কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট আকাশে ওড়ার সময় উড়োজাহাজের পেছনের চাকা খুলে পড়েছে। ড্যাশ-৮ ৪০০ মডেলের উড়োজাহাজটি গতকাল শুক্রবার দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে যাত্রী নিয়ে আকাশে উড়াল দেয়। রানওয়ে থেকে আকাশে ওড়ার পরপরই বিমানের পেছনের একটি চাকা খুলে নিচে পড়ে যায়। বিমানের বিজি ৪৩৬ ফ্লাইটে নারী ও শিশুসহ যাত্রী ছিলেন ৭১ জন। বিমানের চাকা খুলে যাওয়ার ঘটনা এটিই প্রথম নয়। এর আগে একাধিকবার বিমানের চাকা খুলে গিয়েছিল।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস জানিয়েছে, চাকা খুলে পড়লেও শুক্রবার দুপুর ২টা ১৭ মিনিটে উড়োজাহাজটি ‘নিরাপদে’ শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেছে । এ ঘটনা তদন্তে বিমানের চিফ অব সেইফটি ক্যাপ্টেন এনাম তালুকদারকে প্রধান করে ৩ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিমান।
কক্সবাজার বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক গোলাম মোর্তজা জানান, রানওয়ে থেকে আকাশে ওড়ার পরপরই বিমানের পেছনের একটি চাকা খুলে নিচে পড়ে যায়। পরে চাকাটি কক্সবাজার শহরের সমিতি পাড়া এলাকা থেকে সংগ্রহ করা হয়।
উড্ডয়নের পরপরই পাইলট ঢাকার এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলকে (এটিসি) জানান, তিনি জরুরি অবতরণ করতে চাইছেন। পাইলটের বার্তা পাওয়ার পর শাহজালাল বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। নিয়ম অনুযায়ী ফায়ার সার্ভিসকেও প্রস্তুত রাখা হয়। রানওয়ের পাশে প্রস্তুত রাখা হয় ফায়ার সার্ভিস, ইঞ্জিনিয়ারিং টিম, মেডিকেল ইউনিটসহ সব। বিমানে থাকা যাত্রীরা তখন জানতেন না কী ঘটতে যাচ্ছে। শেষ মুহূর্তে ভারসাম্য হারানোর আশঙ্কা থাকলেও অভিজ্ঞ পাইলট দক্ষতায় নামিয়ে ফেলেন বিমানটিকে। ফ্লাইটটি পরিচালনা করেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পাইলট ক্যাপ্টেন বিল্লাহ।
বিমানের ফ্লাইট সেইফটি বিভাগ বলছে, পেছনের একটি চাকা ছাড়াও উড়োজাহাজ ল্যান্ড করানো সম্ভব। তবে সেজন্য পাইলটের দক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) এবিএম রওশন কবীর জানান, ফ্লাইট চলাকালে চাকা খুলে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পাইলট প্রথম চেষ্টাতেই ফ্লাইটটি নিরাপদে অবতরণে সক্ষম হয়েছেন। যাত্রীরা সবাই নিরাপদ ও অক্ষত আছেন। সবাইকে প্লেন থেকে নামানো হয়েছে। আমাদের প্রকৌশলী টিম তদারকি করছে। এর কারণ খতিয়ে দেখতে তদন্ত করা হবে।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এক বার্তায় জানায়, গতকাল দুপুর ১টা ২৫ মিনিটে কক্সবাজার থেকে ছেড়ে আসা বিমানের ফ্লাইট বিজি-৪৩৬, যাতে ৭১ জন যাত্রী ছিলেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসার পথে বাম পাশের ল্যান্ডিং গিয়ার চাকার সমস্যার পরিলক্ষিত হলে বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে কন্ট্রোল টাওয়ারকে জানানো হয়। তাৎক্ষণিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
বিমানের বিশেষজ্ঞদের মতে, পেছনের এক চাকাতেও নিরাপদে অবতরণ সম্ভব। তবে এটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এরকম পরিস্থিতিতে পাইলটের সিদ্ধান্ত ও ঠান্ডা মাথার দক্ষতা প্রাণ বাঁচানোর সবচেয়ে বড় উপাদান।
এর আগে ২০১৭ সালের ২৫ অক্টোবর নীলফামারীর সৈয়দপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটের চাকা খুলে পড়ে যায়। এতে বিমানটি জরুরি অবতরণ করেছে। সেবারও ভয়াবহ দুর্ঘটনা থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছেন ফ্লাইটটিতে থাকা ৬৬ জন বিমানযাত্রী। সেদিন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-৪৯৪ ফ্লাইটটি ৬৬ জন যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা করে। ফ্লাইটটি উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই সৈয়দপুরের রানওয়েতে চাকার অংশ পড়ে থাকতে দেখেন বিমানবন্দরের নিরাপত্তাকর্মীরা। তবে ঝুঁকির মুখে ফ্লাইটটি সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে শাহজালাল বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করা হয়েছে।