আব্দুল কাদের হাওলাদার (৭০), পেশায় একজন রিক্সাচালক। তিনি খুলনা নগরীর কেসিসি ৫নং ওয়ার্ডের একজন বয়স্ক বাসিন্দা। বাড়ীতে শয্যাশয়ী প্যারালাইসিসে আক্রান্ত বয়স্ক স্ত্রী। বয়সের ভার নিয়েও পেট চালানোর তাগিদে রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তিনি প্রায় প্রতিদিনই হাজির হন ওই ওয়ার্ড অফিসটিতে। জানতে চান, তার টিসিবির কার্ডটি আসছে কিনা। প্রতি উত্তরে অফিসে বসা কর্মকর্তারা একই উত্তর দিয়ে চলেছেন আপনার কার্ড এখনো হাতে পায়নি, আমরা। হাতে পেলে ফোনো করে ডেকে দেবো, অতঃপর তিনি ফিরে যান। লাইলি বেগম (৭২), এক বিধবা বয়স্ক নারী। স্বামী মারা গেছে প্রায় ১৫ বছর হলো। ছেলে-মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার পর তিনি একা একটু ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করছেন। দারিদ্রতা তার এখন একমাত্র সঙ্গী। দু’চার দিন পর পর খোঁজ খবর নেন নগরীর ৫ নং ওয়ার্ড অফিসে, তার স্মার্ট কার্ডটি এসেছে কিনা, সন্তোষজনক উত্তর না পেয়ে ফিরে যান। মনোয়ারা একজন গৃহপরিচারিকা। মানুষের বাড়ীতে বাড়ীতে কাজ করে তার পেট চলে। তিনিও তার স্মার্ট কার্ডটি হাতে পেতে সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড অফিসে যোগাযোগ অব্যহত রেখেছেন। প্রতি মাসে ট্রেডিং কর্পোরেশন বাংলাদেশ (টিসিবি) প্রদত্ত সাশ্রয়ী মূল্যে চাল, ডাল, তেল ও চিনিসহ বিধিধ পণ্য পেতে এমনই- একাধিক নি¤œ আয়ের সাধারন অসহায় মানুষগুলো চাতক পাখির মতো তাকিয়ে আছেন সংশ্লিষ্টদের প্রতি। টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডটি পেতে এভাবে মাসের পর মাস হাহাকার করছেন উপকারভোগীরা। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে স্মার্ট কার্ডটি হাতে পেতে টিসিবির সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন।

সূত্রে জানা গেছে, ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)’ উপকারভোগীদের ম্যানুয়ালী সিস্টেম থেকে ডিজিটাল সিস্টেমে (অনলাইন) ভিক্তিক কার্যক্রমে আওতায় অর্ন্তভূক্তির জন্য প্রকৃত অসহায়দের ছাড়াও বিগত সময়ে কার্ড বিতরণে বিভিন্ন অনিয়ম (এক পরিবারে একাধিক কার্ডসহ বিবিধ) দূরকরণে সংশ্লিষ্টরা সারা বাংলাদেশে ৪৩ লক্ষ কার্ড বাতিল করেন এবং বাতিল কার্ডের বিপরীতে নতুন করে উপকারভোগীদের নিবন্ধনের কার্যক্রম শুরু করেন, যার প্রক্রিয়া চলমান। তাছাড়া যাচাই-বাছাই শেষে যাদের স্মার্ট কার্ড প্রদান করা হয়েছে, তাদের জিজিটাল (অন-লাইন) সিস্টেমের মাধ্যমে অর্থাৎ, একজন স্মার্ট কার্ডধারীর বার কোডের মাধ্যমে তার মোবাইল নম্বরসহ যাবতীয় তথ্য যাচাই-বাছাই পূর্বক পণ্য হস্তান্তর করা হচ্ছে।

জানা গেছে, বিগত সময়ে খুলনা মহানগরীর ৩১ টি ওয়ার্ডে মোট টিসিবির কার্ডের সংখ্যা ছিল ৮৫ হাজার ৩’শ ৬১ টি। একই পরিবারে একাধিক কার্ডসহ বিবিধ বিষয়ে যাচাই-বাছাই শেষে ৪১ হাজার ৫০ টি কার্ড বাতিল করেন সংশ্লিষ্টরা। ওই বাতিল কার্ডের বিপরীতে বর্তমানে মহানগরীর ৩১টি ওয়ার্ডে নতুন করে উপকারভোগীর নিবন্ধনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।