চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা : জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, যে সংবিধান বাংলাদেশের সমাজ ও রাষ্ট্রকে বিভাজিত করেছে, বাংলাদেশকে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র পরিণত করেনি, সেই

সংবিধানের পরিবর্তন করে নতুন গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে। যেখানে মুক্তিযুদ্ধ, গণঅভ্যূত্থান এবং ব্রিটিশবিরোধী ১৯৪৭ সালের জনআকাক্সক্ষার কথা থাকবে।

গতকাল বুধবার “দেশ গড়তে জুলাই পদযাত্রার” নবম দিনে দলটির পদযাত্রা ও পথসভা অনুষ্ঠিত হয় সীমান্তবর্তি জেলা চুয়াডাঙ্গায়। এর আগে জেলার হাটবোয়ালিয়া ও আলমডাঙ্গায় পথসভা অনুষ্ঠিত হয় । এসময় বৃষ্টি উপেক্ষা রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে শত-শত মানুষ হাত নেড়ে অভিবাদন জানায়। বেলা ২ টায় চুয়াডাঙ্গা শহীদ হাসান চত্বরে অনুষ্ঠিত হয় পথসভায়।

পথসভায় এনসিপির আহবায়ক নাহিদ ইসলাম আরো বলেন, গত ৫৪ বছরে চুয়াডাঙ্গা সহ বিভিন্ন সীমান্তে নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। দর্শনা সীমান্তে এক কৃষককে হত্যার ৭ দিন পর তার লাশ ফেরত দিয়েছে বিএসএফ। বিএসএফ কোন সীমান্ত রক্ষী বাহিনী নয় বরং একটি খুনি বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষদেরকে খুন করায় যেন তাদের একমাত্র দায়িত্ব নাহিদ ইসলাম বলেন, যারা গণহত্যা চালিয়ে আমার ভাইদের হত্যা করেছে, তাদের বিচার না করে নির্বাচন নয়। বিচার ও সংস্কারের পরেই নির্বাচন।তিনি আরও বলেন, আপনাদের বিচার করতে হবে কারা ফ্যাসিবাদের বিপক্ষে লড়েছে। কারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সংগ্রাম করেছ। যে ফ্যাসিবাদ বিদায় নিয়েছে। সেই জায়গায় অন্যরা বসার ব্যবস্থা করতে চাইছে। আপনারা বিচার বিশ্লেষণ করে সমর্থন করুন। সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজ মুক্ত চুয়াডাঙ্গা গড়ে তুলুন। আমরা গণঅভ্যুত্থানের পর নিরপেক্ষ প্রশাসন, পুলিশ ও আদালত চেয়েছিলাম; কিন্তু আমরা দেখছি প্রশাসনে যারা রয়েছেন তারা একটি দলের হয়ে কাজ করতে শুরু করেছে। জুলাই ঘোষণাপত্র ও সংস্কারের বিষয়ে এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, শহীদ পরিবার যারা আছে তাদের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে। শুধু এই সরকার না, যেই সরকারই ক্ষমতায় আসুক, এটা করতে হবে। এটার জন্য আমরা জুলাই ঘোষণাপত্রের কথা বলছি। যে জুলাই ঘোষণাপত্রে এই শহীদদের কথা থাকবে, এই পরিবার গুলোর কথা থাকবে এবং সেটা সংবিধানে যুক্ত করা হবে। জুলাই ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশের কী কী সংস্কার লাগবে সেই কথা থাকবে। আমরা এই দুটি দাবিতে সারা দেশে পদযাত্রা করছি।

এ সময় জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ছাড়াও মুখ্য সমন্বয়ক নাসিরুদ্দিন পাটওয়ারী, সিনিয়র যুগ্ম-সদস্য সচিব ডাঃ তাসনিম জারা, যুগ্ম-সদস্য সচিব মাহিন সরকার, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, মূখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। গত মঙ্গলবার (৮ জুুলাই) মেহেরপুরে পদযাত্রা শেষ করে সেখানে রাত যাপন করেন এনসিপি’র কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। এরপরে প্রচন্ড বৃষ্টি উপেক্ষা করে বুধবার বেলা ১২ টার পরে সেখান থেকে রওয়ানা হয়ে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার হাটবোয়ালিয়ায় পৌঁছে সেখানে সংক্ষিপ্ত পথসভায় বক্তব্য রাখেন। তারপর পদযাত্রা নিয়ে তারা আলমডাঙ্গা হয়ে চুয়াডাঙ্গায় এসে পৌঁছান বেলা আড়াইটার দিকে। এসময় মুষলধারায় বৃষ্টি উপেক্ষা করে চুয়াডাঙ্গা বড়বাজারের স্থানীয় শহীদ হাসান চত্বরে পথসভায় যোগ দেন। পথসভা শেষে তারা দর্শনায় পৌঁছে চুয়াডাঙ্গা সীমান্তে বিএসএফের গুলীতে নিহত উপজেলার ঝাঁঝাডাঙ্গা গ্রামের ইব্রাহীম হোসেন বাবুদের বাড়ীতে গিয়ে পরিবার পরিজনদের প্রতি সমবেদনা জানান।