পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট দুর্নীতির তিন মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। তিন মামলায় গতকাল মঙ্গলবার ১৭ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করেন ঢাকার পঞ্চম বিশেষ জজ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন।
সাক্ষীরা হলেন- রাজউকের উপপরিচালক মাহবুবুর রহমান, সহকারী পরিচালক অসীম শীল, সহকারী পরিচালক উল্লাস চৌধুরী, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আক্তার জাহান, দুদকের সহকারী পরিচালক ধীরাজ চন্দ্র বর্মন, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের অফিস সহকারী শফিকুল ইসলাম ও দুদকের সহকারী পরিচালক সৌরভ দাস।
এ সাত ব্যক্তিই ঘুরেফিরে এক বা একাধিক মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ায় মোট ১৭ জনের সাক্ষ্য হিসেবে গণ্য হয়েছে বলে জানিয়েছেন দুদকের কৌঁসুলি খান মো. মঈনুল হাসান লিপন। তিনি বলেন, তিন মামলায় ১৭ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। এদের মধ্যে শেখ হাসিনা ও পুতুলের দুই মামলায় ছয়জন করে ১২ জন এবং জয়ের মামলায় পাঁচজন সাক্ষ্য দেন। আগামী ২ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্য গ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করা হয়েছে। মামলার সব আসামি পলাতক থাকায় তাদের আইনজীবীরা সাক্ষীদের জেরা করার সুযোগ পাননি। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২ সেপ্টেম্বর দিন ঠিক করেছে আদালত।
পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ৬ প্লট দুর্নীতির মামলায় গত ৩১ জুলাই ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানার সঙ্গে তাদের সন্তানসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় ঢাকার দুই বিশেষ জজ আদালত। এর মধ্যে তিন মামলায় শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলের বিরুদ্ধে গত ১১ আগস্ট প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণ হয়, সেদিন তিন মামলার তিন বাদী সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। বাকি তিন মামলায় শেখ রেহেনা, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক, মেয়ে টিউলিপ রিজওয়ানা সিদ্দিক ও আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর বিরুদ্ধে গত ১৩ অগাস্ট প্রথম সাক্ষগ্রহণ করা হয়। এ তিন মামলায় পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ২৮ অগাস্ট দিন ঠিক করা আছে।
শেখ পরিবারের বাইরে যে ১৬ জন আসামির তালিকায় রয়েছেন, তারা হলেন, জাতীয় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ) কবির আল আসাদ, সদস্য (উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ) তন্ময় দাস, সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) নুরুল ইসলাম, সাবেক সদস্য (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, সাবেক সদস্য সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, পরিচালক (এস্টেট ও ভূমি-২) শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপপরিচালক হাফিজুর রহমান, হাবিবুর রহমান, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন।
২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ভারতে অবস্থান করছেন শেখ হাসিনা। তার পরিবারের অন্যরাও দেশের বাইরে। তাদের নামে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে ১০ কাঠা করে ছয়টি প্লট বরাদ্দে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে গত ডিসেম্বরে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। এরপর ১২ জানুয়ারি প্লট বরাদ্দের ক্ষেত্রে ক্ষমতার অপব্যবহার ও নিয়মের অভিযোগে পুতুলের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করে দুদক। পরদিন শেখ রেহানা, তার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তীর বিরুদ্ধে মামলা করে সংস্থাটি। এরপর ১৪ জানুয়ারি শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করে দুদক। এই ছয় মামলাতেই শেখ হাসিনাকে আসামি করেছে দুদক। অন্যদেরও কেউ কেউ একাধিক মামলার আসামি। সব মিলিয়ে ছয় মামলার আসামির সংখ্যা ২৩।
এসব মামলায় দুদক অভিযোগ করেছে, সরকারের সর্বোচ্চ পদে থাকাকালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিবার ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। অযোগ্য হলেও তারা পূর্বাচল আবাসন প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরে ১০ কাঠা করে প্লট বরাদ্দ নেন।