উত্তরায় বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার সময় পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগর একাই ছিলেন। গতকাল সোমবার দুপুরে দুর্ঘটনার পর সিএমএইচের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন তৌকির। বিকেল পৌনে চারটার দিকে সেখানেই তিনি মারা যান বলে নিশ্চিত করেছে আইএসপিআর। চীনা কোম্পানি চেংদু এয়ারক্রাফট কর্পোরেশনের তৈরি এফ-৭ বিজিআই বিমানে প্রশিক্ষণের শেষ মুহূর্তেই প্রাণ হারালেন তৌকির ইসলাম। জানা গেছে, নিহত তৌকির পাবনা ক্যাডেট কলেজের ৩৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলেন। মাত্রা ছয়মাস আগে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন তিনি। ক’দিন পরেই স্ত্রীকে নিয়ে হানিমুনে যাওয়ার কথা ছিল। আর আজকের দিনটি হতে পারত ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকিরের জীবনের সবচেয়ে সুখের দিন। আজ জীবনের প্রথম সলো ফ্লাইট ছিল তার। তৌকির সফলভাবে এই ফ্লাইটটি সম্পন্ন করতে পারবেন সেই অপেক্ষায় ছিলেন তার সহকর্মীরা। এমনকি তৌকিরের জীবনের এই বিশেষ দিনটি উদযাপনের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তারা।

প্রশিক্ষণ চলাকালে একজন শিক্ষানবিস যখন যথেষ্ট দক্ষ হয়ে উঠেন এবং তার প্রশিক্ষক মনে করেন, তিনি এককভাবে বিমান চালাতে প্রস্তুত, তখনই তাকে প্রথম সলো ফ্লাইটে পাঠানো হয়। এই ফ্লাইটে পাইলটকে সম্পূর্ণ একা সব সিদ্ধান্ত নিতে হয়-রানওয়ে নির্বাচন, টেকঅফ, ইন-ফ্লাইট ম্যানুভারিং এবং ল্যান্ডিংসহ সবকিছু তার নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে। এ বিষয়ে বিমানবাহিনীর এক কর্মকর্তা বলেন, সলো ফ্লাইট একজন পাইলটের জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন। সফল ফ্লাইট শেষে সাধারণত জলখেলা হয় ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়। আজ (সোমবার) রাতে তৌকিরের জন্য এসব আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল। কে জানত, মাইলফলক অর্জনের এই দিনটিই তৌকিরের জীবনের শেষ দিন হবে।

এদিকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সাবেক স্কোয়াড্রন লিডার মুহাম্মদ ওয়াহিদ উন নবী তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘ফাইটার বিমানে ছিলেন ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির। সদ্য বিবাহিত। আগামী মাসে প্রমোশন। তৌকিরের বডি পাওয়া গিয়েছে দুর্ঘটনা থেকে বেশ দূরে। শরীরের বেশ ক্ষতি হয়েছে, একটা পা সম্ভবত ভেঙে গেছে, কান দিয়ে রক্ত বের হয়ে যাচ্ছে আর শরীরে পালস আছে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। যদি বেঁচে যায় তাহলে দুর্ঘটনার পুরো কারণ জানতে পারবেন।’ দীর্ঘ প্রশিক্ষণ শেষে আজকেই প্রথমবারের মতো একা ফ্লাই করেছিল তৌকির। তিনি জানান, ‘ট্রেনিং শেষে সে একা ফ্লাই করার কোয়ালিফাই হয়েছিল তিনদিন আগে। নিয়ম অনুযায়ী, যেদিন কোয়ালিফাই হবে সেদিনই প্রথম সলো ফ্লাই করা। তবে দুদিন আবহাওয়া অনুকূলে ছিল না এবং পরদিন ছুটি থাকায় একা ফ্লাই করার অনুমতি পায়নি তৌকির ইসলাম।’ তিনদিন গ্যাপ হওয়ায় আজ (২১ জুলাই) তৌকিরের ইনস্ট্রাক্টর প্রথমেই তাকে নিয়ে আকাশে উঠেন এবং কিছুক্ষণ প্রাকটিস করান। এরপরে ইনস্ট্রাক্টর ডুয়েল সিট থেকে নেমে যান। ট্রেনিং ফ্লাইটে কোনো ভুল না করায় তৌকিরকে একা ছেড়ে দেন তার স্বপ্ন পূরণের জন্য। তৌকিরের টেক্সি (রানওয়েতে যাওয়ার আগে যতটুকু পথ যেতে হয়) টেকঅফ সবই ছিল ভালো। তিনি আরও জানান, প্রথম একা ফ্লাই করার দিনে পুরো স্কোয়াড্রন সাজ সাজ রব থাকে ওয়েল কাম করতে, ইনস্ট্রাক্টর রানওয়ের পাশে সার্বক্ষণিক থাকে ওয়ারলেস নিয়ে যদি কোন সাহায্য বা গাইডেন্স লাগে। তৌকির টেকঅফ করার ৫-৭ মিনিটের মাথায় ইনষ্ট্রাক্টর দেখতে পান এক ধরনের অস্বাভাবিক আচরণ। ফাইটার জেটটি বিমান বন্দরে উত্তর দিক থেকে ঘুরে দক্ষিণ দিকে উচ্চতা হারাচ্ছে। প্রশিক্ষক ওয়ারলেসে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হচ্ছিলেন। মুহাম্মদ ওয়াহিদ উন নবী বলেন, ‘কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে যা হবার তাই হলো, ফাইটার জেটটি এমন অবস্থায় ছিল যে নিশ্চিত বিমান বন্দরের ইন্টারন্যাশনাল পার্কিং বরাবর পড়ার কথা। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তৌকির কিছু একটা করেছে হয়তো যা বিমানটিকে অন্য দিকে ডাইরেক্ট করেছে। বিমানবাহিনীর সাবেক এই পাইলটের ধারণা, ফাইটার জেটটিতে কমপ্লিট কন্ট্রোল লস বা পাওয়ার লস (ইঞ্জিন ফেইল) এবং রেডিও ফেলুইর একসঙ্গে হয়েছে। সাধারণত, নতুন ফাইটার পাইলটদের একা প্রথম ফ্লাইটে সবচেয়ে ভালো বিমানটি দেওয়া হয়। কিন্তু তবুও কেন হলো বোঝা যাচ্ছে না। বিমান বাহিনীর ইতিহাসে প্রথম একা ফ্লাইটে এটাই প্রথম দুর্ঘটনা।

অন্যদিকে বিমানবাহিনীর এক কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, তৌকিরের আজ প্রথম একক মিশন ছিল, একটু আগে তিনি ডুয়াল ফ্লাইট পরিচালনা করেছেন। এয়ারক্রাফট টেকঅফ করার একটুখানি যাওয়ার পর এয়ারক্রাফট কোন রিঅ্যাক্ট করছিল না। তারপরে এয়ারক্রাফট স্টল করে, তখন তার কন্ট্রোলে ছিল না। মোবাইল টাওয়ার থেকে তাকে ইজেক্ট করতে বলা হচ্ছিল, কিন্তু এত লোয়ার ফ্লাইয়িং হচ্ছিল যে, ওই সময়ে ইজেক্ট করা আসলে পসিবলও ছিল না। তিনি চেষ্টা করছিলেন যে, অন্যভাবে কিছু করা যায় কি না। কিন্তু দুর্ভাগ্য। তিনি আরও বলেন, ফ্ল্যাইটটি দিয়াবাড়ির ফাঁকা স্থানে ফেলতে চেয়েছিলেন তৌকির ইসলাম। এজন্য বেশ কিছু সময় ধরে চেষ্টাও চালাচ্ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পারেননি; জেটটি বাউন্স করে মাইলস্টোন এলাকায় গিয়ে আছড়ে পড়ে। শুরুতে তৌকির বেঁচে ছিলেন; তার পালস পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু এখন তিনি আর নেই। এর আগে তাকে হেলিকপ্টার এমআই ১৭-তে করে রাজধানীর একটি সিএমএইচ হাসপাতালের ভর্তি করা হয়েছিল।

