রংপুর নগরীতে ৪ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মিত ২টি ফুটওভার ব্রিজ পথচারীরা ব্যবহার করছে না।
নগরীর যানজট নিরসন ও পথচারীদের চলাচলের সুবিধার্থে প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করেছে রংপুর সিটি কর্পোরেশন। কংক্রিট, পাটাতনসহ স্টিলের ফাউন্ডেশনে নির্মিত এর ১টি রংপুর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল রোডস্থ মহাসড়কে অপরটি নগর ভবনের প্রবেশ ফটকের পাশে প্রধান সড়কের উপর। টার্মিনালের পাশের ব্রিজে চলাচল কিছুটা চোখে পড়লেও নগর ভবনের পাশে থাকা ব্রিজটির নীচের চতুর্পাশে ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে। ফলে ফুটওভার ব্রিজ থাকা সত্বেও নগরবাসী সে পথে না হেটে পার হচ্ছেন বিপদজনক ভাবে প্রধান সড়কের উপর দিয়ে। যে কারণে ফুটওভার ব্রিজ থাকার পরও সেখানকার সড়কে বেড়েছে যানজট। রাস্তা পারাপারে বেড়েছে ভোগান্তি। প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনা। অনেকে মনে করছেন ফুটওভার ব্রিজ দুটি নির্মাণে যথাযথ স্থান নির্ধারণ করতে না পারা এবং রংপুর সিটি কর্পোরেশনের সঠিক পরিকল্পনার অভাবেই এই দশা হয়েছে।
রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল শাখা সূত্রে জানা গেছে, ফুটওভার ব্রিজের জন্য কাঙ্খিত স্থানে জমি না পাওয়ায় বিকল্প হিসেবে নগর ভবনের পাশেই একটি ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। এটি পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজ মোড়ে নির্মাণের প্রস্তাব ছিল। এজন্য পুলিশ প্রশাসনের কাছে কিছু জমি চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় বাধ্য হয়ে নগর ভবনের পাশেই নির্মাণ করা হয়। ২০২২ সালে ব্রিজটি পথচারীদের জন্য খুলে দেয়া হলেও ফুটওভার ব্রিজদিয়ে পারাপারে সাধারণ পথচারীদের তেমন আগ্রহ দেখা যায়না। রাস্তা পারাপারে দুর্ঘটনা এড়াতে ব্রিজ দুটি নির্মাণ করা হলেও সড়ক ডিভাইডার রাখা হয়েছে উন্মুক্ত। কোনো ফেন্সিং না থাকায় পথচারীরা ঝুঁকি নিয়ে ইচ্ছামতো রাস্তা পারাপার হচ্ছেন। টার্মিনালে এখন পথচারী পারাপার দেখা গেলেও নগর ভবনের পাশের ওভারব্রিজটিতে পথচারীদের তেমন চোখে পড়ে না।
সরেজমিন দেখা গেছে, নগরীর ব্যস্ততম সিটি বাজারসংলগ্ন সড়কে সব সময় যানজট লেগেই থাকে। ট্রাফিক পুলিশ থাকলেও ব্যবস্থাপনা বর্তমানে দুর্বল। অপরদিকে সকল যানবাহন চালক এবং পথচারীদের আইন মেনে চলায় উদাসীনতার কারণে এই সড়কে থাকা ফুটওভার ব্রিজটি শুধু সৌন্দর্য হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। এটি বর্তমানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের বিজ্ঞাপনের স্থান হয়েছে।
সিটি বাজার ও সিটি কর্পোরেশনসহ সড়কের উভয়পাশ থেকে মানুষ বেপরোয়াভাবে সড়ক পারাপার হচ্ছেন। কোনো বাধ্যবাধকতা বা প্রতিবন্ধকতা না থাকায় কারো মধ্যে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে তেমন আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। তবে পথচারী বা সাধারণ মানুষ এই ব্রিজের সুবিধা না নিলেও কিছু ব্যবসায়ী ফুটওভার ব্রিজের নীচে গড়ে তুলেছেন মওসুমী ফলসহ বিভিন্ন পন্যের দোকান। এর ফলে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন ফুটওভার ব্রিজের দুপাশে যানজট, মানুষের জটলা আর রাস্তা পারাপারে ভোগান্তি বেড়েছে ।
মাঝেমধ্যে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা এই ব্রিজে উঠে সেলফি তোলা এবং সময় পার করার জন্য। আর সাংবাদিকদের ফুটওভার ব্রিজটি ব্যবহার করতে দেখা যায়, ছবি বা ভিডিও করার জন্য। ফুটওভার ব্রিজ ব্যাবহারে মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব থাকায় এটি কোনো কাজে আসছে না বলে জনগনের অভিমত। এছাড়া ওই সড়কের পুরো ডিভাইডার অরক্ষিত এবং রেলিং নেই, যে কারণে জীবনের ঝুঁকি নিয়েই মানুষ রাস্তা পারাপার হচ্ছেন। সিটি কর্পোরেশন ও ট্রাফিক বিভাগকে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহারে মানুষকে উদ্বুদ্ধ করার উদ্যোগ নিতে হবে। মানুষের সচেতনতা বাড়ানো হলে ব্রিজ নির্মাণের সুফল মিলবে। এছাড়া রংপুর সিটি কর্পোরেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার পাশাপাশি জনগণকে সচেতন করলেই এর সুফল পাওয়া যাবে।
এ ব্যাপারে রংপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা উম্মে ফাতেমা বলেন, মানুষ যাতে নিরাপদে রাস্তার পারাপার করতে পারে, সে জন্য সিটি বাজারের সামনে গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ফুটওভার ব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু সচেতনতার অভাবে এর কার্যকারীতা কম।