২০২৪ সালের ১৯ জুলাই রাজধানীর উত্তরা-৭ নম্বর সেক্টরের হাউজবিল্ডিং এলাকায় রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলীবিদ্ধ হয়ে শাহাদাতবরণ করেন রিদোয়ান শরীফ রিয়াদ, যিনি ‘জয়’ নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন। গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গুলীতে জয়ের মাথায় গুলী লাগে। তিনি সেখানেই মৃত্যুবরণ করেন।
২০০৪ সালের ৪ আগস্ট জন্মগ্রহণকারী জয় বেড়ে উঠেছেন টঙ্গীর কামারপাড়া এলাকায়। তার পৈতৃক নিবাস নওগাঁ জেলার বদলগাছি উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামে হলেও পুরো শৈশব ও কৈশোর কেটেছে শহরতলির টঙ্গীতেই। বাবা আহম্মদ উল্লাহ বাদল একজন ইলেকট্রিশিয়ান এবং মা রুপালী আক্তার বিউটি একজন গৃহিণী, যিনি সেলাইয়ের কাজ করতেন পারিবারিক অর্থনৈতিক সহায়তার জন্য।
জয় কামারপাড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং বঙ্গবন্ধু কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর টঙ্গী সরকারি কলেজে ইংরেজি সাহিত্যে সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হন। কৈশোর থেকেই তিনি ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধে দৃঢ় ছিলেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কুরআন পাঠ প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পুরস্কৃতও হন।
২৪ এর ১৯ জুলাই দেশব্যাপী 'কমপ্লিট শাটডাউন' কর্মসূচির অংশ হিসেবে জয় বিকেল ৩টার দিকে ঘর থেকে বের হন। মা তাকে মসজিদে দানের জন্য কিছু টাকা দিয়েছিলেন, যা তিনি ব্যয় করেন আন্দোলনে আহত ছাত্রদের জন্য ওষুধ কিনে। আগেরদিন, ১৮ জুলাই, এই এলাকাতেই পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের হামলায় বহু ছাত্র আহত হন এবং প্রয়োজনীয় প্রাথমিক চিকিৎসার অভাব প্রকট হয়ে ওঠে।
জয় বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজের সামনে আহতদের সেবায় নিযুক্ত ছিলেন এবং আন্দোলনকারীদের ব্যাগ পাহারায় রাখেন। বিকেলে মায়ের সঙ্গে মোবাইলে তার শেষ কথা হয়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে গাজীপুরের সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বাধীন সশস্ত্র সন্ত্রাসীদের গুলীতে জয়ের মাথায় গুলী লাগে। সাথে থাকা তার এক বন্ধু পেটে গুলীবিদ্ধ হলেও বেঁচে যান, কিন্তু জয় ঘটনাস্থলেই শহীদ হন।
অত্যন্ত প্রতিকূল পরিস্থিতি ও হুমকি থাকা সত্ত্বেও শহীদ জয়ের জানাযা পরদিন সকালে সম্পন্ন হয় এবং তাকে কামারপাড়া কবরস্থানে সমাহিত করা হয়, শহীদ মুগ্ধর পাশে।
পরিবার ও প্রতিবেশীদের মতে, জয় ছিলেন নির্লোভ, ভদ্র ও দায়িত্বশীল। কোনো বদঅভ্যাসে তিনি যুক্ত ছিলেন না। রমযানে সব রোজা রাখতেন এবং কিশোর বয়স থেকেই আত্মনিয়ন্ত্রণ ও মায়ের প্রতি সেবাশ্রদ্ধায় অনন্য ছিলেন। তার বন্ধুরা বলেন, শহীদ মুগ্ধ রাজনীতির আলোচনায় থাকলেও শহীদ জয় এখনও আড়ালেই আছেন। অথচ আবার যদি যুদ্ধ হতো, জয় অবশ্যই প্রথম সারির একজন যোদ্ধা হতেন।
জয়ের স্বপ্ন ছিল একটি এতিমখানা প্রতিষ্ঠা করা, গ্রামের বাড়িতে একটি মসজিদ নির্মাণ এবং জনপথ উন্নয়নে রাস্তা তৈরির মতো মানবকল্যাণমুখী কাজ করা।