মাদারীপুর সংবাদদাতা: আরমিন নামে ৬ বছরের এক শিশু হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী ইজিবাইক চালক মো. সাজ্জাদ হোসেন খান দীর্ঘ কারাভোগের পর ২০১১ সালে মুক্তি পেয়েই আরেক মাদ্রাসাছাত্রী সানজিদা আক্তার দীপ্তি (১৫ কে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ গুমের চেষ্টার অপরাধে অবশেষে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত হলেন। গতকাল মাদারীপুরে আলোচিত মাদ্রাসাছাত্রী সানজিদা আক্তার দীপ্তি (১৫) ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় ইজিবাইক চালক মো. সাজ্জাদ হোসেন খানকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এছাড়াও মামলার আসামীকে ১০ লক্ষ টাকা অর্থ দন্ডের আদেশ দেন। গকবাল মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে মাদারীপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক শরীফ এ এম রেজা জাকের এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ের সময় আসামী আদালতে উপস্থিত ছিলেন। সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট শরীফ মো: সাইফুল কবীর সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন বলেন নিহত দীপ্তি মাদারীপুর সদর উপজেলার চরনচনা গ্রামের মজিবর ফকিরের মেয়ে এবং বলাইরচর শামসুন্নাহার বালিকা মাদ্রাসার দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিলেন।
মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরনে প্রকাশ, ২০১৯ সালের ১৩ জুলাই মাদারীপুর শহরের পূর্ব খাগদী এলাকার একটি পরিত্যক্ত পুকুর থেকে অজ্ঞাত এক কিশোরীর মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরদিন নিহতের বাবা মজিবর ফকির লাশটি শনাক্ত করে জানান, সেটি তার মেয়ে দীপ্তি। ঘটনার পর মজিবর ফকির মাদারীপুর সদর থানা একটি হত্যা মামলা দায়ের করলে তদন্তে নামে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-৮। তদন্তে বেরিয়ে আসে ইজিবাইক চালক সাজ্জাদ হোসেন খান দীপ্তিকে ধর্ষণের পর হত্যা করেন। এরপর সাজ্জাদ কে গ্রেফতার করা হলে পরবর্তীতে সে ম্যাজিস্ট্রেট এর ফৌ:কা:বি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী দেন এবং দীর্ঘ তদন্ত শেষে সদর থানার এসআই মো: শহিদুল ইসলাম২০১৯ সালে ১৯ ডিসেম্বও আসামীর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করে।
র্যাবের তদন্তে জানা যায়, দন্ডপ্রাপ্ত সাজ্জাদ হোসেন পূর্বে খাগদী গ্রামের সৈয়দ আজিজুল হকের ৬বছরের শিশুকন্যাকে হত্যা করায় সেই মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ছিলেন এবং দীর্ঘকারাভোগের পর ২০১১ সালে মুক্তি পান। এরপর আবার ২০১৯ সালের ১১ জুলাই বৃষ্টির দিনে দীপ্তি তার ইজিবাইকে ওঠেন চরমুগরিয়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে। অন্য কোনো যাত্রী না থাকায় সাজ্জাদ জোর করে দীপ্তিকে নিজের বাড়িতে নিযে গিয়ে ধর্ষণ ও হত্যা করেন। পরে মরদেহ বিদ্যুতের তার দিয়ে বেঁধে কয়েকটি ইটসহ পুকুরে ফেলে দেন। দুই দিন পর লাশটি ভেসে উঠলে এলাকাজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। নৃশংস ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে মানববন্ধন, বিক্ষোভ ও দ্রুত বিচারের দাবিতে ফেটে পড়ে স্থানীয়রা
দীপ্তির বাবা মজিবর ফকির রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আমার মেয়ে হত্যাকারী আইনের কাছে জবাবদিহি করেছে। আমরা এই রাযের মাধ্যমে ন্যায় বিচার পেয়েছি।
মামলার পিপি শরীফ সাইফুল কবীর আরো বলেন, এটি ছিল অত্যন্ত নৃশংস একটি হত্যা ও ধর্ষণ মামলা। দীর্ঘ ছয় বছর বিচারিক কার্যক্রম শেষে আদালত অভিযুক্ত সাজ্জাদ হোসেনকে দোষী সাব্যস্ত করে ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন। আদালত ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করেছেন। আমরা রায়ে সন্তুষ্ট।