গণদাবির প্রেক্ষিতে তৎকালীন সরকার খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার কপোতাক্ষ নদের উপর ‘কপোতাক্ষ সেতু’ নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নে ১ কোটি ৯৩ লাখ ৪২ হাজার ৯শ’ ১৯ টাকা ৫৫ পয়সা ব্যয় বরাদ্দ করে। পরে কাজের মানোন্নয়নে ব্যয় বরাদ্দ বাড়িয়ে ২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা করা হয়। সেতুটির নির্মাণ কাজ পান সাবেক সংসদ সদস্য এডভোকেট শেখ মো. নুরুল হকের মালিকানাধীন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এন হক এসোসিয়েট। প্রতিষ্ঠানটি ২০০০ সালে সেতু নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করে। এরপর ২০০৩ সালের ১২ নবেম্বর পর্যন্ত আংশিক কাজ করে ১ কোটি ৬৭ লাখ ৭২২ টাকা আই এফ আই সি ব্যাংক খুলনা হতে উত্তোলন করে এর নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দেয়। বিষয়টি নিয়ে ঐ সময় আদালত পর্যন্ত গড়ায়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে মামলাসহ নানা জটিলতায় বন্ধ থাকে সেতুর নির্মাণ কাজ। এমন পরিস্থিতিতে সেতুর বাঁশি নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করতে অপর একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দিলেও সাতক্ষীরা পাউবোর ভ্রান্ত ধারণার উপর ভর করে বিশেষত, কপোতাক্ষ নদের ¯্রােতে বাধা পাওয়ার আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো একটি পত্রে একবারে বন্ধ হয়ে যায় সেতুর সামগ্রিক নির্মাণ কাজ। সেই থেকে গত ২২ বছর বন্ধ রয়েছে এর নির্মাণ কাজ। এরআগে সেতুর এ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণে দু’পারে জমি অধিগ্রহণ ও সংযোগ সড়ক নির্মাণে মাটি ভরাট করে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে পাউবোর আশঙ্কায় সেতু নির্মাণ কাজ বন্ধ হলেও নদের বুকে থেকে যায় সেতুর নির্মাণাধীন ১৮টি পিলার। এরপর ২০১১ সালে কপোতাক্ষ নদ খননে প্রায় ২৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার।
ইতোপূর্বে সেতু বাস্তবায়নে কার্যক্রম শুরু করেও শেষ করা যায়নি। আর এর সাথে অপমৃত্যু ঘটে দীর্ঘ দিনের লালিত স্বপ্ন। তবে সর্বশেষ ফাইল চালাচালির এক পর্যায়ে গত বছর আবারো আলোচনায় আসে কপিলমুনির সেতু বাস্তবায়নের বিষয়টি। শুরু হয় নতুন করে স্বপ্নের বীজ বুননের।
সাতক্ষীরার তালা উপজেলার জালালপুর ও খেশরা ইউনিয়নের ১৯টি গ্রামসহ বিস্তীর্ণ এলাকার হাজার হাজার মানুষ সাঁকো পার হয়েই আসে বিনোগঞ্জ (কপিলমুনি) কেন্দ্রীক ব্যবসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ দৈনন্দিন নানা প্রয়োজনে। বিশেষ করে উৎপাদিত ও নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয় সাঁকোটি।
কপিলমুনির এডভোকেট দীপঙ্কর সাহা জানান, আধুনিক কপিলমুনির স্থপতি রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু কপোতাক্ষের উপর সেতু নির্মাণে তৎকালীন কোলকাতা রিজার্ভ ব্যাংকে এক লক্ষরও বেশি পরিমাণ টাকা রেখে যান। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত সম্পর্কের অবনতির আগ পর্যন্ত বিনোদ বিহারী সাধু প্রতিষ্ঠিত কপিলমুনি সহচরী বিদ্যা মন্দির ও সিদ্ধেশ্বরী ব্যাংক প্রতি বছর ঐ টাকার লভ্যাংশ হিসেবে অর্ধ লক্ষাধিক টাকা পেত।
দীর্ঘ দিন ব্রিজটির বাস্তবায়ন নিয়ে কাজ করা বিশিষ্ট সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী পারভেজ মোহাম্মদ জানান, তিনি দীর্ঘ দিন যাবৎ ব্রিজটির বাস্তবায়ন নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছেন, কপোতাক্ষের উপর কপিলমুনি-কানাইদিয়া সেতু নির্মাণে প্রকৃত পক্ষে কোন বাধা নেই। সারাদেশে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর যে পরিমাণ উন্নয়ন কাজ তরান্বিত করছে তাতে করে শুধু দরকার আমাদের সদিচ্ছা। তবেই সম্ভব হবে স্বপ্নের বাস্তবায়ন। তা না হলে অসমাপ্ত ব্রিজের ১৮টি পিলার ওকে ধারণ করে কপোতাক্ষের বোবা কান্না চলবে যুগের পর যুগ। দক্ষিণাঞ্চলের কপোতাক্ষ তীরবর্তী মানুষের প্রতিদিনের রাতের স্বপ্ন দিনের আলোয় ম্লান হয়ে যাবে।