বিভিন্ন মহলের শোক
চলে গেলেন দেশের আইন অঙ্গনের অন্যতম জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক এই সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল গতকাল রোববার বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে রাজধানীর ইবনে সিনা হাসপাতালে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। তিনি স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। গতকাল রাত সাড়ে ৮টায় ধানমন্ডির তাকওয়া মসজিদে ১ম নামাযে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় নামাযে জানাযা বেলা ১১টায় সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ও তৃতীয় জানাযা বাদ যোহর বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হবে।
গতকাল রাত সাড়ে ৮টায় ধানমন্ডির তাকওয়া মসজিদে অনুষ্ঠিত প্রথম নামাযে জানাযায় অংশগ্রহণ করেন জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান, নায়েবে আমীর ডা. আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, ঢাকা মহানগরী দক্ষিনের আমীর নূরুল ইসলাম বুলবুল, উত্তরের আমীর মো. সেলিম উদ্দিনসহ স্থানীয় গণমান্য ব্যক্তিবর্গ।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের ইন্তিকালে বিভিন্ন মহলের পক্ষ থেকে শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দেয়া হয়েছে। বিবৃতিতে তারা মরহুমের রুহের মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন। শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ, জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান, সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, জাগপা সভাপতি ব্যারিস্টার তাসমিয়া প্রধান, মুসলিম গীগের সভাপতি জোবায়দা কাদের চৌধুরী ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব এডভোকেট আফতাব হোসেন মোল্লা।
জানা যায়, ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বেশকিছু দিন ধরে অসুস্থ ছিলেন। গুরুতর অসুস্থ হয়ে চলতি বছরের ২১ এপ্রিল হাসপাতালে ভর্তি হন। ২০২৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ১১ বছর পর যুক্তরাজ্য থেকে দেশে ফিরেছিলেন এই জ্যেষ্ঠ আইনজীবী। এর পর আবারও আইনজীবী হিসেবে সুপ্রিম কোর্টে ফেরেন বর্ষীয়ান এই আইনজীবী।
সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক ২০১৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর দেশ ছেড়ে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমিয়েছিলেন। এর আগে তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতাদের আইনজীবী হিসেবে লড়েছেন।
১৯৪৪ সালে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার মাথিউরা ইউনিয়নের শেখলাল গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাক। বিএ (অনার্স) ও এম এ ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৮০ সালে তিনি যুক্তরাজ্যের লিংকনস ইন থেকে ব্যারিস্টার ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৮৫ সালের নবেম্বর পর্যন্ত তিনি লন্ডনেই আইন পেশায় নিয়োজিত ছিলেন।
এরপর ১৯৮৬ সালে দেশে ফিরে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন তিনি। ১৯৮৮ সালে হাইকোর্ট বিভাগে এবং ১৯৯৪ সালে আপিল বিভাগের অন্তর্ভুক্ত হন বরেণ্য এই আইনজীবী। তিনি ১৯৯০ সালে দ্য ল’ কাউন্সেল নামে একটি আইনি ফার্ম প্রতিষ্ঠা করেন। ২০০২ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সিনিয়র আইনজীবী হন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।
যুক্তরাজ্যে থাকা অবস্থায় ২০১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি দল থেকে পদত্যাগের কথা জানান ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। তখন দলটির আমীর ডা. শফিকুর রহমান এক বার্তায় বলেছিলেন, ‘তার পদত্যাগে আমরা ব্যথিত ও মর্মাহত। পদত্যাগ করা যেকোনো সদস্যের স্বীকৃত অধিকার। আমরা দোয়া করি তিনি যেখানেই থাকুন, ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আমরা আশা করি তার সঙ্গে আমাদের মহব্বতের সম্পর্ক অব্যাহত থাকবে।’
এরপর নতুন দল আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির প্রধান উপদেষ্টা হন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর ১৭ আগস্ট সেই পদ থেকেও পদত্যাগ করেন তিনি।
ব্যারিস্টার রাজ্জাক আলোচিত একুশে টিভি মামলা, ইত্তেফাকের মামলা, অধ্যাপক গোলাম আযমের নাগরিকত্ব মামলা, আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর সংসদ সদস্য পদ সংক্রান্ত মামলা, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ নিয়ে মামলা ও ত্রয়োদশ সংশোধনী মামলা পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এছাড়া আবদুল কাদের মোল্লা, অধ্যাপক গোলাম আযম ও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের পক্ষে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা পরিচালনা করেন। তিনি বিভিন্ন বেসরকারি টিভি চ্যানেলের উপদেষ্টাও ছিলেন। রয়েছে তার বিভিন্ন প্রকাশনা।
গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর দেশে ফিরে বিমানবন্দরে রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার প্রশ্নে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি একজন আইনজীবী। আমি কোর্ট রুম ব্যারিস্টার। আমি আইনের অঙ্গনে আমার অবদান রাখার চেষ্টা করব। আইনের শাসন একটি অতি বড় জিনিস। দেশে যদি আমরা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করতে পারি। তাহলে আমাদের রাজনীতি সফল হবে। অর্থনৈতিক উন্নতি হবে। সুতরাং আইন অঙ্গনে আমার বিচরণ, আইন অঙ্গনে আমি থাকব। আইন অঙ্গনের মাধ্যমে আমি দেশ এবং জাতির খেদমত করার চেষ্টা করব।’ এরপর সম্প্রতি অসুস্থ হয়ে তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন।