স্বাধীনতা পদক বিতরণ অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জুলাই বিপ্লবে হতাহতদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজ নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখার সুযোগ পেয়েছে মানুষ। এই সুযোগ কোনভাবেই আমরা বৃথা হতে দেবো না। গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে স্বাধীনতা পদক প্রদান অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন। পদকপ্রাপ্ত ৭ জনের মধ্যে ৬ জনের পরিবারের সদস্যদের হাতে পদক তুলে দেন। আর একজন পদক গ্রহণ করতে অস্বীকার করায় তা জাতীয় যাদুঘরে রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এবছর মরোনত্তর পদকপ্রাপ্তরা হলেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলাম, সাহিত্যে মীর আবদুস শুকুর ওরফে কবি আল মাহমুদ, সংস্কৃতিতে নভেরা আহমেদ, সমাজ সেবায় স্যার ফজলে হাসান আবেদ, মুক্তিযুদ্ধ ও সংস্কৃতিতে মোহাম্মদ মাহাবুল হক আজম খান, শিক্ষা ও গবেষণায় বদরুদ্দীন মোহাম্মদ উমর এবং প্রতিবাদী তারুণ্য কোটায় বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ।
পদক প্রদান অনুষ্ঠানে প্রফেসর ইউনূস বলেন, অনুষ্ঠানে অনেকেই বলেছেনর মরোনত্তর পুরষ্কার দেওয়ার চাইতে জীবদ্দশায় পেলে যে আনন্দ দেশের জন্য পরিবারের জন্য এবং ব্যক্তির জন্য ভাল। কারণ যিনি বা যাকে সম্মান দেখাচ্ছি তিনি আমাদের সঙ্গে ছিলেন। আমরা এটা ব্যবস্থা করতে পারি যে মরোনত্তরদের পালা শেষ করে জীবিত অবস্থায় যারা আছেন তাদেরকে আমরা স্বাধীনতার সম্মাননা দিবো।
তিনি বলেন, যারা আমাদের এই জাতিকে এক মহান উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, পুরস্কার দিতে শুধু তাদেরকে সম্মান জানাই না; আমরা সম্মানিত হই, জাতি হিসেবে নিজের সম্মান পাচ্ছি। যারা জাতিকে অনেক কিছু দিয়ে গেছেন; তাদের জীবদ্দশায় স্মরণ করতে না পারলে আমরা একটা অকৃতজ্ঞ জাতি হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবো। আমরা চাই, যাদের আমরা সম্মাননা দিতে চাই, যথা সময়ে যেন আমরা দেই। লিখিত বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ১৯৭১ সালে পাকি¯াÍনি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র ঘুমন্ত নিরীহ বাঙালির ওপর নির্মমভাবে গুলী চালিয়ে হাজারো মানুষকে হত্যা করে। এই ২৫ মার্চ থেকে এই দেশের মানুষ স্বশস্ত্র প্রতিবাদে মেতে ওঠে। ৯ মাসের যুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ।
স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর শহীদদের শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করে প্রফেসর ইউনূস বলেন, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতার যুদ্ধের একটা উদ্দেশ্য ছিল একটা ন্যায়ভিত্তিক প্রতিষ্ঠা করা; যেখানে আইনের শাসন থাকবে, মানুষের মৌলিক মানবাধিকার নিশ্চিত হবে এবং একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু স্বাধীনতার পর থেকে এখনো একটি ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। দীর্ঘদিন ধরে এদেশের মানুষকে তাদের ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। দুর্নীতি লূটপাটের সরকার ফ্যাসিবাদীরা কায়েম করেছে।
জুলাই বিপ্লবে হতাহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আজ নতুন বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখার সুযোগ পেয়েছে। এই সুযোগ কোনভাবেই আমরা বৃথা হতে দিবো না।
পদক প্রাপ্তরা সবাই বাংলার সুর্য্য সন্তান আখ্যা দিয়ে প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, যারা এই প্রাপ্তি দেখে যেতে পারেননি সেটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আজকে তাদের অবদানকে কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করছি। তিনি বলেন দেরিতে হলেও তাদের এই সম্মান করতে পেরে আমরা এবং দেশের সবাই আনন্দিত। তিনি সবাই স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা জানান।
অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, রাজনীতিবিদ ও প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। রাজনীতিবিদদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার. সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুল হালিম, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, গনসংহতির জোনায়েদ সাকি প্রমূখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মন্ত্রীপরিষদ সচিব ড. শেখ আবদুর রশিদ।
পুরস্কার গ্রহণ করে আবরার ফাহাদের মা মোছাম্মদ রোকেয়া খাতুন বলেন, দেশের জন্য কথা বলায় আর কোন মায়ের সন্তানের জন্য যেন জীবন দিতে না হয়। কবি আল মাহমুদের মেয়ে বেগম আতিয়া মির বলেন, বাবা বলতেন পুরস্কারের ওপর সাহিত্য নির্ভর করে না। তবে পুরষ্কারে কিছু সাহিত্য পরিচিতি পায়।