শফিকুল ইসলাম, গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) : চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলা সদর রহনপুর হাট-বাজারে একসময় মৃৎশিল্পের নানা জিনিস-হাঁড়ি, কলস, ঘটি, প্রদীপ, ফুলদানি, সরা কিংবা খেলনা ছিল মানুষের নিত্যপ্রয়োজনের অনুষঙ্গ। গ্রামের প্রতিটি পরিবারেই মাটির জিনিসের ব্যবহার ছিল খুব সাধারণ। কালের বিবর্তনে সেই দৃশ্য এখন অতীত। প্লাস্টিক, অ্যালুমিনিয়াম, স্টিল ও কাঁচের তৈরি পণ্যের দাপটে আজ মাটির জিনিস হারিয়ে গেছে। ফলে একসময় এই পেশায় যুক্ত শত শত পরিবারের জীবিকা এখন বিপন্ন। যারা পূর্বপুরুষের উত্তরাধিকার হিসেবে এ শিল্প টিকিয়ে রেখেছিলেন, তারাও বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন।
রহনপুরের প্রবীণ ব্যবসায়ী মৃৎশিল্পী হাবিবুল আলম বলেন, “আগে প্রতি হাটে মাটির জিনিস বিক্রি করে সংসার চলত। এখন মানুষ মাটির জিনিস ব্যবহারই করে না। প্লাস্টিকের কলস, স্টিলের হাঁড়ি কিনে সবাই আধুনিক হয়েছে। কিন্তু আমরা পিছিয়ে পড়েছি।” চাঁপাইনবাবগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প কেবল জীবিকার উৎসই ছিল না, এটি ছিল লোকসংস্কৃতিরও বাহক। গ্রামীণ জীবনের সঙ্গে মাটির এই শিল্পের ছিল এক অদ্ভুত বন্ধন—যেখানে মাটির ঘ্রাণে মিশে থাকত মানুষের অনুভব, পরিশ্রম আর সৌন্দর্যবোধ।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের এই বিলুপ্তপ্রায় মৃৎশিল্প একসময় গ্রামীণ অর্থনীতি ও সংস্কৃতির গর্ব ছিল। আজ সেটি স্মৃতির পাতায় ঠাঁই নিচ্ছে। হয়তো কোনো দিন কোনো শিশুর হাতে মাটির বাঁশি বা পুতুল দেখেই মানুষ আবার স্মরণ করবে—এই মাটির শিল্প একদিন জীবনেরই অংশ ছিল।