এক প্রত্যক্ষদর্শী এক শিক্ষার্থী জানান, ওইখানে বলতে গেলে সবাই পুড়ে গেছে, সবাই ঝলসে গেছে। আমরা ভিতরে গেছিলাম, আগুনের কারণে কাউকে বের করিতে পারি নাই। খুব খারাপ অবস্থা। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ উড়োজাহাজ ভেঙে পড়ার পর আশপাশ থেকে ছুটে এসেছিলেন অনেকে। তারা বলছেন, ঘটনার পর তারা স্কুল মাঠে একজনকে প্যারাসুট দিয়ে নামতে দেখেছেন। ভয়াল আগুনের জন্য তারা শুরুতে কাউকে উদ্ধার করতে পারেননি। উড়োজাহাজটি আছড়ে পড়ে একটি ভবনের মুখে, যেখানে শিশু ও অভিভাবকদের দাঁড়ানোর জায়গা ছিল। আর ভবনটিতে বেশ কয়েকটি শ্রেণিকক্ষ রয়েছে, যেখানে তৃতীয় থেকে অষ্টম শ্রেণির ইংরেজি মাধ্যমের ক্লাস হতো। ঘটনার আগে সবে সেখানে ক্লাস শেষ হয়েছিল। একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী কাওসার বলেন, একটা ফাইটার প্লেন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আমাদের জুনিয়র ক্যাম্পাস- এখানে ক্লাস ফাইভ থেকে এইটের ছেলেপেলেরা পড়াশোনা করে, ঠিক সেইখানে প্লেনটা পড়ছে ভাই। আমাদের ছোটো ভাইয়েরা ছিল, সবাই ছিল ভাই। ওইখানে বলতে গেলে সবাই পুড়ে গেছে, সবাই ঝলসে গেছে। আমরা ভিতরে গেছিলাম, আগুনের কারণে কাউকে বের করিতে পারি নাই। খুব খারাপ অবস্থা। একাদশের শিক্ষার্থী আজমাইন বলেন, ক্লাসে ছিলেন, শব্দ পেয়ে নিচে নেমে দেখেন আগুন। দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদমান তানভীর বলেন, আমরা যখন ক্লাসে ছিলাম, তখন বিস্ফোরণের মতো একটা শব্দ হইছে। আমরা কেউ বুঝতে পারিনি প্রথমে। তারপর হঠাৎ যখন সবাই দৌড়াদৌড়ি, ছোটাছুটি করল- তারপর স্যার আসলেন। ১ নম্বর বিল্ডিংয়ে বিমানের কিছু অংশ হয়তো ব্লাস্ট হইছে। বিল্ডিংয়ের সামনে পড়ছে, যার কারণে পুরো বিল্ডিংয়ে আগুন ধরায়ে গেছে। তারপর আমরা বের হইছি। তারপর দেখি ফায়ার সার্ভিস। পাশেই ফায়ার সার্ভিস আর পাশেই আর্মি ক্যাম্পও ছিল। যার কারণে সবাই দ্রুত চলে আসছে। আগুন নিভাইতে বেশি সময় লাগেনি, কিন্তু ভেতরে অনেক মানুষ ছিল। ছোট বাচ্চারা ছিল। ওদেরকে বের করতে অনেক সময় লাগে। স্কুলের পাশেই বাসা লতিফা বেগমের। তিনি বলেন, তার ভাতিজি ক্লাস সিক্সে পড়ে। ক্লাসে শেষে সবে সে বাসায় ফেরে। আর অন্য বাচ্চারা কোচিংয়ের জন্য ওই ভবনের সামনে অপেক্ষা করছিল। আর তখনই ঘটনা ঘটে। ঘটনার সময় অনেকেই