মোঃ লাভলু শেখ লালমনিরহাট : ভারতের উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তা নদীর পানি হু হু করে বেড়ে বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নদী সংলগ্ন তিস্তাপাড়ের হাজার হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। রোববার ৩ আগষ্ট বিকেল ৩ পর্যন্ত লালমনিরহাটের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

নদীপাড়ের মানুষ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে ভারতের উজানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় তিস্তা নদীতে পানির প্রবাহ বেড়ে গেছে। যদিও কয়েকদিন ধরে পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি ছিল। রোববার পানির প্রবাহ আরও অতিক্রম করে। ফলে তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। তিস্তাপাড়ের হাজারো পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তিস্তার চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট ও ফসলের মাঠ ডুবে গেছে। অনেক এলাকায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সেখানে একমাত্র যাতায়াতের মাধ্যম এখন নৌকা ও ভেলা। ঢলের পানিতে আমন ধানসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষেত এবং মাছের পুকুরও ক্ষতির মুখে পড়েছে।

তিস্তা নদী লালমনিরহাটের ৫টি উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় সামান্য পানি বাড়লেই পুরো জেলাজুড়ে নদী তীরবর্তী এলাকাগুলো প্লাবিত হয়। এবারের উজানের ঢলের কারণে জেলার ৫টি উপজেলার নিম্নাঞ্চল ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। পানি বাড়তে থাকলে আরও নতুন নতুন এলাকা বন্যার কবলে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে স্থানীয়রা।নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে বলে সতর্ক করেছে কর্তৃপক্ষ। আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের মহিবর রহমান বলেন, উজান থেকে প্রচুর পানি আসছে। ইতোমধ্যে নিচু এলাকায় পানি ঢুকতে শুরু করেছে। পরিবারগুলো পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাট ডুবে গেছে।

একই এলাকার কলতার পাড় গ্রামের তুহিন ব্যাপারী বলেন, উজানের ঢলে পানি বাড়ছে। চরাঞ্চলের কিছু বাড়ি ইতোমধ্যে পানিবন্দী। যেভাবে পানি বাড়ছে। তাতে বড় বন্যার ভয় করছি। এদিকে পানি বৃদ্ধির কারনে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে নদী সংলগ্ন প্রায় শতাধিক চরের মানুষের মাঝে। তিস্তার পানি নিয়ন্ত্রনে রাখতে দেশের সবচেয়ে বড় সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে ৪৪ টি জলকপাট খুলে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

তিস্তা ব্যারেজ এলাকার বাসিন্দা মনসুর আলী বলেন,আমরা নদী পাড়ের মানুষ সব সময় আতংকে থাকি।কখন ভারত গজলডোবা ব্যারেজের গেট খুলে দিয়ে আমাদেরকে ভাসিয়ে দেয় । বিশেষ করে ভারতের উজানে যে গেট রয়েছে। তার নাম গজলডোবা এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকার নিয়ন্ত্রন করে থাকেন। খরা মৌসুমে গেটটি বন্ধ রাখা হয় আর বর্ষা এলেই থেমে থেমে পানি ছেড়ে দিয়ে আমাদেরকে ভাসিয়ে দেয় ভারত। কারন বৃষ্টির পানিতে বন্যা হয় না। বন্যা হয় ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পানিতে।

তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৗধুরী বলেন, পানি নিয়ন্ত্রনে রাখতে ব্যারেজের ৪৪টি গেট খুলে রাখা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোড তিস্তা ব্যারেজ কন্ট্রোল রুম ইনচাজ নুরুল ইসলাম জানান, উজানের ঢলে রোববার ভোর থেকে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। বর্তমান তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

লালমনিরহাট পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী শুনীল কুমার বলেন, উজান থেকে পানি আসায় তিস্তার পানি বাড়ছে। দুপুরে পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপরে পৌঁছায়। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। তাই নদী তীরবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের সতর্ক থাকতে বলা হচ্ছে। আমরা সার্বক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচ এম রকিব হায়দার বলেন, নদী তীরবর্তী এলাকার খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। বন্যা দেখা দিলে তা মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। শুকনো খাবার ও ঢেউটিন মজুদ রয়েছে। সব মিলিয়ে সরকারী প্রস্তুতি রয়েছে। বন্যা পূর্বাভাসের তথ্য মতে, রোববার বিকেল ৩ টায়

তিস্তা নদীঃ

১। ডালিয়া পয়েন্ট-পানির সমতল ৫২.২০ মিটার (বিপদসীমা = ৫২.১৫ মিটার) যা বিপদসীমার ৫ সে.মি উপরে।

২। কাউনিয়া পয়েন্ট- পানির সমতল ২৮.৭৩ মিটার (বিপদসীমা = ২৯.৩০ মিটার) যা বিপদসীমার ৫৭ সে.মি নিচে।

ধরলা নদীঃ

১। শিমুলবাড়ি পয়েন্ট - পানি সমতল ২৮.৯৬ মিটার, (বিপদসীমা = ৩০.৮৭ মিটার) যা বিপদসীমার ১৯১ সে.মি নিচে

২। পাটগ্রাম পয়েন্ট - পানি সমতল ৫৬.৫৬ মিটার , (বিপদসীমা = ৬০.৩৫ মিটার) যা বিপদসীমা ৩৭৯ সে.মি নিচে।

তিস্তা ব্যারাজের ৪৪ পানি গেট খুলে দেয়া হয়েছে

নীলফামারী সংবাদদাতা ঃ ভারী বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রবিবার (৩ আগস্ট) ভোর থেকে তিস্তা নদীর পানি নীলফামারীর ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে বাড়তে শুরু করে এবং দুপুর ১২টা পর থেকে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক নূরুল ইসলাম জানান রবিবার ভোর থেকে তিস্তার পানি বাড়তে শুরু করে। সকাল ৬টায তিস্তার পানি ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজ পয়েটে বিপদসীমা ৫২ দশমিক ১৩ সেন্টিমিটার, ৯টায় ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার ও দুপুর ১২টায় এবং বিকেল ৩ টায় ৫২ দশমিক ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে থাকে। এই পয়েন্টে বিপদসীমা ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার। এদিকে পানির গতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।

তিস্তার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করায় ডিমলা উপজেলার পূর্বছাতনাই, পশ্চিম ছাতনাই, টেপাখড়িবাড়ী, খগাখড়িবাড়ী, খালিশা চাপানি, ঝুনাগাছ চাপানি ও গয়াবাড়ী ইউনিয়নের ১৫টি চরসহ নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওইসব ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধিরা। ওই সব গ্রামের মানুষজন রাতে তিস্তার পানি আরো বৃদ্ধি পাওয়ার আতঙ্কে রয়েছেন।

টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম শাহিন জানান খগাখড়িবাড়ী বাইশপুকুর গ্রামটিতে বানের পানি প্রবেশ করতে শুরু করায় ওই গ্রামের মানুষজনের মধ্যে আতঙ্কে দেখা দিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারীর ডালিয়া বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরী জানান, ভারী বৃষ্টিপাত ও উজানের ঢলে তিস্তার পানি গতকাল দুপুর থেকে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ব্যারেজের সবক’টি জলকপাট খুলে দেয়া হয়েছে ।