গাজীপুর মহানগরীর অন্যতম প্রাচীন ও প্রাকৃতিক খাল মোঘর খাল পুনরুদ্ধার ও খনন কার্যক্রম শুরু করেছে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন। নগরবাসীর দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ লাঘব এবং পরিবেশ সংরক্ষণের লক্ষ্যে শুরু হওয়া এই উদ্যোগে সহায়তা করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। শুক্রবার সকালে খালের উৎসভূমি ভোগড়া বাইপাস এলাকা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই অভিযান শুরু হয়। উপস্থিত ছিলেন সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোঃ সোহেল রানা, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (মেকানিক্যাল) সুদীপ বসাক, নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রাসেলসহ সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারী ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

মোঘর খালের ইতিহাস ও গুরুত্ব ভোগড়া এলাকা থেকে যাত্রা শুরু করে খালটি পূর্ব চান্দনা, খাইলকুর, হায়দারাবাদ হয়ে হায়দারাবাদ খালে এবং সেখান থেকে নিমতলী খাল হয়ে অবশেষে টঙ্গীর কহর দরিয়া নদীতে পতিত হয়েছে। রাজউকের ম্যাপে এটি ‘গাছা খাল’ নামে পরিচিত। জলাবদ্ধতা নিরসনে এই খাল দীর্ঘদিন ধরেই নগরের প্রাণরক্ষাকারী হিসেবে বিবেচিত হলেও অতিবৃদ্ধ দখল, দুষণ ও অবহেলায় প্রায় মৃতপ্রায় অবস্থায় চলে যায়। দূষণ ও দখলের করুণ চিত্র বিভিন্ন শিল্প কারখানার রাসায়নিক বর্জ্য, দখলদারদের অনুপ্রবেশ এবং নিয়মিত পরিচর্যার অভাবে খালটি পানিনিষ্কাশনের স্বাভাবিক কার্যকারিতা হারায়। এলাকাবাসী ও পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর লাগাতার দাবির পরিপ্রেক্ষিতে শুরু হয় এই পুনরুদ্ধার অভিযান।

পরিবেশবাদীদের মতামত বাংলাদেশ রিভার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোঃ মনির হোসেন বলেন, “মোঘর খাল ছিল গাজীপুর সিটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা। এই খাল বাঁচানো শুধু পরিবেশ নয়, মানুষের জীবন-জীবিকার সাথেও ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সিটি কর্পোরেশনের এই উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে এটি টেকসই করতে হলে সীমানা নির্ধারণ স্থায়ী করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে আবার দখলের শিকার না হয়।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক ও ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার সরফুদ্দিন আহমেদ চৌধুরী বলেন,“মোঘর খাল পুনরুদ্ধার কার্যক্রম শুধু একটি উন্নয়ন প্রকল্প নয়, এটি গাজীপুরবাসীর দীর্ঘদিনের নাগরিক অধিকার ও পরিবেশগত ভারসাম্য পুনরুদ্ধারের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। নগরবাসীর ভোগান্তি লাঘবে আমরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সহায়তায় খালের প্রকৃত সীমানা নির্ধারণ, অবৈধ দখল উচ্ছেদ, খনন ও পরিষ্কারের কাজ শুরু করেছি। প্রতিটি ধাপ সুপরিকল্পিতভাবে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে যাতে কাজটি শুধু স্বল্পমেয়াদে নয়, দীর্ঘমেয়াদেও ফলপ্রসূ হয়।

এই উদ্যোগ সফলভাবে সম্পন্ন হলে খালপাড়ের মানুষ জলাবদ্ধতা ও দূষণজনিত স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে মুক্তি পাবে। একই সঙ্গে নগরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা স্বাভাবিক হবে, যা ভবিষ্যৎ নগরায়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই, এই খাল আবারও তার স্বাভাবিক প্রবাহ ও পরিবেশগত স্বকীয়তা ফিরে পাক। এ কাজে সকলের আন্তরিক সহযোগিতা কামনা করছি। এটি কেবল একটি খাল নয়, বরং একটি বাসযোগ্য, পরিচ্ছন্ন ও টেকসই গাজীপুর গড়ার রূপরেখা। অভিযানের অংশ হিসেবে খাল থেকে অপসারিত মাটি ও বর্জ্য সড়কের পাশে না ফেলে ট্রাকযোগে সরাসরি ডাম্পিং স্টেশনে স্থানান্তর করা হচ্ছে, যা নগর পরিচ্ছন্নতা ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় প্রশংসনীয় উদ্যোগ।

মোঘর খাল শুধু একটি খাল নয়, এটি গাজীপুর মহানগরের পরিবেশগত ভারসাম্য ও ভবিষ্যৎ টেকসই নগরায়নের চাবিকাঠি। এই উদ্যোগ সফল হলে এটি হতে পারে দেশের অন্যান্য নগরীর জন্য একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।