ছুটে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। তাদের কয়েকজন বিকালে স্কুলের ঘটনা নিয়ে নিজেদের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছিলেন। তাদের একজন জহিরুল বলেন, আমার কাছে মনে হয়েছে, উড়োজাহাজটা মাঠের মাঝখানে আছড়ে পড়ে। তারপর ছিচড়ে ভবনে গিয়ে ধাক্কা খায়। সেখানেই আগুন ধরে যায়। স্কুল ভবন থেকে ১০০ গজের মধ্যে মোহাম্মদ জইমত আলীর এক্সক্যাভেটর মেরামতের গ্যারেজ। চালক আপন আহমেদ কাজ করছিলেন। উড়োজাহাজ খুব নিচু দিয়ে উঠতে দেখে তারা দুজনে কিছুটা অবাক হয়েছিলেন। কয়েক মুহূর্ত পরেই বিকট শব্দ শুনে তারা প্রথমে ছুটে যান পাশের মেট্রোরেলের ডিপোর দিকে। পরে তারা দেখেন, স্কুল থেকে আগুন বের হচ্ছে। মো: জইমত আলী বলেন, আমরা গিয়ে দেখি, একজন প্যারাসুট নিয়া নামছে। আর বহু বাচ্চা আর তাদের গার্ডিয়ানরা আগুনে পুড়ছে। সবাই ধরাধরি করে তাদের সেখান থেকে সরায়ে আনার চেষ্টা করে। কিন্তু আগুনের তাপ ছিল সাংঘাতিক। স্কুলের ওই বিল্ডিংটার ভেতরে ঢোকার কোনো উপায় ছিল না। ওটার ভেতরে যারা ছিল, তাদের কী অবস্থা তা জানি না। ভেকু চালক আপন আহমেদ বলেন, এক জায়গায় দেখি ১০-১৫ টা বাচ্চা ডলা হয়ে পইড়ে রইছে। তাদের উদ্ধার করার কোনো উপায় আমাদের ছিল না। এসব বাচ্চাদের বের করা হয়েছে, তারাও সব পুড়ে গেছে। জামা-কাপড় ব্যাগ সব পোড়া। আপন বলেন, কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের লোকজন চলে আসে। মাইলস্টোন স্কুল থেকে সবে বাসায় ফিরেছিলেন দশম শ্রেণির ছাত্র শান্ত। তাদের বাসা স্কুল থেকে দুই মিনিটের হাঁটা পথ। তিনি বলেন, হঠাৎ বিকট শব্দ শুনে তিনি ঘরের বারান্দায় গিয়ে দেখেন, স্কুল থেকে ধোঁয়া বেরোচ্ছে। এরপর দৌড় দিয়ে ঘটনাস্থলে এসে দেখি, স্কুলের আগে যেটা হোস্টেল ছিল, পরে সেটা ইংলিশ মিডিয়াম শাখা বানানো হয়েছে- তার ঠিক সামনে একটি বিমান ক্রাশ করেছে। দাউ দাউ আগুন বের হচ্ছে। শান্ত বলেন, ওই ভবনে ১১ থেকে ১২টি ক্লাসরুম রয়েছে। ক্লাস থ্রি থেকে ক্লাস এইট পর্যন্ত ইংলিশ মিডিয়ামের ক্লাস হয় এখানে। প্রতি ক্লাসে ৩০ থেকে ৩৫ জন করে শিক্ষার্থী রয়েছে বলে শান্ত ধারণা দেন। শিক্ষার্থীদের কী অবস্থা হয়েছে, জানতে চাইলে শান্ত বলেন, আমরা অনেক ছাত্রকে বের করেছি, যাদের জামা-কাপড়, হাত-পা সব পুড়ে গেছে। যারা ভেতরে ছিলেন, তাদের বের হওয়ার কোনো উপায় ছিল না।

