খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ক্লিনার কর্তৃক মুমূর্ষু রোগীর অক্সিজেন খুলে নেওয়ার পরই শেখ সাইফুল ইসলাম (৩৮) নামের এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। গঠিত কমিটিকে জরুরী ভিত্তিতে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
গত ২২ সেপ্টেম্বর হাসপাতালের পরিচালক ডা. কাজী মো. আইনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক মেডিসিন ইউনিট প্রধান ডা. শেখ মোয়াজ্জেম হোসেনকে আহবায়ক করে এবং হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মো. আখতারুজ্জামানকে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অপর তিনজন সদস্য হলো হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. হোসেন আলী, হাসপাতালের সেবা তত্ত্বাবধায়ক (ভারপ্রাপ্ত) রেবেকা বানু এবং হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা জি এম ইকতিয়ার উদ্দীন। অফিস আদেশে বলা হয়েছে গত ২২ সেপ্টেম্বর পত্রিকায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে জনৈক সেচ্ছাসেবক এর বিরুদ্ধে “বকশিশ না পেয়ে ক্লিনার খুলে নিল অক্সিজেন, রোগীর মৃত্যু” নামে অভিযোগ প্রকাশিত হওয়ায় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাখালী, ঢাকা এর পরিচালক (হাসপাতাল) মহোদয়ের টেলিফোনিক তথ্যের প্রেক্ষিতে হাসপাতালের চিকিৎসক/কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো। গঠিত কমিটিকে জরুরিভিত্তিতে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য বলা হলো এবং অত্র হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা, জি.এম. ইকতিয়ার উদ্দীন কে কমিটিকে সার্বিক সহোযোগিতা করার জন্য বলা হয়েছে।
খুমেক হাসপাতালে দুদকের অভিযান : খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডাক্তারের অনুমতি ছাড়া অক্সিজেন মাক্স খুলে নেওয়ায় রোগীর মৃত্যু ঘটনায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) খুলনা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের একটি টিম হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছে। মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে দুদক এ অভিযান চালায়। এর আগে বেলা ১১টায় এ ঘটনার প্রতিবাদে হাসপাতাল চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা। বিক্ষোভ শেষে তারা হাসপাতালের পরিচালক বরাবর মৌখিক অভিযোগ করেন। দুদক ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রোগীর মৃত্যুর জন্য দায়ী ওয়ার্ডের আউটসোর্সিং ক্লিনার আব্দুল জব্বার রোগীর সিলিন্ডারসহ অক্সিজেন মাস্ক খুলে নিয়ে আরেক রোগীকে দেন। এর আধাঘণ্টার মধ্যেই সাইফুল মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। অভিযুক্ত ক্লিনারের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। অপরদিকে বিভিন্ন রোগীকে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগে দুইজন নারী দালালকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নিতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে সর্পোদ করা হয়েছে। দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছে হাসপাতালে অভিযান চালমান রয়েছে। উল্লেখ্য, গত ২০ সেপ্টেম্বর সকালে কিডনির জটিলতা নিয়ে শেখ সাইফুল ইসলামকে (৩৮) খুমেক হাসপাতালের মেডিসিন ইউনিট-১ এর ৫ ও ৬নং ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। সন্ধ্যায় তার শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে রাত ১টার পর অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। ২১ সেপ্টেম্বর সকালে ওয়ার্ডের আউটসোর্সিং কর্মচারী (ক্লিনার) আব্দুল জব্বার গিয়ে সিলিন্ডারসহ অক্সিজেন মাস্ক খুলে নিয়ে আরেক রোগীকে দেন। এর আধাঘণ্টার মধ্যেই সাইফুল মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।