খুলনা প্রেসক্লাব ও খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সিনিয়র সদস্য দৈনিক সংবাদ প্রতিদিনের খুলনা ব্যুরো প্রধান ওয়াহেদ উজ জামান বুলু (৬০) এর জানাজা দাফন সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার বেলা সোয়া তিনটার দিকে খুলনা প্রেসক্লাবের সামনে জানাজা শেষে গোয়ালখালী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। এর আগে রোববার (৩১ আগস্ট) সন্ধ্যা ৭টার দিকে খানজাহান আলী (র.) (রূপসা সেতু) সেতুর ২ নং পিলারের বেজমেন্ট থেকে সাংবাদিক ওয়াহেদ-উজ-জামান বুলুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

লবণচরা পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ এস আই আব্দুর রহিম জানান, স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং নদীর ভেতরে হওয়ায় নৌপুলিশকে জানানো হয়। নৌপুলিশ রূপসা ফাঁড়ির এস আই বেল্লাহ হোসেন জানান, তারা লাশটি উদ্ধার করেছেন। তার পরনে ছিল ব্লু রঙের গ্যাবাডিন প্যান্ট ও আকাশি রঙের টি-শার্ট। তার ডান হাত ও মুখমন্ডল ক্ষতিগ্রস্থ ছিল। খুলনা প্রেসক্লাবের অন্তবর্তীকালীন কমিটির আহ্বায়ক এনামুল হক বলেন, সাংবাদিক ওয়াহেদ-উজ-জামান বুলু’র মৃত্যুকে খুলনার সাংবাদিক সমাজ রহস্যজনক বলে মনে করে। প্রাথমিকভাবে আত্মহত্যা বলে প্রচারিত হলেও এখন এটিকে হত্যাকান্ড বলে মনে করা হচ্ছে। তিনি অবিলম্বে প্রশাসনের প্রতি নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে এ হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনের দাবি জানান। তার মোবাইল ফোন ও রূপসা সেতুর সিসিটিভি পরীক্ষা করলে এই হত্যাকান্ডের মূল রহস্য উদঘাটিত হবে বলে তিনি জানান। নিহতের শ্যালক মনিরুজ্জামান বাবু বলেন, রোববার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে নগরীর খুলনা সদর থানাধীন বাগমারা আদর্শপল্লীর বাসা থেকে নাস্তা করে স্বাভাবিকভাবে বের হন। এরপর দুপুরে সাড়ে ১২ টার পর থেকে তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। রাত ৯টার দিকে তারা জানতে পারেন রূপসা সেতুর নিচ থেকে তার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

নিহতের ছোট ভাই আনিসুজ্জামান দুলু বলেন, ‘পারিবারিকসহ নানান ঘটনায় ভাই চাপের মধ্যে ছিলেন। প্রথম স্ত্রী তিন মাস নিখোঁজ, এক নারীর দ্বিতীয় বিয়ের দাবি এবং ক্লিনিক ব্যবসায় বিনিয়োগ করে টাকা না পাওয়া নিয়ে মানসিক চাপে ছিলেন তিনি। রোববার দুপুরে সাড়ে ১২ টার দিকে তার সাথে কথা হয়। তারপর থেকে বুলু’র মোবাইল বন্ধ ছিল। তিনি বলেন, তার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। সঠিক তদন্ত হলেই এ হত্যাকান্ডের রহস্য উম্মোচিত হবে। তিনি অবিলম্বে প্রশাসনের প্রতি সুষ্টু তদন্তের মাধ্যমে হত্যাকান্ডের রহস্য উদঘাটনে প্রশাসনের প্রতি দাবি জানান। শ্যালিকা নুরুন্নাহার পারভিন জানান, ঘটনার দিন সকালে তার বাসা থেকে বের হন। দুপুর থেকে তিনি বুলুর মোবাইলে ঢুকতে পারেননি। রাতে লাশ উদ্ধারের খবর পেয়ে রূপসা সেতু এলাকায় গিয়ে লাশটি বুলুর বলেই শনাক্ত হয়। বন্ধু কামরুল হোসেন বলেন, ‘ঘটনার পর স্পটে গিয়ে দেখেছি। তাতে বুলুর মৃত্যু অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। পুলিশের তদন্ত জরুরি মনে করছি।’ সাংবাদিক বুলুর ঘনিষ্ট সহকর্মীরা জানান, ওয়াহেদ-উজ-জামান বুলু দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক অশান্তিতে ভুগছিলেন। তিনি অর্থ কষ্টেও ছিলেন। গত ১১ মে বুলু’র স্ত্রী এলিজা পারভীন লিজা নিখোঁজ হন। এখনও পর্যন্ত তাকে পাওয়া যায়নি। ২৫ বছরের বৈবাহিক জীবনে তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। কর্মজীবনে তিনি চ্যানেল ওয়ান, ইউএনবি, দৈনিক ভোরের কাগজ, দৈনিক আজকের কাগজ, রূপালী বাংলাদেশ, স্থানীয় দৈনিক বঙ্গবাণী ও দৈনিক প্রবাহসহ গত তিন দশক ধরে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সঙ্গে কাজ করেছেন। নৌপুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মুহিদুল হক বলেন, ‘সুরতহাল রিপোর্টে বুলুর মুখ থেঁতলানো, দুই হাত ভাঙা ও গায়ে কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের পর প্রকৃত তথ্য বলা সম্ভব হবে।’ এদিকে সিনিয়র সাংবাদিক বুলু’র কফিন বেলা তিন টার দিকে খুলনা প্রেসক্লাবে নিয়ে আসলে সহকর্মীদের মধ্যে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। এখানে তার কফিনে পুস্পমাল্য অর্পণ করেন খুলনা প্রেসক্লাব, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়ন, টিভি রিপোর্টার্স ইউনিটি, বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি খুলনা, বাংলাদেশ বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ খুলনাসহ বিভিন্ন পেশীজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। পরে খুলনা প্রেসক্লাবের সামনে মরহুমের জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযায় ইমামতি করেন প্রেসক্লাবের মসজিদের ইমাম মাওলানা ইউসুফ হাবিব। জানাযায় খুলনা প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক এনামুল হক, নির্বাহী সদস্য শেখ দিদারুল আলম, মিজানুর রহমান মিলটন, আহমদ মুসা রঞ্জু, আশরাফুল ইসলাম নূর, সাবেক সহ-সভাপতি রাশিদুল ইসলাম, কাজী শামীম আহমেদ, রকিবুল ইসলাম মতি, আল এহসান, এডভোকেট কুদরত এ খুদা, মনিরুজ্জামান রহীমসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন। পরে তাকে নগরীর খালিশপুর থানাধীন গোয়ালখালী কবরস্থানে দাফন করা হয়। অপরদিকে খুলনা প্রেসক্লাবের স্থায়ী সদস্য এবং খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সদস্য সিনিয়র সাংবাদিক ওয়াহেদ উজ জামান বুলুর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন খুলনা প্রেসক্লাবের আহ্বায়ক এনামুল হক ও সদস্য সচিব রফিউল ইসলাম টুটুল, মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়ন খুলনার সভাপতি মো. আনিসুজ্জামান ও সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) আবুল হাসান হিমালয়, খুলনা আঞ্চলিক তথ্য অফিসের উপপ্রধান তথ্য অফিসার এ এস এম কবীর-সহ পিআইডি পরিবার।