৩৩ বছর বয়সী একমাত্র মেয়ে আনিসা প্রতিবন্ধী। চোখের আড়াল হলেই দূরে কোথাও হারিয়ে যায়। তাই বাধ্য হয়েই মেয়েকে শিকলে বেঁধে রেখে অন্যের বাড়িতে কাজে যায় বৃদ্ধা মা খায়রুন নেছা (৭২)। এভাবে ২০ বছর ধরে শিকলবন্দি আনিসার জীবন।

কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের খোদ্দ বনগ্রামের এই অসহায় বৃদ্ধা। সেও ভুগছে নানা রোগে। জীবন চালানোর জন্য প্রতিবেশীদের বিভিন্ন ফসলের মৌসুম ও থালা-বাসন ধোঁয়ার কাজ করে। আর সমাজসেবা কার্যালয় থেকে বছরে ১৬ হাজার একশ’ টাকা ভাতা পায় মা ও মেয়ে। এসব দিয়েই চলে মা-মেয়ের জীবন। স্বামী মারা গেছে ১০ বছর আগে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ভাঙ্গা টিনশেড ঘরের কাঁচা মেঝের বারান্দায় সিমেন্টের খুঁটির সঙ্গে পায়ে শিকল ও তালা দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে প্রতিবন্ধি আনিসাকে। অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে। পাশেই বসে আছে বৃদ্ধা মা খায়রুন নেছা। মায়ের চোখে মুখে চিন্তার ভাঁজ। ওদিকে বন্দি জীবন থেকে মুক্তির জন্য শিকল ধরে টানাটানি করছে আনিসা। বকবক করছে অনবরত, হাসছে, চিৎকার করছে।

খায়রুন নেছা জানায়, আনিসার বয়স যখন পাঁচ বছর, তখন সে বুঝতে পারে তার মেয়ে আর দশটা মেয়ের মতো স্বাভাবিক নয়। সে সময় প্রায়ই বাড়ি থেকে হারিয়ে যেত আনিসা। খোঁজাখুঁজির করে কয়েকদিন পরে অন্য গ্রামে পাওয়া যেত তাকে। এভাবে কয়েক বছর যাওয়ার পর মেয়েকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা শুরু। প্রায় ২০ বছর ধরে চলছে আনিসার শিকল বন্দি জীবন।

বৃদ্ধা আরও জানান, তার স্বামী ছিল একজন দিনমজুর। খুব অভাবের সংসার তাদের। সবাই মেয়েকে ডাক্তার দেখানোর কথা বলত, কিন্তু টাকার অভাবে তা হয়ে ওঠেনি। ১০ বছর আগে তার স্বামী মারা গেলে অভাব আরও বেড়ে যায়। সেজন্য আর মেয়ের চিকিৎসা করানো হয়নি। তবে চিকিৎসা পেলে তার মেয়ে ভালো হতে পারে বলে তার আশা। প্রতিবেশীদের বাড়িতে গৃহস্থালির কাজ করে আর সরকারিভাবে বছরে ছয় হাজার টাকা বয়স্ক ভাতা পায় মা, আর মেয়ে ১০ হাজার একশ টাকা প্রতিবন্ধী ভাতা পায়। তা দিয়েও চলছে জীবন।

প্রতিবেশী আব্দুল খালেক বলেন, মাঝেমাঝে আনিসা সুস্থ্য মানুষের মতো কথা বলে, আবার কখনো বা এলোমেলো কথা বলে। তাদের সংসারে খুব অভাব। তবে ভালো চিকিৎসা পেলে আনিসা এখনও সুস্থ্য জীবনে ফিরতে পারে বলে তিনিও মতামত দেন।

শিলাইদহ ইউপি চেয়ারম্যান গাজী হাসান তারেক জানান, মেয়েটি চিকিৎসার অভাবে শিকলে বাঁধা থাকে, তা তিনি জানেন না। খোঁজ নিয়ে দেখবেন।

উপজেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জানান, তিনি আনিসার শিকলে বাঁধা ও তার মায়ের কষ্টের জীবনের কথা জানতে পেরেছেন। এরই মধ্যে মা ও মেয়ে সরকারি ভাতা পাচ্ছেন। লিখিত আবেদন পেলে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হবে।