মাগুরা সংবাদদাতা : অতি বৃষ্টির কারণে পানি নিষ্কাষন ব্যবস্থা না থাকায় এবং উজান সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় মাগুরা সদর ও শলিখা উপজেলার আবাকৃত আমন অধিকাংশ জমির আমন ধান নষ্ট হয়ে যায়। ফলে কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে হতাশার মধ্যে পড়ে। হতাশা দূর করে ক্ষতি পোষাতে তলিয়ে যাওয়া ফসল রক্ষা করতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকেরা নিজ উদ্যোগ ও অর্থায়নে পানি অপসারণ পূর্বক ফসল বাঁচানোর চেষ্টাও করেও রক্ষা করতে পারেনি তাদের রোপণকত ধানের চারা। সমস্যা আসতে পারে এ আশঙ্কায় অনেকে তৈরি করেছিলেন আপদকালীন বীজতলা। এসব এলাকার মাঠ থেকে পানি সরে যাওয়ায় কৃষকেরা তাদের খরচ বাচাতে আবারো আমন ধান রোপনে ব্যস্তসময় পার করছেন। মাগুরা জেলার সিংড়া এলাকার মাঠে দেখা যায়, ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে আমন ধান রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।

কেউ বীজতলা প্রস্তুত করছেন, কেউ ধানের চারা রোপণ করতে কেউ মাঠ প্রস্তুত করছেন, দেখে মনে হচ্ছে দম ফেলার সময় নেই তাদের। উপজেলা সদর আড়পাড়া ইউনিয়নের দিঘী গ্রামের কৃষক রথীন বিশ্বাস বলেন, সে ৮ বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছিল, যা পুরোটাই পানিতে তলিয়ে যায়। পানি বর্তমানে সরে গেলেও চারাগুলো বাঁচানোই সম্ভব হয়নি। তাই বিভিন্ন এলাকা থেকে চারা ক্রয় করে নতুন করে লাগানো শুরু করেছি। যদি খরচটা অন্তত উঠানো যায় সে আসায়।

শালিখা উপজেলার তালখড়ি ইউনিয়নের ছান্দড়া গ্রামের কৃষক বদরুল আলম ৪ বীঘা জমিতে ধানের চারা রোপন করেছিলেন, যার মধ্যে তিন বিঘা পানিতে তলিয়ে গিয়েছিল সেখানে আবার নতুন করে চাষাবাদ শুরু করেছেন। ফসলের দাম ভালো পেলে খরচ উঠানো সম্ভব হবে। না হলে সমস্যায় পড়তে হবে। মাগুরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সার বীজ সংরক্ষনে কমিটির সভায় কৃষি অফিস জানায়, অতিবর্ষনে সৃষ্ট পানিতে তলিয়ে যাওয়া ৯০ শতাংশেরও বেশি জমি থেকে বন্যার পানি সরে গেছে। এখন কৃষকরা পুনরায় চাষাবাদ শুরু করেছেন। সভায় জানানো হয়। ইতোমধ্যে উপজেলা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে অর্ধ শতাধিক কৃষকের মাঝে আপদকালীন বীজতলা তৈরির জন্য মোট ২৮০ কেজি ধান বীজ প্রদান করা হয়েছে এবং বাংলাদেশ নিউক্লিয়ার কৃষি ইনিস্টিউটের (বিনা) পরিচালক মহোদয়ের নিকট হতে প্রাপ্ত ২০০০ কেজি আমন বীজ সহায়তা ৪০০ জন কৃষককে প্রদানের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৬৫ জন ক্ষতিগ্রস্ত সবজি চাষীদের ১০ কেজি চাল, ১ কেজি তেল, ১ কেজি মসুর ডালসহ শুকনা খাবার প্রদান করা হয়েছে। পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রকল্প গ্রহন করে আমন ধানের আপদকালীন বীজতলা তৈরির জন্য ১৮৫ জন কৃষককে ৫ কেজি করে ধান বীজ ও পলিথিন প্রদান করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবুল হাসনাত বলেন, অতিবর্ষনে উজান থেকে আশা ফটকি নদীর পানি মাঠে ঢুকে পড়ে উপজেলার ৮৯৭ হেক্টর জমির ধান পুরোপুরি পানিতে নিমজ্জিত হয়। দীর্ঘদিন পানির নিচে থাকার ফলে রোপনকৃত ধানের চারাগুলো নষ্ট হয়ে যায়।

বর্তমানে পানি দ্রুত নামতে শুরু করায় এবং এখনো আমন ধানের চারা রোপণের সময় থাকায় কৃষকগণের চাহিদা বিবেচনা করে যেই স্থানে প্রয়োজনের অতিরিক্ত চারা আছে সেখান থেকে চাষীদের আমন ধানের চারা প্রদানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি উপজেলা কৃষি অফিস ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে ধানের চারা, বীজ, শুকনো খাবার ও প্রণোদনার নগদ অর্থ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়াও উপজেলার সকল ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের একটি তালিকা হয়েচে যাদেরকে ধারাবাহিকভাবে সহযোগিতার আওতায় আনা হবে বলে তিনি জানান।