# নারায়ণগঞ্জে ইকোনমিক জোন ঘুরে দেখলেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা

# এক বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের

যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার সঙ্গে ‘আর্টেমিস অ্যাকর্ডস’ চুক্তি সই করেছেন বাংলাদেশ। ফলে বাংলাদেশ এখন ‘আর্টেমিস অ্যাকর্ডস’-এর ৫৪তম স্বাক্ষরকারী দেশ, যা নাসার নেতৃত্বে শান্তিপূর্ণ ও অসামরিক মহাকাশ অনুসন্ধানকে উৎসাহিত করার একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ। বিনিয়োগ সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন বিদেশীরা নারায়ণগঞ্জে স্পেশাল ইকোনোমিক জোন ঘুরে দেখেন। অন্যদিকে নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক উন্নয়ন খাতে এক বিলিয়ন ডলার প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেন।

গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনের উপস্থিতিতে প্রতিরক্ষা সচিব মো. আশরাফ উদ্দিন আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তিতে সই করেন। ২০২০ সালের অক্টোবরে প্রতিষ্ঠিত আর্টেমিস অ্যাকর্ডস চুক্তিগুলো হলো একটি অ-বান্ধনযোগ্য বহুপাক্ষিক ব্যবস্থার একটি সিরিজ; যার লক্ষ্য হলো মহাকাশ অনুসন্ধানে শান্তিপূর্ণ, স্বচ্ছ ও টেকসই সহযোগিতা।

এই উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশ বৈশ্বিক মহাকাশ গবেষণা, মহাকাশ ঐতিহ্য সংরক্ষণ এবং মহাকাশ সম্পদের দায়িত্বশীল ব্যবহারে নিজেকে সম্পৃক্ত করল; যা দেশের জাতীয় উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। চৌধুরী আশিক বলেন, ‘এই স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মহাকাশ গবেষণায় নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ তার মহাকাশ গবেষণা কার্যক্রমকে আরও বেগবান করতে পারবে।

প্রতিরক্ষা সচিব আশরাফ উদ্দিন বলেন, আর্টেমিস অ্যাকর্ডস মূলত আউটার স্পেস ট্রিটি রেজিস্ট্রেশন কনভেনশন এবং অ্যাস্ট্রোনট রেসকিউ এগ্রিমেন্টের নীতিগুলো অনুসরণ করে তৈরি একটি নির্দেশিকা; যা মহাকাশের শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও টেকসই ব্যবহারে সহায়ক। তিনি বলেন, ১৯৮০ সালে বাংলাদেশ স্পারসো গঠন করে মহাকাশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে উৎসাহিত করতে কাজ শুরু করে এবং তখন থেকেই আন্তর্জাতিক নিয়মকানুন মেনে চলেছে।

প্রতিরক্ষা সচিব আরও বলেন, আর্টেমিস চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো মহাকাশে স্বচ্ছ ও দায়িত্বশীল কার্যক্রম পরিচালনার প্রতিশ্রুতি দেয়। ২০২৫ সালের ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত আর্টেমিস চুক্তিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, জাপান, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, অস্ট্রেলিয়া ও বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশ, লাতিন আমেরিকানসহ ৫৩টি দেশ স্বাক্ষর করেছে। বাংলাদেশ এই চুক্তিতে যুক্ত হয়ে একটি সম্মানজনক আন্তর্জাতিক মহাকাশ জোটের অংশ হলো।

আশরাফ উদ্দিন বলেন, এই চুক্তি প্রযুক্তি স্থানান্তর ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণার নতুন দরজা খুলে দেবে।এর মাধ্যমে নাসা ও স্পারসোর মধ্যে সহযোগিতার সুযোগ তৈরি হবে এবং বাংলাদেশের মহাকাশ কার্যক্রম জোরদার হবে। তিনি যোগ করেন, নাসা ও অন্যান্য মহাকাশ সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা করলে বাংলাদেশ উন্নত স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রবেশাধিকার পাবে, যা বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট প্রোগ্রাম ও ভবিষ্যৎ মহাকাশ উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে।

এ ছাড়া বাংলাদেশের স্পারসোর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো পৃথিবী পর্যবেক্ষণ ও জলবায়ু মনিটরিং স্যাটেলাইট তৈরি করতে প্রযুক্তিগত সহায়তা পেতে পারে; যা বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সহায়ক হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও বিজ্ঞানীরা বৈশ্বিক মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ গবেষণায় অংশগ্রহণ করতে পারবে; আর শিক্ষার্থীরা নাসার প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম, বৃত্তি ও এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম থেকে উপকৃত হতে পারবে।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উত্তর আমেরিকা উইংয়ের মহাপরিচালক ও চিফ অব প্রোটোকল এএফএম জাহিদ-উল-ইসলাম এবং বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন সংস্থার (স্পারসো) চেয়ারম্যান মো. রাশেদুল ইসলাম।

