প্রায় পাঁচ মাস আগে রাজধানীর বিয়াম ফাউন্ডেশনে যে বিস্ফোরণ দুইজনের মৃত্যু ঘটিয়েছিল, সেই ঘটনা পরিকল্পিত ছিল বলে উঠে এসেছে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে। পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার আব্দুর রহমান গতকাল সোমবার ঢাকার কল্যাণপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বিয়ামের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলামের পরিকল্পনায় গুরুপূর্ণ নথি পোড়াতে ওই ঘটনা ঘটানো হয়। যে দুজনকে ব্যবহার করা হয়েছিল, আগুনে তাদের মৃত্যু হয়। তিনি বলেন, জাহিদুল ইসলাম এবং তার সহযোগী আশরাফুল ইসলামকে গ্রেপ্তারের পর ঘটনার রহস্য উন্মোচিত হয়।
গত ২৫ জুলাই ঢাকা এবং কুড়িগ্রাম থেকে তাদের দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আশরাফুল একজন চাকরিচ্যুত সেনা সদস্য। প্রযুক্তির মাধ্যমে আশরাফুলকে শনাক্ত করার তথ্য তুলে ধরে পিবিআই কর্মকর্তা রহমান বলেন, সিসিটিভি ভিডিওতে মাস্ক পরা যাকে দেখা গেছে সেই আশরাফুল। তার মাস্ক পরা ছবি এআইকে দিয়ে মাস্কবিহীন ছবি চাওয়া হয়। পরে বেশ কিছু ছবি পাওয়া গেলে সেখান থেকে কয়েকটি নিয়ে অনুসন্ধান করে আশরাফুলকে চিহ্নিত করা হয়। তিনি বলেন, আশরাফুল প্রায়ই বিয়ামে জাহিদের সঙ্গে দেখা করতে যেতেন। সেই সুবাদে অফিসের অনেকের সঙ্গে তার সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে ইস্কাটনে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট (বিয়াম) ফাউন্ডেশনের ৫০৪ নম্বর কক্ষে বিস্ফোরণ ঘটে। ওই কক্ষটি ব্যবহৃত হত বিসিএস (প্রশাসন) বহুমুখী সমবায় সমিতির কার্যালয় হিসেবে। আগুনে সমিতির দলিলপত্র, আসবাবপত্র, এসিসহ বিভিন্ন মালামাল পুড়ে যায়। ঘটনার সময় দগ্ধ অফিস সহকারী মো. আব্দুল মালেক খান (৪০) ঘটনাস্থলেই মারা যান। সমিতির সাধারণ সম্পাদকের গাড়িচালক মো. ফারুক মীর (৩৪) পাঁচ দিন পর জাতীয় বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ফায়ার সার্ভিস ঘটনাটিকে এসি বিস্ফোরণ থেকে সৃষ্ট দুর্ঘটনা বললেও বিসিএস (প্রশাসন) বহুমুখী সমবায় সমিতি লিমিটেডের দাবি ছিল, এটি নাশকতা। সমিতির সাধারণ সম্পাদক অবসরপ্রাপ্ত সচিব মো. মশিউর রহমান পরে অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হাতিরঝিল থানায় মামলা করেন। তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশ তখন বলেছিল, তারা ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ভিডিও দেখে এক যুবককে সন্দেহ করছে, তাকে ধরতে পারলেই বিষয়টি স্পষ্ট হবে। পরে সেই মামলার তদন্তভার পায় পিবিআই। তদন্তে পাওয়া তথ্যের বরাতে পিবিআই কর্মকর্তা আব্দুর রহমান বলেন, সমিতির কার্যালয়ে নথি পোড়াতে মালেক ও ফারুককে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। আর আশরাফুলকে বলা হয়েছিল সুইচ বন্ধ করে দিতে। তদন্তে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে, মালেক ও ফারুক পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে বের হওয়ার আগেই বিস্ফোরণ ঘটে এবং তাদের মৃত্যু হয়।
আব্দুর রহমান বলেন, ১০ থেকে ১২ লাখ টাকায় আশরাফুলের সঙ্গে জাহিদের চুক্তি হয় এবং অফিস সহকারী, গাড়ি চালকসহ চারজন মিলে তারা এই পরিকল্পনা করে বলে অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া গেছে। গ্রেপ্তার দুজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন জানিয়ে পিবিআই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তারের আগ পর্যন্ত জাহিদ চাকরিতে ছিলেন এবং আমাদের তদন্তের প্রয়োজনে যখন বিয়ামে যাওয়া হত তখন তার সকল তথ্য সে আশরাফুলকে পাঠাত। নিজেদের সন্দেহের আড়ালে রাখতে আশরাফুল সিঙ্গাপুরের এবং জাহিদ যুক্তরাষ্ট্রের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর ব্যবহার করতেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।