রাজধানীর শাহবাগে আন্দোলনরত প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। এতে অন্তত শতাধিক শিক্ষক আহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার বিকেলে এ ঘটনা ঘটে। আহতদেরকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ১০ম গ্রেডে বেতনসহ তিন দফা দাবিতে ‘কলম বিসর্জন কর্মসূচি’ পালন করতে শাহবাগে অবস্থান নিতে গেলে প্রাথমিকের শিক্ষকদের ওপর সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এরআগে দুপুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন শেষে ‘কলম বিসর্জন কর্মসূচি’র ঘোষণা দেন শিক্ষকরা।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক জানান, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ১২০ জন শিক্ষক আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে এসেছেন। অনেকের জরুরি বিভাগে চিকিৎসা চলছে। আবার কিছু শিক্ষক চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন।
এরপর তিন দফা দাবিতে তারা শাহবাগের দিকে যাত্রা শুরু করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পরিস্থিতি উত্তপ্ত হলে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জ করে শিক্ষকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে অনেক শিক্ষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আশ্রয় নেন। শিক্ষকদের দাবিগুলো হলো-সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১০ম গ্রেডে উন্নীতকরণ, ১০ ও ১৬ বছর চাকরি পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড সংক্রান্ত জটিলতার স্থায়ী সমাধান এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা প্রদান।
কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি শামছুদ্দিন মাসুদ বলেন, আমাদের সচিব, উপদেষ্টা তাদের কাছে হয়তো কলম নেই, তাই সহকারী শিক্ষকদের প্রজ্ঞাপনে তারা সই করতে পারছেন না। আমরা তাদের উদ্দেশে আজ কলম সমর্পণ করব, যাতে তারা সহকারী শিক্ষকদের দশম গ্রেডসহ তিন দফা বাস্তবায়ন করেন।
অবস্থান কর্মসূচিতে আরও রয়েছেন-বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (কাসেম-শাহীন) সভাপতি প্রধান শিক্ষক আবুল কাসেম, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (শাহিন-লিপি) সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি, বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির অন্যতম সমন্বয়ক মোহাম্মদ আনোয়ার উল্যা এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রাথমিক শিক্ষকরা। তারা জানান, পুলিশের উপ-পরিদর্শক, নার্স, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, ইউনিয়ন পরিষদ সচিব, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও ব্যক্তিগত কর্মকর্তারা দশম গ্রেডে বেতন-ভাতা পান। সর্বোচ্চ ডিগ্রি নিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা দীর্ঘদিন লড়াই করেও ১১তম গ্রেড পাননি। তাই এখন দশম গ্রেড নির্ধারণসহ তিন দফা দাবি আদায়ে মাঠে রয়েছেন তারা।
শিক্ষকরা বলেন, কয়েক দফা আন্দোলনের পর প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ১১তম গ্রেড বাস্তবায়নের আশ্বাস দেয়। সে অনুযায়ী গত ৭ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা পাঠায়। অর্থ মন্ত্রণালয় তা বাস্তবায়ন না করে পাঠায় নবগঠিত পে-কমিশনে। কিন্তু দুই মাস পার হলেও দাবি বাস্তবায়ন না হওয়ায় শিক্ষকরা পে-কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে পে-কমিশন জানিয়ে দেয়, শিক্ষকদের গ্রেড পরিবর্তনের কাজ পে-কমিশনের এখতিয়ারভুক্ত নয়, এটা সার্ভিস কমিশনের কাজ। পে-কমিশনের অপারগতার পর শিক্ষকরা আবারও তাদের দাবি দশম গ্রেডে ফিরে যান এবং তা বাস্তবায়নে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৬৫ হাজার ৫৬৭টি এবং শিক্ষক সংখ্যা প্রায় ৩ লাখ ৮৪ হাজার। গত ২৪ এপ্রিল প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১১তম থেকে ১০ম এবং ১৩তম থেকে ১২তম গ্রেডে উন্নীত করার উদ্যোগ নেয়। তবে এতে সহকারী শিক্ষকরা বঞ্চিত হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।
অন্যদিকে, প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের আরেক অংশ ‘প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ’-এর ব্যানারে একাদশ গ্রেডে বেতন, উচ্চতর গ্রেডের জটিলতা নিরসন ও শতভাগ পদোন্নতির দাবিতে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা দিয়েছে। তাদের দাবি মানা না হলে ২৩ ও ২৪ নভেম্বর অর্ধদিবস কর্মবিরতি, ২৫ ও ২৬ নভেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং ২৭ নভেম্বর প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সামনে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি। এ ছাড়া ১১ ডিসেম্বরের মধ্যে দাবি বাস্তবায়নে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে পরীক্ষা বর্জন ও আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে তারা।