এক সময় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ছিলেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান; তবে এখন তার নাম সংস্থার আসামীর তালিকায়ও উঠতে পারে। সাবেক হয়ে যাওয়া জাতীয় ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার ও সাবেক সংসদ সদস্য সাকিবের বিরুদ্ধে নানা ‘অনিয়ম-দুর্নীতির’ অভিযোগ অনুসন্ধান পর্যায়ে আছে বলে জানিয়েছেন দুদক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। গতকাল রোববার ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়সহ সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।

সাকিব আল হাসান একসময় দুদকের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর ছিলেন। এখনো তিনি আপনাদের আইকন কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের আশঙ্কা, এমনও হতে পারে যে তিনি দুদকের আসামীও হতে পারেন। তবে বিষয়টি এখনো অনুসন্ধান পর্যায়ে আছে, অনুসন্ধানের পরে বিস্তারিত বলা সম্ভব হবে। এখনো বিস্তারিত বলা যাচ্ছে না।

সাকিব এখনো দুদকের অ্যাম্বাসেডর আছেন কি না, এক সাংবাদিকের প্রশ্নে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, দুদকের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে ২০১৮ সালে সাকিব আল হাসানের সঙ্গে চুক্তি হয় সংস্থাটির। এ ছাড়া হটলাইন-১০৬ উদ্বোধনকালেও তার সঙ্গে কাজ করে দুদক। বিভিন্ন ‘অনিয়মের’ অভিযোগ উঠলে ২০২২ সালে সাকিবকে আর ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর না রাখার কথা জানিয়েছিল দুদক।

গত ৫ অগাস্ট অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত করা হয়; এই সংসদে ক্রিকেটার সাকিব আওয়ামী লীগের টিকেটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। সাকিবের বিরুদ্ধে নানা ‘অনিয়ম-দুর্নীতির’ অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গত বছরের ২৮ অগাস্ট দুদকে আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মিলহানুর রহমান নাওমী।

আবেদনে সাকিবের বিরুদ্ধে ‘শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, নিষিদ্ধ জুয়ার ব্যবসা ও জুয়া প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ততা, স্বর্ণ চোরাচালানে সম্পৃক্ততা, প্রতারণার মাধ্যমে কাঁকড়া ব্যবসায়ীদের অর্থ আত্মসাৎ, ক্রিকেট খেলায় দুর্নীতি ও নির্বাচনী হলফনামায় সম্পদের তথ্য গোপনের’ অভিযোগ আনা হয়। গত বছরের ৮ নভেম্বর সাকিব আল হাসানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার কথা জানায় আর্থিক খাতের গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের দিন ঢাকার আদাবরে গুলীবিদ্ধ হয়ে দুই দিন পর পোশাক কর্মী রুবেল মারা যাওয়ার ঘটনায় করা হত্যা মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আসামী হয়েছেন সাকিবও।

জাতীয় ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য গত বছরের ২৮ আগস্ট দুদকে একটি আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মিলহানুর রহমান নাওমী। আবেদনে সাকিবের বিরুদ্ধে শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, নিষিদ্ধ জুয়ার ব্যবসা ও জুয়া প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্পৃক্ততা, স্বর্ণ চোরাচালানে সম্পৃক্ততা, প্রতারণার মাধ্যমে কাঁকড়া ব্যবসায়ীদের অর্থ আত্মসাৎ, ক্রিকেট খেলায় দুর্নীতি ও নির্বাচনী হলফনামায় সম্পদের তথ্য গোপনের অভিযোগ আনা হয়। আর গত বছরের ৮ নভেম্বর সাকিব আল হাসানের ব্যাংক হিসাব জব্দ করার কথা জানায় ব্যাংকের আর্থিক গোয়েন্দা বিভাগ বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।

গত বছরের ৫ আগস্ট আদাবরে পোশাক কারখানার কর্মী মো. রুবেল হত্যার ঘটনায় তার বাবা রফিকুল ইসলামের করা মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আরও অনেকের সঙ্গে সাবেক সংসদ সদস্য সাকিবকে আসামী করা হয়। এছাড়া চেক প্রতারণার এক মামলায় তার সম্পদ ক্রোকের আদেশ দেয় আদালত। মামলার বাদীর আবেদনে গত ২৪ মার্চ ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম জিয়াদুর রহমান ওই আদেশ দেন।

ক্রিকেটার সাকিব নানা ব্যবসায় জড়িত থাকলেও তার সম্পদের পরিমাণ কত, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার সময় সাকিব তার সম্পদের যে বিবরণ দিয়েছিলেন, তাতে দেখা যায় তার বার্ষিক গড় আয় ৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। অস্থাবর সম্পদ হিসাবে ব্যাংকে তার জমানো অর্থের পরিমাণ ১১ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। এছাড়া ২৪ হাজার ২৬১ ডলার বৈদেশিক মুদ্রাও তার হাতে রয়েছে। পুঁজিবাজারে ৪৩ কোটি ৬৩ লাখ ৯৬ হাজার ৮৭৪ টাকা বিনিয়োগ থাকার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। ২৫ ভরি সোনা এবং আসবাবপত্র ও ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী মিলিয়ে ১৩ লাখ টাকার সম্পত্তির কথাও তিনি জানিয়েছিলেন। পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যাংকে ৩১ কোটি ৯৮ লাখ টাকা ঋণের তথ্যও নির্বাচন কমিশনকে দিয়েছিলেন এই ক্রিকেটার-ব্যবসায়ী।