এদিকে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিটের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে অবস্থিত বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনমিক জোন (বিএসইজেড) পরিদর্শন করেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। এদিন সকালে তারা সেখানে পরিদর্শনে যান। এ সফরে অংশ নিয়ে তারা জাপানের সহায়তায় গড়ে ওঠা এই বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের অবকাঠামো, সম্ভাবনা ও চলমান প্রকল্প সম্পর্কে অবহিত হন।

পরিদর্শনকালে প্রতিনিধিরা সরকারের বিনিয়োগবান্ধব উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং ভবিষ্যতে এ অঞ্চলে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেন। বিএসইজেড জাপান ইকোনমিক জোন নামেও পরিচিত। যা বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়িত হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই সফরের মাধ্যমে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সরাসরি মাঠ পর্যায়ে সম্ভাবনা পরখ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। এর আগে সোমবার সম্মেলনের প্রথম দিনে ৭০ জন বিনিয়োগকারীর একটি দল চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শন করেছেন।

এদিকে বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্মেলন নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ওয়াল্ড ব্যাংক। গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশিত রিপোর্টে বলা হয় বাংলাদেশ চারটি ক্ষেত্রে সংস্কারের মাধ্যমে পর্যাপ্ত বিনিয়োগ আকর্ষণ করে মিলিয়ন মিলিয়ন চাকুরীর ব্যবস্থা করতে পারে। অন্যদিকে সুইডিশ কোম্পানীর নিলর্ন বাংলাদেশ এবং আড়াইহাজারে বাংলাদেশ স্পেশাল ইকোনোমিক জোনে বিনিয়োগের জন্য একটি সমঝোতা স্মারক সই করেন।

এক বিলিয়ন ডলার ঋণের প্রতিশ্রুতি নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের :

নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট ব্লাদিমির কাজবেকভ গতকাল প্রফেসর ইউনূসের সাথে দেখা করেন। মঙ্গলবার সাংহাই-ভিত্তিক বহুপাক্ষিক ঋণদাতার একজন ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, ব্রিকস-প্রতিষ্ঠিত নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক এ বছর বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পে ঋণের পরিমাণ এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করার পরিকল্পনা করেছে। ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির কাজবেকভ বলেন, সম্প্রসারিত ঢাকা সিটির পানি নিরসনের প্রকল্প বাস্তাবায়নের জন্য ৩২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুমোদন করেছে তার ব্যাংক। কিন্তু এই বছর এটি বাংলাদেশের উন্নয়ন চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে তহবিলের পরিমাণ তিনগুণেরও বেশি করতে চায়। প্রধান উপদেষ্টা নতুন বহুপাক্ষিক ঋণদাতার ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, এই ঋণ অবকাঠামো উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে। কাজবেকভ বলেন, ঋণদাতা বাংলাদেশে গ্যাস সেক্টরের অবকাঠামোগত উন্নয়নে বড় ধরনের সহায়তা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

কাজবেকভ বলেন, এনডিবি তাদের সক্ষমতা জোরদার করার প্রয়াসে দেশের বেসরকারি খাতে যথেষ্ট পরিমাণে ঋণ দিতে আগ্রহী ছিল। বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা দেশের বিকাশমান অর্থনৈতিক অঞ্চলে হাজার হাজার শ্রমিকের জন্যআবাসন সুবিধার মতো সামাজিক অবকাঠামোতে এনডিবি ঋণ দেওয়ার ওপর জোর দেন। কাজবেকভ বলেন, ব্যাংকটি বহু-মুদ্রা ঋণ চালু করেছে, যা বাংলাদেশ উপকৃত হবে।

এসময় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী বলেন, এনডিবিকে বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রাধিকারের সাথে তার তহবিলকে সারিবদ্ধ করার প্রয়াসে বাংলাদেশের উপর দেশের কৌশল কর্মসূচি চালু করার দিকে মনোনিবেশ করা উচিত। বৈঠকে বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, এসডিজি সমন্বয়কারী লামিয়া মোর্শেদ ও ইআরডি সচিব শাহরিয়ার কাদের সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন।

এদিন যুক্তরাষ্ট্রের জায়ান্ট এনার্জি এক্সলারেট এনার্জির কোশলগত উপদেষ্টা পিটার হাসও প্রফেসর ইউনূসের সাথে তার সরকারী বাসভবন যমুনায় গিয়েদেখা করেন।