ঘুষ চাওয়ার বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে জানানোর কারণে মারধরের শিকার হয়েছেন ঢাকা ওয়াসার এক কর্মচারী। বৃহস্পতিবার দুপুরে ওয়াসা কার্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত এ কর্মচারীকে ঢাকা মেডিক্যাল হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। মারধরের ঘটনায় ওয়াসায় শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার পরের দুইদিন অফিস বন্ধ থাকায় এ নিয়ে তেমন প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। আজ রোববার হামলার দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করার কথা রয়েছে। এই ঘটনায় ভিকটিম আদালতে মামলা করবেন বলে জানিয়েছেন। মারধরের শিকার এম কামাল হোসেন ওয়াসার জোন-৭ এ এপিও হিসেবে কাজ করতেন। দৈনিক সংগ্রামের এ প্রতিবেদকের কাছে তিনি জানান, গত প্রায় ৮ বছর ধরে তিনি সাময়িক বরখাস্ত ছিলেন। তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ নিয়ে ৭ বার তদন্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৬ বার তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন। ওয়াসার সমালোচিত সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খানের বিরাগভাজন হবার কারণে নির্দোষ প্রমাণিত হয়েও নানা অজুহাতে তাকে চাকরীতে যোগদান করতে দেয়া হয়নি।
ভিকটিম জানান, ছাত্র জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ১৮ আগস্ট তিনি চাকরিতে যোগদানের জন্য ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর আবেদন করেন। ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দপ্তর থেকে আবেদনটি শৃঙ্খলা বিভাগে পাঠিয়ে এ বিষয়ে মতামত চাওয়া। কামাল হোসেন বলেন, আবেদনটি শৃঙ্খলা বিভাগের সহকারি সচিব রফিকুল ইসলামের কাছে ছিল। আবেদনের পর গত প্রায় আট মাস ধরে তিনি ফাইলটি উপস্থাপনের জন্য তার সাথে যোগাযোগ করছেন। কিন্তু তিনি সেটি উপস্থাপন করছেন না। গত বৃহস্পতিবারও তিনি ফাইলটির আফডেট সম্পর্কে তার কাছে জানতে চান। এসময় সহকারি সচিব রফিকুল ইসলাম তাকে (কামাল হোসেন) জানান, ফাইলটি উপস্থাপন করতে হলে উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ডি এস আলমগীর হোসেনকে টাকা দিতে হবে। আলমগীল হোসেন জানিয়েছেন, টাকা ছাড়া তিনি ফাইলটিতে সুপারিশ করবেন না।
হামলার শিকার কামাল হোসেন আরও বলেন, একথা শোনার পর তিনি ডি এস আলমগীর হোসেনের কাছে যান এবং টাকা চাওয়ার বিষয়টি অবহিত করেন। এই কথা শোনে ডিএস আলমগীর হোসেন শৃঙ্খলা বিভাগের সহকারি সচিব রফিকুল ইসলামকে ডাকেন এবং টাকা চাওয়ার বিষয়টি জানতে চান। এটা নিয়ে কামাল হোসেনের সাথে রুমের মধ্যে তার কথা কাটাকাটি হয়। এর মধ্যে রফিকুল ইসলাম উত্তেজিত হয়ে ডিএস আলমগীর হোসেনের সামনেই কামাল হোসেনকে এলোপাতাড়ি কিল ঘুষি লাথি মারতে থাকেন। এরপর ফোন করে কিছু বহিরাগত লোককে ডেকে আনেন। এক পর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। পরে আশপাশের রুম থেকে অন্য স্টাফরা গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। কামাল হোসেন মারধরের দৃষ্টান্তমূলক বিচার দাবি করে এ প্রতিবেদককে বলেন, আমার একটি ছেলে প্রতিবন্ধী। আমি কয়েকটা বছর মানবেতর জীবনযাপন করছি। সাবেক এমডি তাকসিম এ খান ব্যক্তিগতভাবে আমাকে পছন্দ করতেন না বলে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হবার পরও আমাকে চাকরিতে ঢুকতে দেয়নি। তিনি বলেন, আমি এই হামলার বিচার চাই। তিনি বলেন, সরকারের সার্ভিস রুল অনুযায়ী কেউ কারো গায়ে হাত তুলতে পারেন না। এভাবে আমাকে নির্দয়ভাবে মারা হলো, আমি এর বিচার চাই। প্রয়োজনে ন্যায় বিচারের জন্য আমি আদালতে যাবো। মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে শৃঙ্খলা বিভাগের সহকারি সচিব রফিকুল ইসলাম বলেন, এটি সত্য নয়। আমাদের মধ্যে ভুল বুঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে। এটা অফিশিয়াল বিষয়। ফাইল উপস্থাপনের জন্য টাকা চাওয়ার বিষয়টিও তিনি অস্বীকার করেন।
জানা গেছে, রফিকুল ইসলামের বাড়ি বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ এলাকায়। মেহেন্দিগঞ্জ এর সাবেক এমপি শাহবাগে বিহঙ্গ বাসে পেট্রোল বোমা দিয়ে বিহঙ্গ বাস পোড়ানোর সাথে জড়িত বলে আলোচিত সাবেক এমপি পঙ্কজ দেবনাথ এর খুব কাছের লোক। গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই চাকরি পান তিনি। অভিযোগ রয়েছে, তিনি বহুল সমালোচিত ও দুর্নীতিবাজ সাবেক এমডি প্রকোশলী তাকসিম খানের বিশ্বস্ত গোয়েন্দা হিসেবে কাজ করতেন। হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএস আলমগীল হোসেন ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে এ প্রতিবেদককে বলেন, মারধরের ঘটনাটি সত্য। রফিক সাহেব এটা মোটেও ঠিক করেননি।