# মহানগরগুলোতে সিটি গভর্নমেন্ট # শালিসকে এডিআর কর্মকর্তার অধীনে এবং # এনজিওগুলোকে স্থানীয় সরকারের অধীনে রাখার প্রস্তাব

স্থানীয় সরকার বিভাগকে জনবান্ধব ও জবাবদিহিতার আওতায় আনতে ৫১টি সুপারিশ করেছে কমিশন। এর মধ্যে ইউনিয়ন উপজেলা ও জেলা পরিষদ এবং পৌরসভা ও সিটি কর্পোারেশনকে একটি আইনের আওতায় আনার কথা বলা হয়েছে। সেইসাথে এনজিওগুলোকে ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় আনা এবং কমিউনিটি ক্লিনিকের জনবলকে ইউনিয়ন পরিষদের জনবলে পরিণত করার সুপারিশ করা হয়েছে।

উপজেলা পর্যায়ে আদালত স্থাপনের আগ পর্যন্ত এডিআর কর্মকর্তার অধীনে শালিস ব্যবস্থা রাখার মত দেওয়া হয়েছে; যাতে এডিআর কর্মকর্তার কাছে আপিল করা যায়। অন্যদিকে পার্বত্য অঞ্চলের ইউনিয়ন পরিষদ ও পৌরসভাগুলোকে পাবর্ত্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে রাখার সুপারিশ করা হয়।

স্থানীয় সরকার বিভাগের সংস্কার কমিশনের সুপারিশগুলোর ব্যাখ্যা বলা হয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদ উপজেলা ও জেলা পরিষদ এবং পৌরসভা ও সিটি কর্পোারেশন, স্থানীয় সরকার বিভাগের ৫টি প্রতিষ্ঠানের আইনগুলো একীভূত করতে হবে। তাতে বলা হচ্ছে এ প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সংগঠনসমূহ অনেক বেশি গণতান্ত্রিক দক্ষ ও কার্যকর হবে। নির্বাচনী ব্যয় কমে আসবে। নির্বাচন পদ্ধতি সহজতর হবে এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।

এদিকে এনজিওগুলোকে স্থানীয় সরকারে নিয়ন্ত্রণে আনার সুপারিশ করা হয়েছে জনসংগঠন হিসেবে। সেজন্য সমবায় ও তৃণমূল সংগঠন যাতে সমন্বিতভাবে কাজ করতে পারে সেজন্য এনজিও বিষয়ক ব্যুরোকে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগে স্থানান্তর করার সুপারিশ করা হয়েছে। একইসাথে সমবায় আন্দোলনকে গতিশীল করতে সমবায় অধিদপ্তর ও বিআরডিবিকে একটি একক সংগঠনে রূপান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুপারিশ করা হয়।

এদিকে শালিসব্যবস্থাকে এডিআর অফিসারের তত্ত্বাবধানে ন্যস্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, উপজেলা পর্যায়ে পূর্ণাঙ্গ দেওয়ানী ও ফৌজদারি আদালত স্থাপন এবং বিকল্প বিরোধ নিস্পত্তির জন্য একজন সিনিয়র সহকারী জজ এর পদায়নের মাধ্যমে এডিআর আদালত স্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। শালিস ব্যবস্থাকে এডিআর অফিসারের তত্ত্বাবধানে ন্যস্ত করতে হবে। কোন সালিশে আপস মীমাংসা না হলে এডিআর অফিসার তার আপিল শুনবেন। যতদিন উপজেলা পর্যায়ে আদালত স্থাপন না হবে ততদিন গ্রাম আদালত ব্যবস্থা বহাল থাকবে।

সুপারিশে ফ্যাসিস্ট আমলে তৈরি করা কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে সমস্ত জনবল সেবা ও সরবরাহ ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হতে পারে বলে মত দিয়েছে কমিশন। স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোতে দ্বিগুণ বরাদ্দের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তিন পার্বত্য জেলার সব ইউনিয়ন পরিষদ উপজেলা পরিষদ ও পৌরসভাগুলোকে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করে এসব প্রতিষ্ঠানের বাজেট স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের নিকট হস্তান্তরের সুপারিশ করা হয়। ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর জন্য দ্বি-স্তর বিশিষ্ট মহানগর সরকার ( সিটি গভর্নমেন্ট) সৃষ্টি ও অন্য সিটিতে সিটি গর্ভনমেন্ট সৃষ্টির পরীক্ষা নিরীক্ষা করার সুপারিশ।

সব শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করার

সুপারিশ শ্রম সংস্কার কমিশনের

এদিকে সব শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে শ্রম সংস্কার কমিশন। দেশে আট কোটি শ্রমজীবী মানুষ আছেন। তার মধ্যে ৮৫ শতাংশ বা ৭ কোটি শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা নেই। শ্রমবিষয়ক সংস্কার কমিটি এই শ্রমিকদের আইনি সুরক্ষা নিশ্চিতের সুপারিশ করেছে। কর্মক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে বিশেষ সুপারিশ করেছে কমিশন। সেগুলো হলো, শ্রম আইনে মহিলা শব্দের পরিবর্তে নারী শব্দ ব্যবহার এবং কর্মক্ষেত্রে তুই/তুমি সম্বোধন বন্ধ করা।

গতকাল সোমবার প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের সুপারিশ সম্পর্কে সাংবাদিকদের অবহিত করেন প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দেশের শ্রমিকদের জন্য জাতীয় ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণের সুপারিশ করেছে কমিশন। লক্ষ্য হলো, কোনো শ্রমিক যেন তার চেয়ে কম মজুরি না পান, তা নিশ্চিত করা। সেই সঙ্গে শ্রমিকদের নিবন্ধন থেকে শুরু করে পরিচয়পত্র দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। সাম্প্রতিক শ্রমিক আন্দোলনে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে যেসব মামলা করা হয়েছে, সেসব মামলা দ্রুত প্রত্যাহার করার কথাও বলেছে কমিশন।

শ্রমিকদের সংগঠন করার অধিকার নিশ্চিত এবং তাদের দর-কষাকষি করার প্রক্রিয়া যেন আরও সহজ হয়, তা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি দূর করতে ২০০৯ সালের হাইকোর্টের নির্দেশনার আলোকে যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের সুপারিশ করেছে কমিশন। সেই সঙ্গে নারীদের মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাস করার কথা বলা হয়েছে, যে সুপারিশ অন্যান্য কমিশনও করেছে।

শ্রমিকদের কল্যাণে সর্বজনীন তহবিল করার সুপারিশ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে শ্রম আদালতসহ আপিল বিভাগের সর্বক্ষেত্রে যেন বাংলা প্রচলন করা হয়, তা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারী-পুরুষের সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব মোহাম্মদ শফিকুল আলম। গত সরকারের মন্ত্রীরা বিভিন্ন দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন, এ বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে শফিকুল আলম বলেন, অন্তর্র্বর্তী সরকার পলাতক মন্ত্রীদের ফিরিয়ে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে। এরপর যে সরকার ক্ষমতায় আসবে, তাদেরও নৈতিক দায়িত্ব হবে, এই প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়া।