ফেনীর ভয়াবহ বন্যার এক বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত এক সেমিনারে বিশিষ্টজনরা বলেছেন, ভৌগোলিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফেনী জেলা গত ১৬ বছরের মত এখনো অবহেলিত, এক বছরে দুইবার ভয়াবহ বন্যায় আক্রান্ত হলেও গত এক বছরে রেমিট্যান্স সমৃদ্ধ এ জেলার মানুষের জন্য তেমন কিছুই করেনি অন্তর্বর্তী সরকার। উপদেষ্টারা মুখে আশ্বাস দিলেও এখনো কার্যকর কোন পদক্ষেপ দেখা যায়নি।

গতকাল শনিবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে নাগরিক সংগঠন ‘ফেনী কমিউনিটি’ আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বক্তারা একথা বলেন। ফেনী কমিউনিটির আহবায়ক ও বিশিষ্ট পরিবেশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদারের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভার সঞ্চালনা করেন কমিউনিটির সদস্য সচিব বুরহান উদ্দিন ফয়সল।

মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু, সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের এমডি এম আব্দুল্লাহ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোতাহের হোসেন, সাংবাদিক ও সমাজকর্মী ফারাবী হাফিজ, জাতীয়তাবাদী সমবায় দলের সাধারণ সম্পাদক ড. নিজাম উদ্দিন, কানাডা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন কবির পাটোয়ারী, ব্যবসায়ী ও ফেনী ফোরামের সহ-সভাপতি দিদারুল আলম মজুমদার, সোনাগাজী ফোরাম ঢাকার সভাপতি ইব্রাহিম বাহারী।

এবি পার্টির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, গত বছরের ফেনীর বন্যা বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি ভয়াবহ ঘটনা। কিন্তু আমরা বন্যার পর পর প্রথম হতাশ হয়েছি প্রধান উপদেষ্টা ফেনীর বানভাসীদের দেখতে না যাওয়ায়। তিনি অন্তত হেলিকপ্টার নিয়ে ঘুরে আসতে পারতেন। এবারের বন্যায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা এলাকা পরিদর্শন করায় ধন্যবাদ জানান তিনি।

তিনি বলেন, সম্প্রতি একনেকে ফেনীর বন্যা মোকাবিলায় একটি প্রকল্প পাস হয়েছে। যদিও এটির বাজেট চাহিদার তুলনায় অর্ধেক। জানি না তাতে কতটুকু হবে। তবে এটি দুর্নীতিমুক্ত রাখা গেলে সম্ভব হবে। এজন্য জেলার সব মত পথের মানুষদের একত্রিত করে এ বিষয়ে স্বেচ্ছার ভূমিকা রাখতে হবে।

বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা ফেনীবাসী রাজনৈতিক ও প্রতিবেশী আগ্রাসনের শিকার হয়েছি। বর্তমানে যে সরকারটি রয়েছে এটি জনগণের সরকার। আমরা ফেনীবাসীর সমস্যা নিয়ে বর্তমান সরকারের সঙ্গে আলোচনা করলে তারা এমনভাবে বলেন, মনে হয় যেন আজই সমাধান হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখনো আমরা কোনো সমাধান পাইনি। ফেনীর নিরাপত্তা ইস্যুতে এই সরকারের কূটনৈতিক কোনো তৎপরতাও আমরা দেখিনি, এটি খুবই দুঃখজনক। সম্প্রতি ফেনীর বন্যা নিরাপত্তায় ৭ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। এই প্রকল্পটি যেন কোনোভাবে লুটপাটের কবলে না পড়ে সেদিকে ফেনীর বিশিষ্টজনদের নজর দেয়ারও আহ্বান জানান তিনি।

সাংবাদিক ও উপস্থাপক ফারাবী হাফিজ ২৪শের বন্যায় নিজ হাতে তিনটি বেওয়ারিশ লাশ দাফন ও টানা কয়েকদিন নাওয়া খাওয়া ভুলে পরিবারের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ফেনীবাসীর জন্য কাজ করার স্মৃতি তুলে ধরেন। এসময় পুরো মিলনায়তন আবেগাপ্লুত হয়ে পড়ে।

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশের ইলেকট্রনিক ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মোতাহের হোসেন বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো আমাদের প্রতিবেশী ভালো নয়। তারা আমাদের পরিকল্পিতভাবে ডুবিয়েছে, ডুবাতে চায়। তার মধ্যে আবার বিগত সরকারের সময় উন্নয়নের মাধ্যমে লুটপাট হয়েছে। একারণে উন্নয়নগুলো টেকসই হয়নি। যার কারণে ফেনীবাসীকে বার বার ভুগতে হচ্ছে। আমরা এবার অন্তত এটার সমাধান চাই। ব্যবসায়ী ও ফেনী ফোরামের সহ সভাপতি দিদারুল আলম মজুমদার বলেন, ফেনীর বন্যা ঝুঁকি শুধু ফেনীর সমস্যা নয়। এটি জাতীয় সমস্যা। এই সমস্যা সামাধানে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য প্রয়োজন।