DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

গ্রাম-গঞ্জ-শহর

শিক্ষার্থীদের ওপর বহিরাগতদের হামলার নিন্দা শিক্ষক সমিতির

কুয়েটের ভিসি প্রো-ভিসির অপসারণ চেয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে শিক্ষার্থীদের চিঠি

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ভিসি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাছুদ, প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. শরিফুল ইসলামের অপসারণ এবং নতুন নিয়োগের দাবি জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে চিঠি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

খুলনা ব্যুরো
Printed Edition

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ভিসি প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মাছুদ, প্রো-ভিসি প্রফেসর ড. শরিফুল ইসলামের অপসারণ এবং নতুন নিয়োগের দাবি জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে চিঠি দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। প্রধান উপদেষ্টা বরাবর পাঠানো চিঠিতে শিক্ষার্থীরা উল্লেখ করেন, আমরা খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৩ তম (জরুরী) সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্মারক নং খুপ্রবি/২৫৯/৬০ তাং ১১/৮/২০২৪ ইং মোতাবেক রাজনীতি নিষিদ্ধ ক্যাম্পাসে গত ১৮/২/২০২৫ তারিখে কুয়েটের শিক্ষার্থীরা কুয়েট ছাত্রদলের ফরম বিতরণের বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ মিছিলের ডাক দেয়। উক্ত মিছিলে কুয়েট ছাত্রদলের কর্মীরা হঠাৎ মিছিলে এসে ধাক্কা দিয়ে শিক্ষার্থীদের হুমকি দেয়। সেই প্রেক্ষিতে কুয়েট ছাত্রদল এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তারা স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সাথে নিয়ে শিক্ষার্থীদের উপর সন্ত্রাসী হামলা চালায়। উক্ত হামলায় কুয়েটের শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয় এবং চার ঘন্টা যাবৎ এই হামলা চলাকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন আমাদেরকে কোন ধরনের নিরাপত্তা দিতে পারেনি। এই মর্মে আমরা সকল শিক্ষার্থী ভিসি প্রো-ভিসি’র পদত্যাগসহ ৬ দফা দাবি উত্থাপন করি। আল্টিমেটাম দেওয়ার পরেও আমাদের দাবি পূরণ না হওয়ায় রাজনীতিমুক্ত কুয়েট ক্যাম্পাসে অনুপ্রবেশে অপচেষ্টা জড়িত থাকা; ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রদলের সন্ত্রাসী কর্তৃক আক্রমণ থেকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়া; শতাধিক শিক্ষার্থীর আহত হওয়ার পরও ব্যর্থতার দায় নিতে অস্বীকার করা; যথাপযুক্ত প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও চিহ্নিত কুয়েট ছাত্রদল এবং স্থানীয় বিএনপি এবং এর অঙ্গসংগঠন কর্তৃক সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলাকে শিকার না করা এবং ভিসি’র কাছে উক্ত হামলার পরিপ্রেক্ষিতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে প্রদানকৃত ৬ দফা দাবি পূরণের পর্যাপ্ত সময় দেওয়ার পরও ৬ দফা দাবি সম্পূর্ণরূপে মেনে না নেওয়ায় ভিসির অপসারণ দাবি করা হচ্ছে।

শিক্ষার্থীরা আরও উল্লেখ করেন, অভিভাবকহীন ও অনিরাপদ কুয়েট ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং একাডেমিক কার্যক্রম পুনরায় চলমান করার জন্য অতিদ্রুত নতুন ভিসি এবং প্রো- ভিসি নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানানো হচ্ছে। যারা আমাদের পাঁচ দফা বাস্তবায়নের অঙ্গীকার নিয়ে অভিভাবকের দায়ভার নিবেন ।

ভিসিকে পদত্যাগে বাধ্য করার অপচেষ্টা ক্যাম্পাসের পরিবেশ ব্যাহত করবে : কুয়েটে সংঘটিত সংঘর্ষের ঘটনায় শুক্রবার কুয়েট শিক্ষক সমিতি একটি বিবৃতি প্রদান করেছেন। সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. সাইদুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. ফারুক হোসেন স্বাক্ষরিত সংবাদ মাধ্যমের কাছে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েট ক্যাম্পাসে বহিরাগত সন্ত্রাসী কর্তৃক ধারালো অস্ত্র নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নির্মমভাবে আহত করার ঘটনায় শিক্ষক সমিতি তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে। একই সাথে কিছু শিক্ষার্থী কর্তৃক ভাইস- চ্যান্সেলরসহ কয়েকজন শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা ও শিক্ষকবৃন্দের সাথে অশোভন আচরণ করার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং এ ধরনের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

