DailySangram-Logo-en-H90
ই-পেপার আজকের পত্রিকা

গ্রাম-গঞ্জ-শহর

নিরসনের দাবিতে ওয়াসাভবন ঘেরাও চট্টগ্রামে পানি সংকট তীব্র

নিরবচ্ছিন্ন পানির দাবিতে চট্টগ্রাম ওয়াসা ভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছে চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২ টার দিকে নগরের দামপাড়া এলাকায় চট্টগ্রাম ওয়াসার কার্যালয়ে এ ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে।

চট্টগ্রাম ব্যুরো
Printed Edition
Default Image - DS

নিরবচ্ছিন্ন পানির দাবিতে চট্টগ্রাম ওয়াসা ভবন ঘেরাও কর্মসূচি পালন করেছে চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ১২ টার দিকে নগরের দামপাড়া এলাকায় চট্টগ্রাম ওয়াসার কার্যালয়ে এ ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে। এ সময় তারা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের সঙ্গে দেখা করে দ্রুত সময়ের মধ্যে নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহের দাবি জানিয়ে স্মারকলিপি জমা দেন। বেলা ১২টার দিকে নগরীর দামপাড়া এলাকায় ওয়াসা কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ করেন গ্রাহকরা। এ সময় তারা পানির দাবিতে নানা স্লোগান দিতে থাকেন।

বিক্ষোভকারী নগরীর ফকিরহাট এলাকার আবু তাহের সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি একজন ভোক্তা। কিন্তু আমাকে পানি না দিয়ে বিল ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমাকে উনারা আরও বলেছে, আমাকে নাকি পানি দেয়ার জন্য তার কন্টাক্ট নেয়নি। তারা শুধু টাকা নেবে। পানি দেওয়া তাদের কাজ না। আমি হচ্ছি আবাসিক গ্রাহক। আমাকে কমার্শিয়াল করে দিয়েছে।’

‘আবাসিকে এক ইউনিট পানির দাম ১৩ টাকা আর কমার্শিয়ালে ৩১ টাকা। তিনদিন ধরে আমি ওয়াসার কর্মকর্তাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি। আমাকে তারা নাজেহাল করেছে। কন্টাক্ট নিলেও গত একমাস ধরে আমাকে পানি দেয়া হচ্ছে না।’

আরেক বিক্ষোভকারী এস এম সাইফুল আলম বলেন, ‘আমরা চাই প্রশাসন কাজ করুক। আমরা সহযোগিতা করব। এখানে সমন্বয় নেই। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র বলেছেন সমন্বয় করার জন্য। সিটি গবর্মেন্ট করার জন্য। ওয়াসা ও গ্যাস কোম্পানি রাস্তা খুঁড়ে লাইন কাটে। পিডিবি লাইন বসায়। সিটি করপোরেশন ড্রেন তৈরি করে। কারো কোনো সমন্বয় নেই। এখানে যে অরাজকতা হচ্ছে, তাতে নগরবাসী কষ্ট পাচ্ছে।’

‘এ রমযান মাসে নিরবচ্ছিন্ন পানি দেয়ার কথা বলেছে। কিন্তু সেটা হয়নি। আমরা ওয়াসার এমডির সঙ্গে কথা বলেছি। এ সংকট কখন শেষ হবে সেটা জিজ্ঞেস করেছি। তিনি আমাদের আজ রাত থেকে পানি দেবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।’

এ বিষয়ে নগরের ধনিয়ালাপাড়ার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা নিয়মিত পানি পাচ্ছি না। এমনকি রমযানের মধ্যেও শনিবার থেকে পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় পানি সরবরাহ বন্ধ ছিল। প্রায়ই পাইপলাইন ফেটে যাচ্ছে, যার কারণে আমরা তীব্র পানি সংকটে ভুগছি। আমরা এই চলমান সংকটের বিরুদ্ধে দাবি জানাতে এখানে এসেছি।'

মো. রফিক নামে আরেক বিক্ষোভকারী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমাদের বাসাবাড়ি, মসজিদ মাদ্রাসা, স্কুল কলেজ ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চট্টগ্রাম ওয়াসার অসহনীয় পানির সংকট তীব্র আকার ধারণ করেছে। নিয়মিত ওয়াসার পানির অভাবে আমাদের জীবন দিন দিন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এখানে দুর্ভোগের আরেক নাম ওয়াসার পানি। আমরা এ থেকে মুক্তি চাই।’

চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ আলম বলেন, ‘রোজার চার-পাঁচদিন আগে জলাবদ্ধতা প্রকল্পের ঠিকাদার দ্বারা আমাদের প্রধান সঞ্চালক লাইন ক্ষতিগ্রিস্ত হয়েছে। সেটা ছিল কর্ণফুলী ওয়াটার সাপ্লাই প্রজেক্টের প্ল্যান-১ এর ট্রান্সমিশন লাইন। এগুলো কিন্তু সহজে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। সেগুলোর গ্যারান্টি প্রায় ১০০ বছরের। এক্সপার্ট লোক দিয়ে তারা প্রকল্পের কাজ করেনি। তারা পাইলিং করতে গিয়ে পাইপের একপাশে ক্ষতি করেছে।’

‘যেহেতু ট্রান্সমিশন লাইন, তাই একটি প্ল্যান্টের পানি সরবরাহ বন্ধ ছিল। প্রায়ই ৭০০ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে এ প্ল্যান্টের পানির বিস্তৃতি ছিল। সেটা মেরামত করে ওই ৭০০ কিলোমিটার পানির সরবরাহ দেওয়ায় একটু সময় লেগেছে।’

তিনি বলেন, ‘ওই সমস্যা কাটিয়ে ওঠার পর শনিবার আমাদের হালিশহরের আরেকটি ট্রান্সমিশন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাওয়ার গ্রেড কোম্পানি তাদের কাজ করার সময় কেবল টানতে গিয়ে এ ক্ষতি করে। সেটা মেরামতের কাজ চলছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আজ রাতেই মেরামতের কাজ শেষ করে পানি সরবরাহ চালু করব।’

বিক্ষোভকারীরা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার পাশার কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়ে দ্রুত পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবি জানান। এ সময় অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় পাইপলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় নাগরিকদের দুর্ভোগের জন্য দুঃখপ্রকাশ করে সন্ধ্যার ভেতর পানি সরবরাহ স্বাভাবিক হওয়ার আশ্বাস দেয় ওয়াসা কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আনোয়ার পাশা বলেন, ‘পিজিসিবির একটি প্রকল্পের উন্নয়ন কাজ চলাকালীন সাগরিকা মোড়ে চট্টগ্রাম ওয়াসার ১১০০ এম এম ব্যাসের প্রধান সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ কারণে নগরের ধনিয়ালাপাড়া, দেওয়ানহাটসহ আশপাশের বেশকিছু এলাকায় পানি সরবরাহ বিঘ্নিত হয়।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দুর্ভাগ্য রোজার চারদিন আগে একবার প্রধান সঞ্চালন লাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, সেটাও বড় ধরনের ক্ষতি। প্রায় সাত থেকে আটদিন লেগেছে মেরামত করতে। এখন আরও একবার ক্ষতিগ্রস্ত হলো। আমরা আশা করছি, আজ সন্ধ্যার মধ্যে লাইনটি মেরামত শেষে চালু করতে পারবো। এরপর পানি সরবরাহ পরিস্থিতি ধীরে ধীরে উন্নতি হবে।’