জুলাই-আগস্টে ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন সাভারের আশুলিয়ায় ছয় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলামসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ আমলে নিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে পলাতক আট আসামীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। এছাড়া গ্রেফতার আট আসামীকে শ্যোন অ্যারেস্ট দেখানো হয়েছে।

আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশ মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের গ্রেফতার করে পরবর্তী তারিখে আদালতে উপস্থিত করতে বলা হয়েছে। এ মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ১৩ জুলাই ঠিক করা হয়েছে।

গতকাল বুধবার ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অন্য সদস্যরা হলেন- অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর। আদালতে গতকাল রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন প্রসিকউটর গাজী এমএইচ তামিম।

পরে এ বিষয়ে প্রসিকউটর গাজী এমএইচ তামিম সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে গত ৫ আগস্ট আশুলিয়ায় সংঘটিত গণহত্যা ও ছয় লাশ পোড়ানোর মামলায় ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে পলাতক সাবেক এমপি সাইফুলসহ আটজনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, এ মামলায় ১৬ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, যাদের মধ্যে সাত আসামীকে আদালতে হাজির করা হয়। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলাম ও আশুলিয়ার আওয়ামী লীগ এবং যুবলীগ নেতৃবৃন্দ। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে আশুলিয়ায় ছয়জন নিরীহ যুবককে হত্যা করা হয় এবং পরে তাদের মরদেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়। তদন্তে উঠে আসে, এটি একটি পূর্বপরিকল্পিত ও পদ্ধতিগত মানবতাবিরোধী অপরাধ ছিল।

সম্পদ জব্দের কোনো আদেশ আছে কি না- এর জবাবে প্রসিকিউটর গাজী তামিম বলেন, মামলার শুরুর পর্যায়ে কোনো আসামীর সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার আবেদনের সুযোগ নেই। তবে রায়ের পর মামলায় ভিকটিমের প্রয়োজনে আসামীর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার বিধান রয়েছে।

শুনানিতে আরেক প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম বলেন, এই মামলাটি প্রমাণ করে যে, মানবতাবিরোধী অপরাধ যেখানেই হোক না কেন, আইনের আওতায় আনতেই হবে। অভিযুক্তদের বিচারের মুখোমুখি করার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল সর্বোচ্চ আন্তরিকতা ও আইনি পদ্ধতি অনুসরণ করছে।

ট্রাইব্যুনালে এ মামলায় ১১ আসামীর নাম উল্লেখ করেছে প্রসিকিউশন। তারা হলেন- সাবেক সংসদ সদস্য মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সাভার সার্কেলের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শহিদুল ইসলাম, ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফি, আশুলিয়া থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম সায়েদ (রনি), ঢাকা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরের সাবেক পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন, আশুলিয়া থানার সাবেক উপপরিদর্শক আবদুল মালেক, সাবেক উপপরিদর্শক আরাফাত উদ্দীন, সাবেক উপপরিদর্শক শেখ আবজালুল হক, সাবেক উপপরিদর্শক বিশ্বজিৎ সাহা, সাবেক উপপরিদর্শক কামরুল হাসান ও সাবেক কনস্টেবল মুকুল চোকদার। এই ১১ আসামীর মধ্যে আটজন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আছেন। এরমধ্যে আজ সাতজনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

গত বছরের ৫ আগস্ট সাভারের আশুলিয়ায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান ছয় তরুণ। এরপর পুলিশ ভ্যানে তাদের লাশ তুলে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। ওই সময় যারা শহীদ হয়েছেন তারা হলেন- সাজ্জাদ হোসেন (সজল), আস সাবুর, তানজীল মাহমুদ সুজয়, বায়েজিদ বুসতামি ও আবুল হোসেন। এছাড়া একজনের পরিচয় এখনো পাওয়া যায়নি (অজ্ঞাত)।

প্রসিকিউশন জানায়, নৃশংস এ ঘটনার সময় একজন জীবিত ছিলেন। কিন্তু তাকেও বাঁচতে দেননি তারা। পেট্রোল ঢেলে জীবন্ত মানুষকেই পুড়িয়ে মারা হয়। এ ঘটনায় ১১ সেপ্টেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ এনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়।