বিবৃতিতে শিক্ষক সমিতি উল্লেখ করেন, দায়িত্ব পালনের অবহেলা বা ব্যর্থতার অভিযোগে একজন শিক্ষককে লাঞ্ছিত করা কোন পরিস্থিতিতেই শিক্ষকবৃন্দ মেনে নেবে না। এহেন ঘৃণ্য আচরণ কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সংঘটিত হওয়া কোনভাবেই সম্ভব নয় এবং এর নেপথ্যে কুচক্রী, স্বার্থান্বেষী মহল তথা বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের চক্রান্ত জড়িত রয়েছে। ক্যাম্পাসে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নিরাপত্তার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহযোগিতা চাওয়ার পরও যথাসময়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সহযোগিতা না করার তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়।

সেই সাথে শিক্ষক শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ সকলের নিরাপত্তা জনিত আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করে কুয়েট শিক্ষক সমিতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে এহেন অসহযোগিতার বিষয়ে অস্পষ্ট ব্যাখ্যা দাবি করেন।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক সমিতি বিশ্ববিদ্যালয়ূ ক্যাম্পাসে সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বিষয়টি অবহিত করে নিয়ে সাহায্যের দাবি জানান।

বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক সমিতি আরো উল্লেখ করেন, জুলাই অভ্যুত্থানের পর বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ক্যাম্পাসে সৃষ্ট অরাজকতা কাটিয়ে উঠতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকবৃন্দ যখন একযোগে কাজ করছে তখন এমন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার সুযোগ নিয়ে ফ্যাসিস্টের দোসররা উস্কানিমূলক কাজ করে যাচ্ছে। কুয়েট ক্যাম্পাস” সংক্রান্ত কুয়েট আইন-২০০৩ এবং সিন্ডিকেট কর্তৃক গৃহীত সিদ্ধান্ত লঙ্ঘনকারীদের অনতিবিলম্বে শাস্তির আওতায় আনার জোর দাবি জানানো হয়। এছাড়া শিক্ষার্থীদের আহত করা, ভাইস-চ্যান্সেল, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলরসহ কয়েকজন শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা তথা সাম্প্রতিক সকল ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের অবিলম্বে খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জোর দাবি জানান।

বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক সমিতি আরো উল্লেখ করেন, রাষ্ট্রীয় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অসহযোগিতার কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতির দায়ভার পুরোপুরি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপর চাপানো এবং এর প্রতিক্রিয়ায় সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দের সহিত ও শিক্ষার্থীদের অসৌজন্যমূলক আচরণ ও মব জাস্টিসের মাধ্যমে ভাইস-চ্যান্সেলর, প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর ও ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের পদত্যাগে বাধ্য করার অপচেষ্টা ক্যাম্পাসের শিক্ষার স্বাভাবিক পরিবেশ ব্যাহত করবে বলে শিক্ষক সমিতি মনে করেন।

ভিসির বাসভবনে তালা : কুয়েটের ৯৮তম সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাবার ঘোষণা দিয়েছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। শুক্রবার রাতে রক্তাক্ত কুয়েট চিত্র প্রদর্শনী শেষে শিক্ষার্থীরা এ ঘোষণা দেন। পরে মিছিল নিয়ে ভিসির বাসভবনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেয়।

এসময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা আমাদের ড. মাসুদ স্যারকে (ভিসি) নাকি নির্যাতন করেছি বলে যে অপপ্রচার চালানো হয়েছে তা সম্পূর্ণরূপে মিথ্যা। আমরা যথেষ্ট সম্মানের সাথে আচরণ করেছি তার শরীরে একটি টোকা দিয়েছি এমন কোন প্রমাণ বা ভিডিও কেউ দেখাতে পারবে না।

উল্লেখ্য, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্রদলের ফরম বিতরণকে কেন্দ্র করে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। এরপর শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় অংশ নেয় স্থানীয় বহিরাগতরাও। এ নিয়ে কুয়েটের জরুরি সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটের একাডেমিক কার্যক্রম ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়।