পর্দা নামলো চারদিনের বিনিয়োগ সম্মেলনের। একধরনের সন্তুষ্টি নিয়েই ফিরে যাচ্ছেন বিদেশীরা। আয়োজকরা বলছেন, বিনিয়োগ সম্মেলন আপাতত সফল হয়েছে। বিনিয়োগের পাইপলাইন তৈরি হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যমে বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করার প্রচেষ্টা চালানো হবে।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিডার হেড অব বিজনেস ডেভেলপমেন্ট নাহিয়ান রহমান গতকাল বৃহস্পতিবার হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন, নতুন বিনিয়োগের ক্ষেত্রে জটিলতা এড়িয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা হয়েছে। এটি সম্মেলনে আসা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জানানো হয়েছে। এই উন্নতিতে বিনিয়োগকারীরা সন্তুষ্ট।
তিনি জানান, আগের বছরের সম্মেলন ও এবারের সম্মেলনের পার্থক্য হলো, এবার রেজিস্ট্রেশনের পর ফলো আপ করা হবে। বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছেন। বিনিয়োগকারীদের পরবর্তী সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে কথা বলা হবে। আগে সম্মেলনের পর এমন ফলোআপ করা হয়নি।
বিনিয়োগকারীরা এবার বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে কোনো সমস্যার কথা বলেছেন কি না, জানতে চাইলে নাহিয়ান রহমান বলেন, এবার সে ধরনের সুযোগ ছিল না। আগে ৬০/৬৫ জন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। বিনিয়োগ সম্পর্কিত কাজগুলো সম্পাদন করতে তাদের দপ্তরে দীর্ঘ সময় ঘুরতে হতো। এখন সেসব সমস্যা নেই, দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিনিয়োগের যাবতীয় কাজ সম্পন্ন হবে। ভিয়েতনামের তুলনায় বাংলাদেশের সস্তা শ্রম থাকলেও বেশি মুনাফা করা যায় না। এমন ইস্যু সম্মেলনে এসেছে। সে বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের কী জবাব দিলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে নাহিয়ান বলেন, ভিয়েতনামে উচ্চ মূল্যের সিন্থেটিক ফেব্রিকের পোশাক উৎপাদন করা হয়, এ কারণে মুনাফাও বেশি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ উচ্চ মূল্যের সিন্থেটিকের পোশাক উৎপাদন হয় না, এ কারণে মুনাফা কম। দুয়েকজন বিনিয়োগকারী বিনিয়োাগ শুরু করেছেন, বাংলাদেশেও হবে।
তিনি আরও বলেন, বৈদেশিক বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের পরিবর্তন হলেও বিনিয়োাগকারীদের কোনো সমস্যায় পড়তে হবে না। আগের অবস্থা বহাল থাকবে। বিষয়টি নিশ্চিত করতে আগামীতে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসবে- এমন সম্ভাব্য রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে কথা বলেছেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিডার নির্বাহী সদস্য শাহ মোহাম্মদ মাহবুব, প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেসসচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।
এদিকে কোরিয়ান ইপিজেডের প্রতিষ্ঠাতা কিয়াক সুং বলেছেন, সঠিক কৌশল ও সংস্কারের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বে পোশাক রপ্তানিতে এক নম্বর স্থানে উঠতে প্রস্তুত। বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলনের অধিবেশনে মূল বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি একথা বলেন। ‘টেক্সটাইল ও পোশাক’ বিষয়ক অধিবেশনে ‘বিনিয়োগকারীদের দৃষ্টিকোণ থেকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি অধিবেশনে উপস্থাপনা করেন কোরিয়ান ইপিজেডের প্রতিষ্ঠাতা।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বর্তমানে একক দেশ হিসেবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশের অবস্থান ধরে রেখেছে।’ কিয়াক সুং বলেন, শীর্ষস্থান অধিকারের লক্ষ্য অর্জনের জন্য বাংলাদেশকে প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি, শ্রমিকদের দক্ষতা উন্নত ও হাতে তৈরি সুতার জন্য নিজস্ব উৎপাদন সুবিধা স্থাপন করতে হবে।
তিনি নীতি সহায়তার গুরুত্ব ও বিপুল সংখ্যক বন্ডেড গুদামের প্রয়োজনীয়তার কথাও তুলে ধরেন।কিয়াক সুং আরও বলেন, ‘এগুলো কাঁচামালের দ্রুত প্রাপ্তি নিশ্চিত করবে, যার ফলে নির্মাতারা আরও দক্ষতার সঙ্গে পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি করতে পারবেন।’
সাম্প্রতিক বাণিজ্য উন্নয়নের বিষয়ে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প যুগের শুল্কনীতির তিন মাসের স্থগিতাদেশ কিছুটা স্বস্তি এনেছে। এই বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের সক্রিয় পদক্ষেপ অত্যন্ত প্রশংসনীয়।’ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে মূল্য সংযোজন উৎপাদনের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন কিয়াক সুং। তিনি সতর্ক করে বলেন, ‘আমাদের উচ্চমূল্যের পোশাক উৎপাদনের ওপর মনোযোগ দিতে হবে, অন্যথায় প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ব বাজারে টিকে থাকা ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠবে।’ বিজিএমইএ’র প্রশাসক ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেনও অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।