শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) উপাচার্য মুহাম্মদ মাছুদ ও উপ-উপাচার্য শেখ শরীফুল আলমকে অব্যাহতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাঁরা এখন নিজ নিজ বিভাগে ফিরে যাবেন।

রাষ্ট্রপতি ও চ্যান্সেলরের অনুমোদনক্রমে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, ২০০৩-অনুযায়ী উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্য পদে ইতোপূর্বে নিয়োগকৃত অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ এবং অধ্যাপক ড. শেখ শরীফুল আলমকে তাদের নিজ বিভাগে প্রত্যাবর্তনের জন্য উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্য পদের আদেশ প্রত্যাহার করে ওই পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো।

ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্রদল-যুবদলের সঙ্গে শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক আহত হন।

এ ঘটনার পর ২৫ ফেব্রুয়ারি সিন্ডিকেট সভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য একাডেমিক কার্যক্রম ও হল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছিল। কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ১৩ এপ্রিল বন্ধ থাকা কুয়েট ক্যাম্পাসে প্রবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।

গত ১৪ এপ্রিল রাতে অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০১তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে ১৮ ও ১৯ ফেব্রুয়ারির সহিংসতার ঘটনায় ৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ সব ঘটনায় কুয়েট উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদকে অপসারণের এক দফা দাবিতে ২২ এপ্রিল বিকেল থেকে আমরণ অনশনে বসেছেন আন্দোলনরত ২৯ শিক্ষার্থী।

বুধবার শিক্ষা উপদেষ্টা গিয়ে শিক্ষার্থীদের অনশন ভাঙানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও ভিসির পদত্যাগের আল্টিমেটাম দেন। গত ২৩ এপ্রিল দিবাগত মধ্যে রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, কুয়েট উপাচার্য (ভিসি) এবং উপ-উপাচার্যকে (প্রো-ভিসি) দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।

শুক্রবার এই প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এর আগে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, এই দুজনকে অব্যাহতি দেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান আছে।

এ ব্যাপারে গত বুধবার তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সাম্প্রতিক ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে উদ্ভূত সংকট নিরসন এবং শিক্ষা কার্যক্রম দ্রুত শুরু করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্যকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদানের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। অনতিবিলম্বে একটি সার্চ কমিটি গঠনের মাধ্যমে এ দুটি পদে নতুন নিয়োগ প্রদান করা হবে। অন্তবর্তীকালে বিশ্ববিদ্যালযয়ের নিয়মিত কার্যক্রম চালু রাখার স্বার্থে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের মধ্য থেকে একজনকে সাময়িকভাবে উপাচার্যের দায়িত্ব অর্পণ করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। পরদিন শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়। ওই দিন দুপুরে সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকান্ড বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। ২৫ ফেব্রুয়ারি সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এরপর আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবিতে ১৩ এপ্রিল বিকেল থেকে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ১৮ ফেব্রুয়ারির সংঘর্ষের ঘটনায় ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়। এর প্রতিবাদে কুয়েট শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন। তারা কুয়েট উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য ও উপ-উপাচার্যকে সরিয়ে দেওয়া হল।