ঈদযাত্রার তৃতীয় দিনেও রেল ও সড়কপথে কোনোরকম ভোগান্তি ছাড়াই রাজধানী ছাড়ছেন ঘরমুখো মানুষ। স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পেরে খুশি যাত্রীরাও। গতকাল বুধবার সকাল থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন কোনোরকম শিডিউল বিপর্যয় ছাড়াই সব কটি ট্রেন সময়মতো ছেড়ে গেছে। ঈদযাত্রার সার্বিক পরিস্থিতি ও কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে থেকে ঢাকা-ভৈরববাজার-ঢাকা রুটের নতুন এক জোড়া কমিউটার ট্রেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসেন রেলপথ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।

এ সময় তিনি বলেন, ঈদ এলে যে টিকিটের সংকট তৈরি হয় তা দূর করতে ট্রেনের সংখ্যা বাড়াতে হবে। রেলওয়ের দুর্নীতি ও অপচয় লোকসানের মূল কারণ মন্তব্য করে রেলপথ উপদেষ্টা বলেন, রেল খাতে দুর্নীতি এবং অপচয় বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে কাজ করছে অন্তর্বর্তী সরকার। এদিকে রেলপথের পাশাপাশি সড়কপথেও অনেকটা স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পেরে খুশি যাত্রীরা। সড়কে এখনও তেমন একটা যানজট না থাকায় বাসস্ট্যান্ড থেকে সময়মতো ছেড়ে যাচ্ছে দূরপাল্লার বাসগুলো।

এদিকে ঈদযাত্রার তৃতীয় দিনে ঢাকা থেকে ৬৯টি ট্রেন দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যায় বলে জানিয়েছেন ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মো. শাহাদাত হোসেন। এর মধ্যে আন্তঃনগর ৪৩টি এবং মেইল ও কমিউটার মিলিয়ে ২৬টি ট্রেন ঢাকা ছেড়ে যায় বলে জানান তিনি।

শাহাদাত হোসেন বলেন, ঈদযাত্রার তৃতীয় দিন। গতকাল বুধবার সবগুলো ট্রেন নির্দিষ্ট সময়ে ছেড়ে গেছে, শুধু তিতাস কমিউটার ৪৫ মিনিট দেরিতে ছেড়েছে। ট্রেনটি স্টেশনে আসতে দেরি করেছিল, এজন্য দেরি হয়েছে।

বেলা ১১টায় নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, নির্দিষ্ট সময়ে ছেড়ে যাচ্ছে ট্রেন। ট্রেন ছাড়ার দুই ঘণ্টা আগে স্ট্যান্ডিং টিকিট দেওয়া হচ্ছে। আজ থেকে বিশেষ ট্রেন চলবে। যাত্রীসেবায় প্রতিবারের মতো এবারও আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি আছে। স্টেশনের শুরু থেকে গন্তব্যে ট্রেনে পৌঁছানো পর্যন্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ভেরিফিকেশনের মাধ্যমে টিকিট চেকিং করা হচ্ছে।

এদিকে, এদিন সকালে স্টেশন এলাকায় অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ দেখা গেছে। পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে ঢাকা ছাড়ছেন বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ।

এদিকে আসন্ন ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছেন ঘরমুখো যাত্রীরা। সকালে যাত্রী কম থাকলেও বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে যাত্রীদের চাপ। বুধবার সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ও আশপাশের এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।

পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, দীর্ঘদিন ঈদের ছুটি থাকায় যাত্রীরা ধীরে ধীরে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করছেন। তাই পরিবহনে যাত্রীদের চাপ কম। তাদের প্রত্যাশা আগামী দুই একদিনের মধ্যে যাত্রীর চাপ কিছুটা বাড়তে পারে।

রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের গোল্ডেন লাইনের ম্যানেজার বলেন, সময়ের সাথে যাত্রীদের চাপ বেশি বাড়ছে। সকালে কিছুটা কম থাকলেও দুপুর নাগাদ এই চাপ আরও বাড়তে থাকে। সময় মতো গাড়ি ছাড়ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা অগ্রিম টিকিট বিক্রি করি না। গাড়ি কাউন্টারে পৌঁছালেই গাড়ি গন্তব্যে ছেড়ে যায়। রাস্তা একেবারে ফাঁকা যাত্রীদেরও ভোগান্তি নেই এবার। দক্ষিণ, পূর্ব অঞ্চলের বাস কাউন্টারগুলো যাত্রীর খোঁজে হাঁকডাক শুরু করছে পরিবহন শ্রমিকরা। যাত্রীরাও তাদের পছন্দ মতো গাড়িতে উঠছেন স্বজনদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে।

বেশ কয়েকজন যাত্রী জানান, গাড়ি ছাড়ছে সময় লাগছে না। বাসের সিট ফিলআপ হয়ে যাচ্ছে দ্রুতই। বাড়তি ভাড়া প্রসঙ্গে একজন যাত্রী বলেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় বাড়তি ভাড়ার সমস্যা এবার কম। যদিও কিছু কিছু কাউন্টার ১০০-২০০ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করছেন।

সুন্দরবনগামী শরণখোলা ট্রাভেলস কাউন্টারের ম্যানেজার গুলজার হোসেন বলেন, যাত্রীদের চাপ এখনও তুলনামূলক কম। আশা করি আরও বাড়বে। এবার লম্বা ছুটির কারণে যাত্রীরা তাড়াহুড়ো না করে যার যার সুবিধা মতো সময়ে গ্রামে যাচ্ছেন। ফলে গাড়ি সংকট নেই। সড়কেও চাপ কম। শ্যামলী কাউন্টারের খবর নিয়ে জানা যায়, তাদের গাড়ি ১৫/২০ মিনিট পর পর ছেড়ে যাচ্ছে। যাত্রীদের সেবায় তারা বদ্ধপরিকর।

এদিকে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের সার্বিক খোঁজ খবর নিতে পরিদর্শন করেন সড়ক ও পরিবহন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান ও যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।

উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ঈদযাত্রা কে নির্বিঘœ করতে সড়কের যেসব স্থানে সমস্যা ছিল তা সংস্কার করা হয়েছে। যেগুলো বাকি রয়েছে, সেগুলোও আজকালের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে।

তিনি অতিরিক্ত ভাড়ার বিষয়ে হুঁশিয়ারি করে বলেন, ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেফতার এবং ওই বাসের রুট পারমিট বাতিল করা হবে।

আসিফ মাহমুদ বলেন, ঈদ এলে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যায়। ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য ট্রাফিক পুলিশ ও সিটি করপোরেশনের সমন্বয়ে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। ক্যামেরার সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে।

সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের বিষয়ে আসিফ মাহমুদ বলেন, এখানে অনেকটা বিশৃঙ্খল পরিবেশ দেখলাম। বাসগুলো রাস্তা থেকে যাত্রী ওঠায়, একটা বাস যদি যেতে যেতে যাত্রী ওঠাতে থাকে, তাহলে তো যানজট লেগেই থাকবে। রাস্তা থেকে যাতে যাত্রী ওঠানো না হয়, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাংলাদেশ রেলওয়ের আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শেষ হয়েছে। তবে, ২৪ মার্চ থেকে শুরু হওয়া ঈদ পরবর্তী ফিরতি যাত্রার অগ্রিম টিকিট বিক্রি ২৬ মার্চ থেকে চলছে। যারা ৫ এপ্রিল ফিরতি যাত্রায় ট্রেনে চলাচল করতে চান, তাদের আজই টিকিট সংগ্রহ করতে হবে।

এদিন বুধবার সকাল ৮টায় তৃতীয় দিনের মতো ফিরতি যাত্রার টিকিট বিক্রি শুরু হয়। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানায়, টিকিট বিক্রির শতভাগই অনলাইনে হবে। যাত্রীদের সুবিধার্থে পশ্চিমাঞ্চলের ট্রেনের টিকিট সকাল ৮টায় এবং পূর্বাঞ্চলের ট্রেনের টিকিট দুপুর ২টায় বিক্রি করা হচ্ছে।