আফাজ্জল হোসেন, বাগমারা (রাজশাহী) : রাজশাহীর বাগমারা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় অতিবৃষ্টিতে পানচাষিরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। আষাঢ় মাসের শেষ হতে শ্রাবনের শেষ প্রান্তে অঝোর বৃষ্টি চলছে। প্রায় প্রতি দিন বৃষ্টি হলেও কোন কোন সময় টানা বর্ষণে পান বরজের পানি নামতে না পেরে বরজের চালার ভর সইতে না বরজ উল্টে পড়ে যাচ্ছে। অনেক পান বরজে পানি ঢুকে জলবদ্ধতায় পান গাছ মরছে। উপজেলার পান চাষ সমৃদ্ধ এলাকায় কৃষক ও ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে পানের ক্ষয় ক্ষতির নানা তথ্য জানা গেছে। এছাড়া বর্ষণে উপজেলার উড়তি ফসল ধান, পাট, বেগুন, মরিজ ও সবজির ব্যাপক ক্ষতি গুণছেন কৃষকরা।
জানা যায়, এই এলাকার পান মিষ্টি ও সুস্বাদ হবার কারণে দেশে-বিদেশে কদর বেশী। উপজেলার পান কেনা-বেচার রয়েছে কয়েকটি হাট। সেগুলোর মধ্যে মচমইল, তাহেরপুর, মাদারীগঞ্জ ও মোহনগঞ্জ উল্লেখযোগ্য। রাজশাহীর অন্যতম হাট মচমইল, মাদারীগঞ্জ ও শ্রীপুর হাট থেকে প্রতি সপ্তায় ৬০/৭০ ট্রাক পান দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ হয়ে থাকে বলে জানান পানচাষিরা। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এই এলাকার পান মধ্যপ্রাচ্যে রপ্তানি হতো। বর্তমানে কোন কারণ ছাড়াই বাইরের ব্যবসায়ী নেই। ফলে হাটে বাজারে ব্যবসায়ীক ক্রেতা শুন্য হয়ে পড়েছে। এলাকার লোক বেশীর ভাগ কৃষির উপর নির্ভরশীল। অর্থকারী ফসল হিসেবে এলাকায় প্রধান ফসল পান। এবারে পুরো বছরে পানের দাম কম ছিল। কম দামে পান বিক্রি করে চাষিদের শ্রমিকের মূল্য জুটেনি। ফলে অনেক পানচাষি পান বরজের চালা-খুঁটিতে অতিরিক্ত খরচের ভয়ে হাত দিতে পারেনি। এতে করে অতি বর্ষণে অনেক বরজ পড়ে গেছে। পান বরজ পড়ার পাশাপাশি পচন রোগ ও লাল হয়ে গাছ মরে যাওয়ায় মারাত্মক ক্ষতির শিকার কৃষকরা। উপজেলার বালনগর, শ্যামপুর, মোহম্মাদপুর পোড়াকয়া সহ কয়েকটি এলাকায় সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে অধিকাংশ পান বরজে জলবদ্ধতা পান গাছ লাল হয়ে মরে যাচ্ছে। বালানগর গ্রামের জিয়াউল হক জানান, তার এক বিঘা জমির পান বরজ অতি বর্ষণে খুঁটি দুর্বল হয়ে মাটিতে পড়ে গেছে। এতে করে তার পানসহ ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। একই গ্রামের আশরাফুল ইসলাম জানান, তার ১৬ পনের পান বরজ টানা বর্ষণে পড়ে মাটির সাথে মিসে গেছে। পান বরজটি তার আয়ের প্রধান উৎস ছিল। অনেক ধার দেনা ও এনজিও থেকে টাকা নিয়ে পান বরজ করা বর্ষায় তার বরজ পড়ে যাওয়ায় নিঃশ্ব হয়ে পড়েছেন। একই ভাবে গ্রামের আবু হেনা রাসেল জানান, তার দেড় বিঘা জমিতে পান বরজ ছিল। অতি বর্ষায় বরজ মাটিতে লুটিয়ে পড়েছে। গ্রামের সুধী ব্যক্তিদের অভিমত বর্ষায় অতি বৃষ্টির কারণে অনেক পানচাষির বেহাল দশা। এমতবস্থায় সরকারী সহযোগিতায় ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব বলে জানান তারা।
এ ব্যাপারে বাগমারা উপজেলা কৃষি অফিসার আব্দুর রাজ্জাক বলেন, অতি বৃষ্টিতে কৃষকরা ক্ষতির সম্মুখীন। পান বরজের পাশাপাশি এলাকার সবজি চাষের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। প্রকৃতিক দুর্যোগ কিছু করার নেই। সরকারী ভাবে কৃষকদের সহযোগীর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।