তার মৃত্যুর খবরে রাজশাহীর উপশহরে তার বাড়িতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে বাড়ির পরিবেশ। দুপুরে রাজশাহীর উপশহরের ৩ নম্বর সেক্টরে পাইলট সাগরের বাড়িতে স্বজনদের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে আছে বলে জানা গেছে। পরিবারের সদস্যদের একমাত্র আশা ছিল সাগরের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎতা এক নিমিষেই থেমে গেল। পরিবারের সদস্যদের ঢাকায় নেওয়ার ব্যবস্থা করেছে বিমানবাহিনী। নিহত পাইলটের মেজ চাচা মতিউর রহমান জানান, ‘আমরা কিছুক্ষণ আগে তার মৃত্যুর খবর পেয়েছি। বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে একটি হেলিকপ্টার পাঠানো হয়েছে। ওই হেলিকপ্টারে সাগরের বাবা তোহরুল ইসলাম, মা সালেহা খাতুন ও ছোট বোন বৃষ্টি ঢাকায় গেছেন।’ তিনি আরও জানান, ‘সাগর কিছুদিন আগেই রাজশাহীতে এসেছিল। মাত্র ছয় মাস আগে তার বিয়ে হয়।

বিধ্বস্ত বিমানের পাইলট তৌকির ইসলাম নিহত

রাজশাহী ব্যুরো: রাজধানীর উত্তরায় বিমানবাহিনীর বিধ্বস্ত প্রশিক্ষণ বিমানটির নিহত পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলাম সাগর রাজশাহীর কৃতি সন্তান। তাঁর মৃত্যুতে পরিবারের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে।

নিহত পাইলট তৌকির ইসলাম সাগরের জন্ম চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার চককীর্তি ইউনিয়নের কৃষ্ণচন্দ্রপুর গ্রামে। পিতা মো. তোহুরুল ইসলাম ও মাতা সালেহা খাতুন। তবে তিনি ছোট বেলা থেকেই রাজশাহী নগরীর উপশহরের ৩ নম্বর সেক্টরে পরিবাবের সাথে বসবাস করতেন। ক্লাশ সেভেন পর্যন্ত রাজশাহী সরকারী ল্যাবরেটরি স্কুল ও পরে পাবনা ক্যাডেট কলেজে পড়ালেখা করেন। এরপর তিনি বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যোগদান করেন। কিছুদিন আগে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন এবং তাঁর স্ত্রী একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তারা এক ভাই ও এক বোন। বোন মেডিকেলের ছাত্রী। তৌকিরের শিক্ষক হাবিবুর রহমান জানান, তৌকির খুবই মেধাবী ছাত্র ছিল। বিশেষ করে ইংরেজি ও গণিতে খুব ভালো ছিল। ব্যক্তিগত আচার-ব্যবহারও ভালো ছিল।

গতকাল সোমবার দুপুরে বিমান বাহিনীর যে প্রশিক্ষণ বিমানটি বিধ্বস্ত হয় তৌকির ইসলাম সাগর তার একমাত্র পাইলট ছিলেন। সফল উড্ডনের পর বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার সময় তৌকির প্যারাসূটে অবতরণ করতে পারলেও তার শেষ রক্ষা হয়নি। তিনি গতকাল বিকেলে সিএমএইচ-এ মারা যান। গতকাল বিকেলে র‌্যাবের একটি টিম রাজশাহীর উপশহরের বাড়ি থেকে তৌকিরের পিতা ও মাতাকে রাজশাহী বিমান বন্দরে নিয়ে যায় বিমানে তাদেরকে ঢাকা নিয়ে যাওয়ার জন্য। তবে তখনো তাদের ছেলের অবস্থা সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি।