আজ শনিবার ১২ই রবিউল আউয়াল। বিশ¡মানবতার মুক্তির দিশারী রহমাতুল্লিল আলামিন সাইয়েদুল মুরসালিন খাতামুন্নাবিয়ীন তাজদারে মদীনা জগতকূল শিরোমনি সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জন্ম ও ওফাত দিবস। এ দিনটি মুসলিম উম্মাহর কাছে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সা. নামে পরিচিত। অনেকে এ দিনটিকে পবিত্র সীরাতুন্নী সা. হিসেবে পালন করে থাকেন।

আজ থেকে ১৪শ’ ৫৫ বছর পূর্বে ৫৭০ খৃস্টাব্দে এ দিনে সুবহে সাদেকের সময় মক্কা নগরীর সভ্রান্ত কুরাইশ বংশে মা আমেনার শেকেমে তিনি জন্ম গ্রহণ করেন। জন্মের পূর্বেই তিনি পিতৃহারা হন এবং জন্মের অল্পকাল পরই বঞ্চিত হন মাতৃস্নেহ থেকে। অনেক দুঃখ, কষ্ট ও প্রতিকূলতার মধ্যদিয়ে চাচা আবু তালিবের আশ্রয়ে বড় হয়ে উঠেন।

চল্লিশ বছর বয়সে উপনীত হওয়ার পর তিনি মহান রাব্বুল আলামীনের পক্ষ থেকে নবুওয়তের মহান দায়িত্ব লাভ করেন। অসভ্য বর্বর ও পথহারা জাতিকে সত্যের সংবাদ দিতে তিনি তাদের কাছে তুলে ধরেন মহান রাব্বুল আলামীনের তাওহীদের বাণী। কিন্তু অসভ্য মূর্খ জাতি তাঁর দাওয়াত গ্রহণ না করে রাসূলের উপর নির্যাতন শুরু করে। সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিভিন্নমুখী চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করতে থাকে একের পর এক। আল্লাহর সাহায্যের ওপর ভরসা করে বিশে¡ শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য জীবনবাজি রেখে সংগ্রাম চালিয়ে যান তিনি। ধীরে ধীরে সত্যানে¡ষী মানুষ তাঁর সাথী হতে থাকে।

অন্যদিকে কাফেরদের ষড়যন্ত্রও প্রবল আকার ধারণ করে। এমনকি এক পর্যায়ে তারা রাসূল (সাঃ) কে হত্যার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। রাসূল (সাঃ) আল্লাহর নির্দেশে জন্মভূমি ত্যাগ করে মদীনায় হিজরত করেন। মদীনায় তিনি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে আল্লাহর আইন বাস্তবায়ন করেন এবং মদীনা সনদ নামে একটি লিখিত সংবিধান প্রণয়ন করেন। মদীনা সনদ বিশে¡র প্রথম লিখিত সংবিধান নামে খ্যাত। এ সংবিধানে ইহূদী খ্রিস্টান মুসলমানসহ সকলের অধিকার স্বীকৃত হয় যথার্থভাবে।

এদিকে মক্কার কাফেরদের ষড়যন্ত্রের সাথে সহযোগিতায় হাত বাড়িয়ে দেয় লেবাসধারী মুনাফিকচক্র। এরা ইসলামের চরম ক্ষতি সাধনে লিপ্ত হয় মহানবী (সাঃ)-এর বিরুদ্ধে। মুহাম্মদ (সাঃ)-এর নেতৃত্বে ওহুদ যুদ্ধে এক হাজার মুসলিম সৈন্য রওয়ানা করলে পথিমধ্যে মুনাফিক সর্দার আবদুল্লাহ ইবনে উবাইর নেতৃত্বের ৩শ’ জন সরে পড়ে এবং ওহুদ যুদ্ধে বিপর্যয় ঘটানোর অপচেষ্টা চালায়। এ যুদ্ধে মুসলমানরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখিন হয় একটি ভুলের কারণে। এতে অনেক সাহাবা শহীদ হন। স্বয়ং রাসূল (সাঃ)-এর দন্ত মোবারক শহীদ হয়। ২৩ বছর শ্রম সাধনায় অবশেষে রাসূলে পাক (সাঃ) দ্বীন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে বিজয় অর্জন করেন। মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে তা পূর্ণতা লাভ করে। অতঃপর বিদায় হজ্বের ভাষণে তিনি আল্লাহর বাণী শুনিয়েছেন মানবজাতিকে। আজ থেকে তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীন তথা জীবন ব্যবস্থাকে পরিপূর্ণ করে দেয়া হলো। তোমাদের জন্য দ্বীন তথা জীবন ব্যবস্থা হিসেবে একমাত্র ইসলামকে মনোনীত করা হয়েছে।

রাসূলের রেখে যাওয়া সেই শান্তি প্রতিষ্ঠার আদর্শ থেকে মুসলমানরা বিমুখ হওয়ায় বর্তমান বিশে¡ অশান্তির আগুন দাউ দাউ করে জ্বলছে। ইসলাম বিরোধীদের হাতে আজ বিশে¡র সর্বত্র লাখো লাখো মুসলমান নিহত হচ্ছে। অন্যায়, অবিচার আর বর্বরতার সীমা ছাড়িয়ে গেছে। তাই অশান্ত এই পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠায় মুহাম্মদ (সাঃ) এর মহান আদর্শ প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। বর্তমানে যারা রাসূলের রেখে যাওয়া আদর্শ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করে যাচ্ছেন তাদের পথ কুসুমাস্তীর্ণ নয়। কাফের ও ইসলামের লেবাসধারী মুনাফিকদের ষড়যন্ত্র এখনো চলছে। কাফেরদের পাশাপাশি ধর্মের লেবাসধারীরাও ইসলামকে কলঙ্কিত করতে চায়।

কাফের, মুশরিক ও মুনাফিকদের কোন ষড়যন্ত্রই রাসূলের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করতে পারেনি, আজও পারবে না, কেননা আল্লাহ বলেছেন, সত্য সমাগত, মিথ্যা বিতাড়িত। আর নিশ্চয়ই মিথ্যা বিলুপ্তির জন্য। সুতরাং সত্যের সংগ্রামে সাফল্য অনিবার্য।

মানুষ রাসূল সা.-এর জন্মের এ দিনটিকে বিভিন্নভাবে উদযাপন করে থাকে: কেউ কেউ এ উপলক্ষে জমায়েত হয়ে নবীজীর জন্মের ঘটনা আলোচনা করে এবং বক্তৃতা ও কাসীদা পড়ে। কেউ বা মিষ্টি-খাবার প্রভৃতি তৈরী করে বিতরণ করে। কেউ কেউ মসজিদে তা উদযাপন করে, কেউ বা উদযাপন করে বাড়িতে।

আর কেউ কেউ এ সবকিছুকে ছাড়িয়ে গিয়ে এক ধরনের মজলিসে হারাম ও দূষণীয় কাজের সমাবেশ ঘটায়: যেমন নারী ও পুরুষের মেলামেশা, নাচ ও গান-বাজনা, এবং বিভিন্ন শিরকী কাজে লিপ্ত হওয়া। এসব বিদআত থেকে সকলেরই বিরত থাকা উচিত।

আজ পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে বিভিন্ন ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে। রাসূল (সাঃ)-এর সীরাতের উপর আলোচনা, সিম্পোজিয়াম, সেমিনার ও দোয়া মাহফিলসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনসহ বিভিন্ন চ্যানেল বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করছে। জাতীয় দৈনিকগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। আজ সংবাদপত্র সমূহে ছুটি পালিত হবে। তাই আগামীকাল রোববার দৈনিক পত্রিকাসমূহ প্রকাশিত হবে না।

বাণী : পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস, পৃথক পৃথক বাণী দিয়েছেন। বাণীতে তারা মুসলমান ভাই বোনদের প্রতি শুভেচ্ছা জানান এবং রাসূল (সা:) এর আদর্শ নিজেদের জীবনে প্রতিফলন ঘটাতে আল্লাহর কাছে দোয়া করেন।

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সাঃ) উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি বিশ্ববাসীসহ মুসলিম উম্মাহকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানান।

প্রধান উপদেষ্টার বাণী

প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর অনুপম জীবনাদর্শ, সর্বজনীন শিক্ষা ও সুন্নাহর অনুসরণ আজকের এ দ্বন্দ্ব-সংঘাতময় বিশ্বে শান্তি, ন্যায় এবং কল্যাণ নিশ্চিত করতে পারে।

গতকাল শুক্রবার ‘পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী সাঃ’ উপলক্ষে দেয়া এক বাণীতে তিনি বলেন, ‘ধর্মীয় ও পার্থিব জীবনে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর সুমহান আদর্শ ও সুন্নাহ বিশ্ববাসীর জন্য উৎকৃষ্টতম অনুসরণীয় ও অনুকরণীয় এবং এর মধ্যেই মুসলমানদের জন্য অফুরন্ত কল্যাণ, সফলতা ও শান্তি নিহিত রয়েছে।’

বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব, সর্বশেষ নবী ও রাসূল হজরত মুহাম্মদ সা:-এর জন্ম ও ওফাতের পবিত্র স্মৃতি বিজড়িত ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী সাঃ সারাবিশ্বের মুসলমানদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র ও মহিমান্বিত একটি দিন উল্লেখ করে এ উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা দেশবাসীসহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ জানান।

তিনি বলেন, ‘হজরত মুহাম্মদ সা: ছিলেন ‘রাহমাতুল্লিল আলামিন’ তথা সমগ্র বিশ্বজগতের জন্য রহমত। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাকে সমগ্র মানবজাতির হেদায়েত ও নাজাতের জন্য প্রেরণ করেছেন। নবী করিম সা: সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘হে নবী, আমি আপনাকে সমগ্র বিশ্বজগতের জন্য কেবল রহমতরূপে প্রেরণ করেছি’ (সূরা আল-আম্বিয়া, আয়াত : ১০৭)। হজরত মুহাম্মদ সা: দুনিয়ায় এসেছিলেন ‘সিরাজাম মুনিরা’ অর্থাৎ আলোকোজ্জ্বল প্রদীপরূপে। সব ধরনের কুসংস্কার, অন্যায়, অবিচার, দাসত্ব ও পাপাচারের অন্ধকার থেকে মানুষকে মুক্তি ও আলোর পথ দেখাতে শান্তি, প্রগতি ও কল্যাণের বার্তা নিয়ে এসেছিলেন তিনি।’

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আল্লাহর প্রতি অসীম আনুগত্য ও ভালোবাসা, অনুপম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, অপরিমেয় দয়া ও মহৎ গুণের জন্য পবিত্র কুরআনে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর জীবনকে বলা হয়েছে, ‘উসওয়াতুন হাসানাহ্’ অর্থাৎ সুন্দরতম আদর্শ। তিনি বিশ্ব মানবতার জন্য যে অনিন্দ্য সুন্দর অনুসরণীয় শিক্ষা ও আদর্শ রেখে গেছেন, তা প্রতিটি যুগ ও শতাব্দীর মানুষের জন্য মুক্তির দিশারী হিসেবে পথ দেখাবে।’

পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী সা: সকলের মাঝে বয়ে আনুক অপার শান্তি ও সমৃদ্ধি এই কামনা করে তিনি বলেন, ‘সমগ্র মুসলিম উম্মাহর ঐক্য আরো সুসংহত হোক। মহানবী সা:-এর সুমহান জীবনাদর্শ লালন ও অনুসরণের মাধ্যমে আমাদের ইহকালীন ও পরকালীন জীবনের সার্বিক কল্যাণ ও মুক্তি সুনিশ্চিত হোক- এ কামনা করি। আমিন।’

তারেক রহমানের বাণী

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, মানুষ ন্যায় ও সৎ পথে চলার অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত লাভ করে রাসুলের (সঃ) দেখানো পথে। পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সঃ) উপলক্ষে গতকাল শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বাণীতে তিনি একথা বলেন। তিনি ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে বাংলাদেশসহ বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়কে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।

বাণীতে তারেক রহমান বলেন, ঈদে মিলাদুন্নবীর দিনটি মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর দুনিয়াতে আগমণের আনন্দ ও তার জীবন থেকে শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে উদযাপন করা হয়। যিনি মানবজাতিকে পরিশোধন করেন এবং তাদের সর্বশেষ্ঠ গ্রন্থ কোরআন ও কাজের কথা শিক্ষা দেন। তিনি সারা বিশ্বের জন্য রহমতস্বরুপ, আমাদের জন্য আল্øাহ’র পক্ষ থেকে সবথেকে বড় উপহার বা এহসান। মানবজাতি তার আগমণে নিজেদের কল্যাণ ও শান্তির নিশ্চয়তা লাভসহ জগতের সমস্ত অন্যায়-অবিচার, কুসংস্কার, নিপীড়ণ-নির্যাতন এবং বৈষম্যের ঘোর অন্ধকার যুগ থেকে নিস্কৃতি লাভের সন্ধান পায়।

