয়েছি, সংগ্রাম করেছি। অবিরাম আমরা নির্যাতিত হয়েছি, কারাবাসে গিয়েছি, আয়না ঘরে গিয়েছি কিসের জন্য? এই অধিকার আদায়ের জন্যই তো। আর সেই অধিকার আদায়ের কথা বললেই যদি আপনারা নারাজ হন প্রধান উপদেষ্টা সেটা খুব দুঃখনজনক। সংস্কারের কথা বলে আর কত বিলম্ব করবেন।
ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন কোন যুক্তিতে প্রশ্ন রেখে সালাহ উদ্দিন বলেন, নির্বাচন বিলম্বিত হওয়া একটিও কারণ নাই, আপনার সামনে যুক্তি নাই, কেনো আপনি ডিসেম্বরের বাইরে যেয়ে নির্বাচন দেবেন, সেটার পক্ষে একটিও যুক্ত নাই। কিন্তু শুধু বলেন, ডিসেম্বর থেকে জুন, ডিসেম্বর থেকে জুন যেন আছর করেছেন, ‘ডিসেম্বর থেকে জুন’ এটা বলতে থাকতে হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দিতে হবে দেশের মানুষের দাবি। একটি কারণও নাই ডিসেম্বরের বাইরে নির্বাচন যাওয়ার। সাংবাদিকদের কাছে আমার অনুরোধ আপনারা জাতির সামনে উন্মুক্ত করবেন যে, যদি ডিসেম্বরের পরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্যে একটি যুক্তিও তাদের কাছে থাকে, সেটা যেন তারা (সরকার) প্রকাশ করে।
তিনি বলেন. আমরা বলতে চাই, সংস্কার এবং নির্বাচন চলমান প্রক্রিয়া।সংস্কার এটা কখনও শেষ হয় না, এটা পৃথিবী যতদিন থাকবে, দেশ যত দিন থাকবে, মানব যতদিন থাকবে ততদিন তাদের চাহিদা অনুসারে, দেশের চাহিদা অনুসারে সংস্কার হতেই থাকবে। এটা চলমান প্রক্রিয়া, আর উনার ভাষ্য, সংস্কার সমাপ্ত করেই নির্বাচন হতে হবে, কেনো?
গণতন্ত্রীদের বিরুদ্ধে একটি কুচক্রিমহল তৎপর মন্তব্য করে সালাহ উদ্দিন বলেন, আমরা গণতন্ত্রের পক্ষে যারা কথা বলি, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে সুদৃঢ় করবার জন্য সারাজীবন নির্যাতিত হয়েছি, নির্বাসিত হয়েছি, কারাবাসে থেকেছি এবং কোনো কোনো সময়ে আমরা আয়না ঘরে থেকেছি.. নির্যাতনে-নির্বাসনে-কারাবাসে-আ্য়না ঘরে যার জীবন ১৬/১৭ বছর, তাকে আজকে দেশদ্রোহী বনানো হচ্ছে, এটা হওয়া উচিত। এভাবে আমার নেতা তারেক রহমানের নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে যারা আমরা সংগ্রাম করেছি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য, বৈষ্যমবিরোধী সাম্যভিত্তিক রাষ্ট্র নির্মাণের জন্য তারা সবাই আজকে দেশ বিরোধী শক্তি হয়ে গেছি, এই হচ্ছে আমাদের বিরুদ্ধে তকমা। কারা করছে? যারা আমরা নির্বাচন চাই, যারা আমরা গণতান্ত্রিক উত্তরণে ঘটাতে চাই এবং গণতন্ত্রের কথা বলি, নির্বাচনের কথা বলি, গণমানুষের কথা বলি, তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে হয়ে গেছি কুচক্রি মহলের দৃষ্টিতে। কারণ তারা চায় না বাংলাদেশে কোনো নির্বাচন হোক, তারা চায় না বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শক্তির ভিত্তি, তারা চায় এদেশ সবসময় বিদেশ নির্ভর হোক। তারা আমাদেরকে দেশদ্রোহী এবং অন্যান্য দেশের এজেন্ট বানাতে তৎপর হয়ে উঠেছে। এমন পর্যায় গিয়েছে যে, আমাদের ছেলে-সন্তানদের বিরুদ্ধেও কুৎসা রটনা করছে।
একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সৈমদ ইউসুফ আহমেদ সম্পর্কেও ‘কুচক্তি’ মহলের মিথ্যাচারের নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি। কৃষকদলের নেতা-কর্মীদের ‘অনলাইনে অ্যাক্টিভিটি’ বাড়িয়ে ‘কুচক্তি’দের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে বলেন সালাহ উদ্দিন।
ফ্যাসিবাদী বিরোধী ঐক্যে ফাটল ধরানোর ষড়যন্ত্র চলঝে উল্লেখ করে সালাহ উদ্দিন বলেন, আমরা যে বৈষ্যমহীন সমাজ নির্মাণের জন্য সংগ্রাম করেছি, আজীবন গণতন্ত্রের পক্ষে ত্যাগ স্বীকার করেছি, আজীবন সংগ্রাম করেছি ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে, আমরা সেই ঐক্যকে কেনো যেন নষ্ট করতে চাচ্ছি। কিছু কিছু শক্তি গণতান্ত্রিক শক্তিসূহের মধ্যে ফাটল ধরানোর জন্য অবিরাম প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কেউ বিদেশে থেকে, কেউ স্বদেশে থেকে, কেউ বুঝতে চাচ্ছে না গণতান্ত্রিক উত্তরণ কবে হবে, আমাদের সেই গণতন্ত্র যে গণতন্ত্রের জন্য আমরা রক্ত দিয়েছি।
কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুলের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদি আমিন, বিএনপি নেতা তাবিথ আউয়াল, কৃষকদলের আবুল বাশার আখন্দ, নাছির হায়দার, জামাল উদ্দিন খান মিলন, মামুনুর রশীদ খান, এসএম ফয়সাল, আসলাম মিয়াসহ কৃষক দলের কেন্দ্রীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন।