ঈদের আগে গার্মেন্টস শিল্পে যাতে নতুন করে কোন অসন্তোষ তৈরী না হয় সেজন্য সর্তক রয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে যে সব গার্মেন্টেস বেতন বোনাস দেয়নি তাদের বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে শুরু করেছে। এর মধ্যে ১২জন গার্মেন্টস মালিকের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এসব কারখানার মালিকরা বেতন বোনাস দেয়নি বলে সরকারের কাছে খবর রয়েছে। এছাড়া বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বাকী গার্মেন্টগুলোর প্রতি নজর বাড়নো হয়েছে। বৃহস্পতিবারের মধ্যে বেতন ভাতা না দিলে শ্রম আইন অনুযায়ী এদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেবে এমনটা জানা গেছে।

এদিকে গার্মেন্টস সেক্টর যাতে অশান্ত না হয় সেদিকে নজর রাখছে শিল্প পুলিশ। ইতোমধ্যে গার্মেন্টস এরিয়া, নারায়ণগঞ্জ, সাভার, গাজীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা। প্রাথমিকভাবে, শিল্প পুলিশ ঈদের আগে শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ না করার ঝুঁকিতে থাকা ২০৩টি কারখানার তালিকা তৈরি করেছিল, যা বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএও অতিরিক্তভাবে যাচাই করেছিল।

এদিকে বেতন-ভাতার দাবিতে প্রায়ই সাভার ও গাজীপুর নারায়ণগঞ্জে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা যায়। দাবি আদায়ে পোশাক শ্রমিকরা গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। তবে আসছে ঈদকে সামনে রেখে এ বিক্ষোভের মাত্রা অনেকগুণ বেড়েছে। বকেয়া বেতন ও ঈদ বোনাসের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন শ্রমিকরা। নেমে আসছেন রাস্তায়। ফলে ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষ পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে। সাভার এবং গাজীপুরে প্রতিদিনই কোনো না কোনো কারখানায় আন্দোলন হচ্ছে।

বিজিএমইএ সূত্রে জানা যায়, সারা দেশে ২ হাজার ১০৭টি পোশাক শিল্পকারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৯৪০টি কারখানা শনিবার পর্যন্ত ফেব্রুয়ারি মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ করে দিয়েছে। তবে ১৬৭টি কারখানা এখনও ফেব্রুয়ারি মাসের বেতন পরিশোধ করতে পারেনি। এর মধ্যে ৪০ কারখানা বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে ।

সম্প্রতি বিকেএমইএ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমের সই করা এক চিঠিতে বলা হয়, এক কঠিন সময় পার করছে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো। তৈরি পোশাক শিল্পে বিরাজ করছে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি। ফলে কার্যাদেশ বাড়লেও বিভিন্ন কারখানায় নগদ অর্থের সংকট দেখা দিয়েছে। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে বেতন-বোনাসসহ অন্যান্য ভাতা পরিশোধ করতে না পারলে আবার শ্রম অসন্তোষ দেখা দেওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় স্বার্থান্বেষী মহল পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তোলার সুযোগ পাবে। তাই নগদ সহায়তা বাবদ সাত হাজার কোটি টাকা ছাড় করা না হলে রপ্তানি খাতে মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।

কর্মসংস্থান সচিব এ এইচ এম শফিকুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, পোশাক রপ্তানিকারকদের জন্য বকেয়া নগদ প্রণোদনা থেকে সরকার প্রায় ২ হাজার ৩২৫ কোটি টাকা বিতরণ করেছে। যার ফলে আরও মূল্যায়নের পর এই সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কম হবে বলে মনে করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, সরকার পেমেন্ট সমস্যাগুলো কার্যকরভাবে পরিচালনা করার জন্য বিজিএমইএ, বিকেএমইএ এবং অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় করছে।

বিজিএমইএ প্রশাসক আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে ৯৮টি সদস্য কারখানাকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল, কিন্তু পুনর্মূল্যায়নের পর মাত্র পাঁচ থেকে ১০টি কারখানা গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এছাড়াও তারল্য ঘাটতি মোকাবিলায়, বিজিএমইএ অনাদায়ী ক্যাশ ইনসেনটিভ থেকে তহবিল সংগ্রহ করেছে। সরকার ২ হাজার কোটি টাকা বিতরণ করেছে এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য আরও ৩২৫ কোটি টাকা বরাদ্দের কাজ চলছে। তবে, প্রায় সাতটি কারখানা ঈদের আগে কেবল বোনাস দিতে পারবে, ছুটির পর পর্যন্ত বেতন প্রদান স্থগিত থাকবে, বলেন আনোয়ার হোসেন।

শিল্প পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন বলেন, ঈদের আগে কারখানাগুলোতে বকেয়া বেতন পরিস্থিতি আগের বছরের তুলনায় খারাপ, বিশেষ করে যেসব সংস্থা বিজিএমইএ এবং বিকেএমইএর সদস্য নয় সেগুলো বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তিনি আরও বলেন, পুলিশ বিজিএমইএ এবং বিকেএমইয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে সহযোগিতা করে পেমেন্ট সংকট সমাধানের চেষ্টা করছে।

এদিকে সরকারের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে শ্রমিকদের বেতন বোনাস পরিশোধ না করায় ১২টি কারখানার মালিকের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সরকার। এসব কারখানার মালিকরা শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ না করা পর্যন্ত বিদেশ যেতে পারবেন না।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে নৌ পরিবহন এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন এ তথ্য জানিয়েছেন।

শ্রম উপদেষ্টা বলেন, স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে ইমিগ্রেশনে তাদের বিষয়ে তথ্য দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার থেকেই এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হয়েছে।

তিনি বলেন, ২৭ মার্চের মধ্যে পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করার কথা। কিন্তু ১২টি কারখানা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে পারছে না বলে জানিয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি কারখানায় অসন্তোষ চলছে।

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যারা বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে পারছে না তাদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। আমরা শ্রম আইন অনুযায়ী এদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেবো- বলেন উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন।

কোন কোন কারখানার মালিকদের বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে? সাংবাদিকরা এ নিয়ে প্রশ্ন করলে কারখানাগুলোর নাম বলা যাবে না বলে জানান উপদেষ্টা।

১২ কারখানার বাইরে অন্য কারখানা শ্রমিকদের বেতন পরিশোধ না করলে তাদের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে? এমন প্রশ্নের উত্তরে এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ২৭ মার্চের মধ্যে সব কারখানার শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করতে হবে। ২৭ মার্চের পর আমরা বিষয়টি পর্যালোচনা করবো। যদি আরও কোনো প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের বেতন-বোনাস পরিশোধ করতে না পারে তাদের বিরুদ্ধেও সর্বোচ্চ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।