তারেক রহমান বলেছেন, মানুষ ন্যায় ও সৎ পথে চলার অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত লাভ করে রাসুলের (সঃ) দেখানো পথে। নিজ যোগ্যতা, সততা, মহানুভবতা, সহনশীলতা, কঠোর পরিশ্রম, আত্মপ্রত্যয়, অসীম সাহস, ধৈর্য্য, সৃৃষ্টিকর্তার প্রতি অগাধ বিশ্বাস, নিষ্ঠা ও অপরিসীম দুঃখ যন্ত্রনা ভোগ করে তিনি তার উপর অবতীর্ণ সর্বশ্রেষ্ঠ মহাগ্রন্থ আল-কোরআনের বাণী তথা তওহীদ প্রতিষ্ঠার মহান দায়িত্ব পালন করেন। তিনি আইয়ামে জাহেলিয়াতের অন্ধকার যুগ দুরীভূত করে ইসলাম কায়েমের মাধ্যমে সত্য, ন্যায়বিচার ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। তিনি মহানবী (সঃ) এর শিক্ষা, আদর্শ ও ত্যাগের মহিমায় সবাই যেন নিজেদের জীবনে প্রতিফলন ঘটাতে পারে, সেই কামনা করেন।

এদিকে পবিত্র ঈদ-ই-মিলাদুন্নবী (সঃ) উপলক্ষে দেয়া অপর এক বাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজকেই এই দিনে বিশ্বজগতের এক সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানবের আবির্ভাবের দিন। এই শিশুর শুভাগমণ সারা দুনিয়াকে নাড়া দেয়। বিশ্বমানবের নিকট এক অসাধারণ আলোকবর্তিকা, শান্তি-সংগ্রাম-সম্প্রীতির আধার চরম সত্যবাদী ও পরম বিশ্বস্ত হযরত মোহাম্মদ (সঃ)।

প্রধান বিচারপতির বাণী

মহানবী (সা.) মানবতার মুক্তি, সাম্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার যে মহৎ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা আজও আমাদের জন্য অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। তিনি শিখিয়েছেন, ন্যায়বিচার কোনো ব্যক্তিবিশেষের জন্য সীমাবদ্ধ নয়; বরং তা সমগ্র মানবজাতির মৌলিক অধিকার। আইনের শাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদা রক্ষায় তিনি আমাদের জন্য অনন্য আদর্শ।

হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জন্ম ও ওফাত দিবস উপলক্ষে এক বাণীতে গতকাল শুক্রবার এমন মন্তব্য করেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ।

বাণীতে প্রধান বিচারপতি বলেন, ১২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭ হিজরি পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী। এ দিন মানবতার মুক্তিদাতা সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর জন্ম ও ওফাত দিবস। বিশ্বের মুসলিম সম্প্রদায়সহ শান্তিকামী সকল মানুষের কাছে দিনটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। আমাদের ধর্মীয় ও পার্থিব উভয় জীবনে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (স.) -এর শিক্ষা ও জীবনাদর্শ অনুসরণীয়। মহানবী ছিলেন মহানুভবতা, সহনশীলতা, সততা, নিষ্ঠাসহ নানা মানবিক গুণে গুনান্বিত একজন মহামানব, মানবজাতির পথ প্রদর্শক।

মহানবী তার জীবনে এমন বহু দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, যেখানে ন্যায়বিচারের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা, সাহসিকতা এবং নৈতিক দৃঢ়তা সর্বোচ্চ গুরুত্ব পেয়েছে। তিনি আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন যে, বিচারকার্য পরিচালনায় কোনো ব্যক্তির সামাজিক মর্যাদা, সম্পদ কিংবা ক্ষমতার প্রভাব বিবেচ্য হবে না; বরং সবার জন্য একই আইন এবং একই ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে। তাই আইনাঙ্গণের সব সদস্যের জন্য ন্যায়বিচারের এ আদর্শকে ধারণ করা কেবল পেশাগত দায়িত্ব নয়, বরং একটি নৈতিক অঙ্গীকার।

প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, বাংলাদেশ একটি বহু ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতির দেশ। মহানবী (সা.) তার জীবদ্দশায় মদিনার সনদের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, পারস্পরিক সহনশীলতা ও সহাবস্থানের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। তার এ শিক্ষা আমাদের জাতীয় জীবনে বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক। পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সৌহার্দ্যের চর্চার মাধ্যমেই আমরা একটি শান্তিপূর্ণ, সমৃদ্ধ ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে সক্ষম হবো।

এ পবিত্র দিনে সবার প্রতি আমার আহ্বান থাকবে মহানবী (সা.)-এর মানবতামূলক শিক্ষা ও ন্যায়বিচারের আদর্শকে হৃদয়ে ধারণ করে আমরা সব প্রকার বৈষম্য, অন্যায় ও বিদ্বেষ পরিহার করব এবং সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় নিজ নিজ অবস্থান থেকে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টায় নিয়োজিত হবো।