মো: কাজী মেহেদি হাসানের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে। জুলাই আগস্টের আন্দোলনে তিনি আহত হয়েছেন দুই বার। তার গায়ে অর্ধডজন অস্ত্রপচার করা হয়েছে। আরও কয়েকটা অস্ত্রপচার লাগবে। বিভিন্ন প্রাইভেট হাসপাতাল ঘুরে তার ঠাঁই হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তিনি দৈনিক সংগ্রামকে বলেছেন আন্দোলনের গল্প। লিখেছেন ইবরাহীম খলিল।
দৈনিক সংগ্রাম : কিভাবে আন্দোলনে জড়ালেন ?
মেহেদি হাসান : ১৫ জুলাই যখন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর হামলা হলো। স্বৈরাচার সরকারের প্রধানমন্ত্রী হাসিনা যখন বললো যে মুক্তিযুদ্ধের সন্তানরা মেধাবী না রাজাকারের নাতি পুতিরা মেধাবী। এরপর ছাত্রলীগ যখন আমার ভাইবোনদের সাথে খারাপ আচরণ করলো তখন থেকেই আমরা আন্দোলনে যুক্ত হই।
দৈনিক সংগ্রাম : আপনি বলছিলেন যে, আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে দুইবার আহত হয়েছেন ? প্রথমবার কখন আহত হলেন ?
মেহেদি হাসান : ১৯ জুলাই আমি আন্দোলন করতে ঢাকার শাহবাগে আসি এবং পুলিশের ছররা গুলীতে আহত হই। সেদিন আমাদের বড়ভাইরা বলে দেন যদি সবাই শাহবাগ এসে পড়ি তাহলে ঢাকার বাইরের পয়েন্টগুলো খালি হয়ে যায়। আমরা যার যার এলাকায় থেকে যদি পয়েন্টগুলো যদি ধরে রাখি; তাহলে দেখা যাবে সারা বাংলাদেশে আন্দোলনটা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখতে পারবো। এ বক্তব্য শোনার পর আমরা নিজেদের এলাকাতে চলে যাই। তারপর থেকে নারায়ণগঞ্জ চাষাঢ়া এলাকাতে আন্দোলন করি। এছাড়া ভূলতা গাউসিয়াতেও আমি আন্দোলন করেছি।
দ্বিতীয় বার আহত হই ৩০ জুলাই। সেখানে রূপগঞ্জ থানার ছাত্রলীগের সাবেক সদস্যসচিব মাসুম, তার নেতৃত্বে সন্ত্রাসীবাহিনী হামলা করে। আমি সামনের সারি থাকার কারণে এক পর্যায়ে আমাকে ঘেরাও দিয়ে ফেলে। তখন হকিস্টিক রড দিয়ে আমার ডান পা থিতলে ফেলে। চার হাতপা কয়েক জায়গায় ভেঙ্গে দেয়। ডান পায়ের অবস্থা খুব খারাপ করে ভেঙ্গে দেয়। যখন দেখলো যে আমার আর কোন চেতন নাই, তখন আমাকে ফেলে রেখে চলে যায়। তখন আমার সহযোদ্ধারা আমার পরিবারকে জানায়। তখন যেহেতু স্বৈরাচারের আমল ছিল, তখন আমাকে চিকিৎসাও করতে দেওয়া হয়নি। একারণে আমাকে তাৎক্ষণিক প্রাইভেট হাসপাতালে নেওয়া হয়। হাসপাতালটির অবস্থান ধানমন্ডি ৩২ এর কাছে। সেখানে হাতের কোন চিকিৎসা হয়নি। পায়ের কিছুটা চিকিৎসা হয়েছে। খুনি সরকার পালানোর পর ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হই। ধানমন্ডির হাসপাতাল থেকে নিটোরে রেফার করা হয় কিন্তু সেখানে আমারা ভর্তি নেয়নি। ঢাকা মেডিকেলে এসে হাত পায়ের কয়েকটা অপারেশন হয়েছে।
দৈনিক সংগ্রাম : ঢাকা মেডিকেলে কতদিন ধরে আছেন ?
মেহেদি হাসান : এখানে সাড়ে তিনমাস ধরে চিকিৎসা চলছে।
দৈনিক সংগ্রাম : ৩০ জুলাইতো আহত হলেন। ২০ থেকে ৩০ জুলাই এই দশদিনের আন্দোলন নিয়ে কিছু বলেন।
মেহেদি হাসান : ১০ দিন আন্দোলনে ছিলাম। এই আন্দোলন নিয়ে বেশ অভিজ্ঞতা আছে। আমাদের এক জায়গা থেকে আরেক জায়গাতে যেতে হয়েছে নদী পথেও। আমরা নারায়ণগঞ্জ সাইনবোর্ড এবং চাষাঢ়াতে আন্দোলন করতাম। এই পয়েন্টগুলো আমাদের দেওয়া হয়। এসব জায়গায় যেতে বাধা দেওয়া হতো। দেখা গেছে কাঁচপুর ব্রীজের গোড়ায় আওয়ামী সন্ত্রাসীবাহিনী গ্রুপ ছিল, ভূলতা গাউছিয়াতে আরেকটা গ্রুপ ছিল। তারা বিভিন্ন জায়গাতে টহল দিতো। আমরা ট্রলার ভাড়া করে নিয়ে আসতাম। নদী পথে আমরা একদম মোরাপাড়া চলে যেতাম। তারপর আমরা যার যার গন্তব্যে চলে যেতাম। কখনো বাস ট্রাকেও যেতাম।
দৈনিক সংগ্রাম : তখন কি কোন সমস্যা হয়েছে ?
মেহেদি হাসান : তখনতো পুলিশ অবৈধ সরকারের এজেন্ডা নিয়ে নাচছে। পুলিশ মাঝে মধ্যে রাস্তায় গাড়ি চেক করতো ছাত্র আছে কি-না। যখনই আমার বয়সী কাউকে পেয়েছে, কিংবা কার্ড সাথে পেয়েছে সাথে সাথে গ্রেফতার করেছে। এরকমভাবে বিভিন্ন সময় আমাদের হয়রানি করা হয়েছে।
দৈনিক সংগ্রাম : আপনি কোথায় পড়াশোনা করেন?
মেহেদি হাসান : আমি সরকারি মোড়াপাড়া কলেজে পড়ি। অনার্স সেকেন্ড ইয়ার।
দৈনিক সংগ্রাম : আন্দোলন আপনাকে কি দিয়েছে ?
মেহেদি হাসান : আন্দোলন আমাকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র দিয়েছে। তবে আমাদের রক্তের সাথে কিছু রাজনৈতিক দল বেঈমানি করছে। আরেকটা কথা হলো দেখা গেছে অনেক আহত সাহায্য পায়নি।
দৈনিক সংগ্রাম : আপনিতো ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। তারা কি আপনার খোঁজ নিয়েছে ?
মেহেদি হাসান : ছাত্রদলের পক্ষ থেকে মাসুদুর রহমান মাসুদ এবং আলহাজ গোলাম ফারুক খোকন খোঁজ খবর রেখেছেন। কিছু টাকা অনুদান হিসেবে দিয়েছে। বিএনপির পক্ষ থেকে কোন আর্থিক সহযোগিতা পাওয়া যায়নি। অন্যকোন সংগঠন থেকেও করা হয়নি।
দৈনিক সংগ্রাম : এখন আপনার চিকিৎসা কোন পর্যায়ে ?
মেহেদি হাসান : আমার ৫টা অপারেশন হয়েছে। আরও কয়েকটা অপারেশন লাগবে।