* বড় বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাদা বসবেন প্রধান উপদেষ্টা

* বিনিয়োগকারীরা মতবিনিময় করবেন রাজনৈতিক দলের সাথে

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) আয়োজনে আজ সোমবার থেকে চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫ শুরু হচ্ছে। রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে আয়োজিত সম্মেলনে অন্তত ৪০টি দেশের কয়েকশত ব্যবসায়ী বিনিয়োগকারী অংশ নিচ্ছে। আয়োজকরা বলছেন, এবারের সম্মেলনে নতুন এক বাংলাদেশকে তুলে ধরা হবে বিনিয়োগকারীদের সামনে। এজন্য বাস্তবসম্মত নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। এরমধ্যে রয়েছে বিনিয়োগকারীদের সরাসরি বিনিয়োগস্থলে নিয়ে যাওয়া একে অপরের সাথে নিবিড়ভাবে কথা বলাসহ সম্ভাবনার নানাদিক নিয়ে প্রেজেন্টেশন। থাকছে ভবিষ্যৎ ক্ষমতায় যেতে পারে এমন রাজনৈতিকদলগুলোর সাথে বিনিয়োগকারীদের মতবিনিময়ের ব্যবস্থা। এছাড়া সম্মেলনে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের মধ্যে পাঁচজনকে অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হবে। এর মধ্যে একজনকে বাংলাদেশী সিটিজেন অফার করা হবে।

গতকাল রোববার রাজধানীর বেইলি রোডের ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিক সম্মেলন করে এসব কথা বলেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। এসময় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, উপ-প্রেসসচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার ও অপূর্ব জাহাঙ্গীর ও সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

সামিটের মূল লক্ষ্য উদ্দেশ্য বাংলাদেশের বিনিয়োগ সম্ভাবনা তুলে ধরা, জুলাই বিপ্লব-পরবর্তী অর্থনৈতিক সংস্কার প্রদর্শন এবং দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ সংযোগ তৈরি করা। এছাড়াও বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করার পাশাপাশি দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরা।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয় এবারের সম্মেলনে পাঁচ জন বিনিয়োগকারীকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সম্মাননা দেওয়া হবে। পাশাপাশি মার্কিন মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (নাসা) সঙ্গে একটি বেসমারিক চুক্তি হতে পারে। মূল অনুষ্ঠানে বিদেশি বিনিয়োগকারী এবং স্থানীয় বিনিয়োগকারীর কথা শুনা হবে। অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বক্তৃতা করবেন সম্মেলনে। উদ্দেশ্য স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে একটা বড় বিনিয়োগ আসে আমাদের এখানে। তারা সরকারের কাছে কী প্রত্যাশা করেন, সেটা আমরা শুনবো।

চৌধুরী আশিক মাহমুদ জানান, প্রধান অতিথির উপস্থিতিতে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে পাঁচটি পুরস্কার দেওয়া হবে। একজন স্থানীয় বিনিয়োগকারী, একজন বিদেশী বিনিয়োগকারী, পরিবেশগত, সামাজিক এবং শাসন (ইএসজি) ক্ষেত্রে আমরা একটি সংস্থাকে সম্মাননা দেবো, একটি পুরষ্কার দেওয়া হবে উদ্ভাবনীর জন্য। এছাড়া বাংলাদেশে বিনিয়োগের সঙ্গে দীর্ঘ অনেক বছর ধরে অনেক বিদেশী নাগরিক আছেন এরকম একজনকে আমরা সম্মানিত নাগরিকত্বের অফার করবো।

তিনি আরও বলেন, সম্মেলনে অনেকগুলো সমঝোতা স্মারক সই হবে। বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে। আইএলও’র সঙ্গে শ্রম বিষয়ে একটা দ্বিপাক্ষিক চুক্তি সই করার চিন্তা করছি। আমরা নাসা’র সঙ্গে একটি চুক্তি সই করার কথা চিন্তা করছি। বেসমারিক মহাকাশ অনুসন্ধান নিয়ে এই চুক্তি সই হতে পারে। চুক্তি সই হওয়ার পর আমরা এর বিস্তারিত জানাতে পারবো।

চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, আমরা এত পরিমাণ সাড়া পেয়েছি যে, স্পেস দিতে পারছি না। তাই শুধুমাত্র বিদেশী যারা অতিথি আসবেন এবং ফ্লাই করে আসবেন তাদের জন্য জায়গা করে দিচ্ছি। এজন্য আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। কারণ দেশীয় সবাইকে স্পেস দিতে পারছি না। তবে এটা আমাদের জন্য বড় অর্জন। বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, নতুন বাংলাদেশে বিনিয়োগকারীদের আমরা নতুন করে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করব। দশ বছর পরে বাংলাদেশ কী রকম হবে সেটি আমরা তুলে ধরব।

