বাড়ি ফেরার তাড়ায় জীবন হারাতে হলো জালাল উদ্দিনকে (৫০)। রোববার রাতের শেষ প্রহরে দৌড়ে চলন্ত ট্রেনে ওঠার চেষ্টায় পা পিছলে পড়ে যান তিনি। মুহূর্তেই জীবন-মৃত্যুর মাঝে ছটফট করতে থাকেন রেললাইনে। পরে স্থানীয়রা গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে হাসপাতালে নিলেও শেষ রক্ষা হয়নি-চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনাটি ঘটে রোববার (২ নভেম্বর) রাত ৯টা ১০ মিনিটে গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর শহরের রেলগেট এলাকায়।
নিহত জালাল উদ্দিন ময়মনসিংহ জেলার গফরগাঁও উপজেলার চড় আলগী ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের নিধিয়ার চড় গ্রামের মৃত তৈয়ব উদ্দিনের ছেলে। জীবিকার টানে প্রতিদিন শ্রীপুর বাজারে সবজি বিক্রি করতেন তিনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত ৯টার দিকে শ্রীপুর স্টেশনে একই সময়ে দাঁড়িয়ে ছিল দেওয়ানগঞ্জগামী আন্তঃনগর ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস ও ঢাকাগামী মহুয়া কমিউটার এক্সপ্রেস। ট্রেন ছাড়ার মুহূর্তে জালাল উদ্দিন দ্রুত বাড়ি ফেরার তাড়ায় দৌড়ে ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেসে উঠতে যান। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস-হঠাৎ পা পিছলে পড়ে যান ঠিক পাশে থাকা কমিউটার এক্সপ্রেস ট্রেনের সামনে।
প্রায় ৪০ ফুট পর্যন্ত ট্রেনটি তাকে টেনে নিয়ে যায়। এক মিনিটের মতো রেললাইনের নিচে পড়ে থাকেন তিনি, তারপর স্থানীয়রা প্রাণপণ চেষ্টা করে তাকে উদ্ধার করেন। প্রথমে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা অবস্থা আশঙ্কাজনক দেখে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। রাত পৌনে ১২টার দিকে সেখানে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন জালাল উদ্দিন।
প্রত্যক্ষদর্শী মাদ্রাসা শিক্ষক মিসবাহ উদ্দিন বলেন,“আমি তাকে থামানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তিনি দৌড় থামাননি। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই পড়ে গেলেন ট্রেনের নিচে। আমরা দৌড়ে গিয়ে উদ্ধার করি, কিন্তু বাঁচানো গেল না। পরে জানতে পারি, উনি আমারই ইউনিয়নের মানুষ।”
শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, “রাতে গুরুতর আহত অবস্থায় জালাল উদ্দিনকে আনা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেলে পাঠানো হয়েছিল, কিন্তু তিনি সেখানে মারা যান।” সোমবার বেলা ১১টায় নিজ গ্রামে জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে।
শ্রীপুর রেলস্টেশনের মাস্টার মো. সাইদুর রহমান জানান, “দুটি ট্রেন একসঙ্গে প্ল্যাটফর্মে ছিল। শুনেছি, একজন যাত্রী দৌড়ে ট্রেনে উঠতে গিয়ে নিচে পড়ে গেছেন। বিস্তারিত রেলওয়ে পুলিশ তদন্ত করবে।”
শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল বারিক বলেন, “ঘটনার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। দুর্ঘটনার বিষয়টি রেলওয়ে পুলিশ তদন্ত করে দেখছে।”
একটি অসতর্ক মুহূর্ত-আর তাতে নিভে গেল এক মানুষের জীবন। বাড়ি ফেরার তাড়াহুড়োতে যারা প্রতিদিন ট্রেন ধরতে দৌড়ান, তাদের জন্য জালাল উদ্দিনের এই মৃত্যুই এক করুণ সতর্কবার্তা।