স্টাফ রিপোর্টার
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার আগেই একজন সম্ভাব্য প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি দুষ্কৃতকারীদের গুলিতে গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন। গতকাল রোববার জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট উপলক্ষে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করে নির্বাচন কমিশন। বৈঠকে সন্ত্রাসী হামলা ও নাশকতার চেষ্টা কঠোর হাতে দমনের নির্দেশ দিয়েছে ইসি।
বৈঠকের শুরুতে তিনি বলেন, এই ঘটনাটা আমার কাছে মনে হয়েছেÑ আমার মাথার ওপর বাজ পড়েছে। আমি আগের দিন তফসিল ঘোষণা করলাম, আর পরের দিনই এমন একটি ঘটনা ঘটল। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট উপলক্ষে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনা এবং প্রয়োজনীয় করণীয় নির্ধারণে গতকাল রোববার বিকেল ৪টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সভাপতিত্বে নির্বাচন কমিশনের সভাকক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এর আগে ইসি সচিবালয়ের উপ-সচিব (নির্বাচন পরিচালনা-২ অধিশাখা) মোহাম্মদ মনির হোসেন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে জানানো হয়, ১১ ডিসেম্বর তফসিল ঘোষণার পর উদ্ভূত সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত হওয়া এবং গৃহীতব্য কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করতেই এ সভা ডাকা হয়েছে।
নির্বাচন যথাসময়ে হবে, বানচালের চেষ্টা ব্যর্থ হবে : ইসি সানাউল্লাহ
নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের বলেছেন, সন্ত্রাসী হামলা ও নাশকতার চেষ্টায় কঠোর হাতে দমনের নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেই সঙ্গে বিদ্যমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছে ইসি।
তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে এবং নির্বাচন বানচালের যেকোনো চেষ্টা কঠোর হস্তে দমন করা হবে। ‘ডেভিল হান্ট’ চলাকালে গ্রেপ্তার হওয়া বেশিরভাগ অভিযুক্ত কারামুক্ত হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, যারা নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করবে তারা ব্যর্থ হবেন।
নির্বাচন কমিশনার জানান, সম্প্রতি ওসমান হাদির ওপর চোরাগোপ্তা হামলা এবং দুটি নির্বাচন অফিসে আগুন লাগানোর চেষ্টার মতো ঘটনা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সামনেও চোরাগোপ্তা হামলার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। কঠোর হস্তে এগুলো দমন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নেওয়া পদক্ষেপে সন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার, অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারে অভিযান চালাতে বলা হয়েছে। সব বাহিনীর গোয়েন্দারা নিজেদের মধ্যে তথ্য সমন্বয় করবেন। সীমান্তে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।
বিশেষভাবে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে সানাউল্লাহ বলেন, সবাইকে পাশের মানুষটি নিয়ে সতর্ক থাকতে হবে। কোনো নাশকতাকারী যেন উৎসাহিত না হয়, সেই বার্তা কমিশনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে।
ইসি আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ বলেন, ওসমান হাদীর উপর হামলা করে একটি ভীতির পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে। তাদের উদ্দেশ্য ছিল ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি করা। তাদেরকে সফল হতে দেওয়া হবে না।
তিনি আরও বলেন, সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা সখ্যতা গড়ে তুলে নাশকতা ঘটাতে পারে। যাদের ‘ডেভিল হান্টে’ ধরা হয়েছিল, তাদের বড় অংশ জামিন পেয়েছে, যাদের অতীত ও ক্রিমিনাল রেকর্ড আছে। একইসঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলো একে অপরকে দোষারোপ করে থাকে। এই সুযোগে সন্ত্রাসীরা যেন পার পেয়ে না যায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে না যায়, সেদিকে নজর রাখতে বলা হয়েছে।
প্রচারণার সামগ্রী অপসারণের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচন প্রচারণার সামগ্রী অপসারণ না করলে রিটার্নিং কর্মকর্তা ব্যবস্থা নেবেন। এ বিষয়ে পরিপত্র জারি করা হয়েছে।
সম্ভাব্য প্রার্থীদের অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, অপতথ্য শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব না। তবে প্রার্থীরা কোনো অবস্থাতেই অস্ত্র বহন করতে পারবেন না।