চার দিনের সিডিউল জানিয়ে বিডা চেয়ারম্যান বলেন, সম্মেলনের প্রথম দিন আজ দুটি ট্র্যাকে অনুষ্ঠানটি হবে। প্রথম ট্র্যাকে ৬০ জনের বেশি বিদেশী বিনিয়োগকারীকে নিয়ে একটি স্পেশাল ফ্লাইট চট্টগ্রাম যাবে। সেখান থেকে কোরিয়ান ইপিজেড ও মিরসরাইতে স্পেশাল ইকোনমিক জোন পরিদর্শন শেষে রাতে ফিরে আসবেন তারা। তিনি জানান, যারা যাচ্ছেন তারা হলেন সেই সব উদ্যোক্তা যারা মনে করছেন তাদের সেখানে একটি ফ্যাক্টরি স্থাপন করতে হবে। তাদের জায়গা জমি লাগবে। তাদের জন্য আমরা কী ধরনের সাপোর্ট সিস্টেম তৈরি করতে পারি তা তারা সরেজমিন দেখবেন। রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে স্টার্টআপ কানেক্ট নামে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানসূচি রয়েছে। সেখানে যেসব আরলি সেটজ স্টার্টআপ এবং ভেঞ্চার বিনিয়োগকারী আসছেন তাদের মধ্যে ম্যাচ মেকিং ইভেন্ট, নেটওয়ার্কিং ও প্যানেল হবে। সারাদিন স্টার্টআপ ইভেন্টকে ফোকাস করা হবে।

দ্বিতীয় দিন আগামিকাল মঙ্গলবার প্রথম বেলায় বিনিয়োগকারীদের নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে যেখানে জাপানি ইকোনমিক জোন রয়েছে। সেখানে সরেজমিন পরিদর্শন করবেন। তারা সেখানকার ফ্যাক্টরির মালিকদের সঙ্গে কথা বলে কী ধরনের কর্মকাণ্ড হচ্ছে তা বুঝে তাদের বিনিয়োগের জন্য কতটুকু সুযোগ-সুবিধা রয়েছে তা দেখবেন। দ্বিতীয় ধাপে বিশ্বব্যাংক ও আইএলও-এর সঙ্গে কিছু এঙ্গেজমেন্ট আছে। তাদের এফডিআই রিলেটেড কিছু ব্যাপারে আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যতে বিনিয়োগের জন্য কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যায় সে ব্যাপারে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। ৯ এপ্রিল বুধবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হবে। সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটুকু ছাড়া সারাদিনই একাধিক (৩/৪টা) প্যারালাল অনুষ্ঠান চলবে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কিছু বিনিয়োগকারীকে পুরস্কৃত করা হবে উল্লেখ করে তিনি আরও জানান, অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা উপস্থিত থাকবেন। একইসঙ্গে কিছু সংখ্যক বিদেশী বিনিয়োগকারী বক্তব্য দেবেন। সেখান থেকে আমরা বোঝার চেষ্টা করব আর কী করলে বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য বেটার ডেস্টিনেশন হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে। পরবর্তীতে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে ইয়ুথ এন্টারপ্রেনারশিপ মেলার আয়োজন থাকবে। উপদেষ্টা সেখানে আরলি স্টেজ কোম্পানির সঙ্গে কথা বলবেন। দ্বিতীয় ধাপে রিনিউয়েবল এনার্জি নিয়ে কথা হবে। বেশ কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হবে। তারা বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিলে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। সেই সাথে প্রধান উপদেষ্টার বাসায় কয়েকটি দেশের ব্যবসায়ীদের সাথে আলাদা আলাদা দ্বি-পক্ষীয় বৈঠকে বসবেন প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস।

আশিক চৌধুরী বলেন, আপনারা নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন বিনিয়োগের ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টা খুবই আগ্রহী। তিনি নিজেই চেয়েছিলেন বিদেশী বড় বড় বিনিয়োগকারী যারা আসবেন (চীন, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া থেকে) তাদের সঙ্গে পৃথক দ্বি-পাক্ষিক বৈঠক করবেন।

এক প্রশ্নের জবাবে বিডা চেয়ারম্যান জানান, এবারের সম্মেলনে বিএনপি, জামায়াত এবং জাতীয় নাগরিক পার্টিকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। তাদের প্রতিনিধি দল সেখানে থাকবেন এবং বিনিয়োগকারীদের সাথে মতবিনিময়ে অংশ নিবেন। তিনি বলেন বিনিয়োগকারীরা জানতে চায় রাজনৈতিক সরকার ক্ষমতায় এলে তাদের অবস্থান কি হবে। এজন্য রাজনৈতিকদলগুলোকে বিনিয়োগ সম্মেলনে রাখা হবে।