নীলফামারীর উত্তরা ইপিজেডে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে শ্রমিকদের সংঘর্ষে হাবিব (৩৩) নামের এক শ্রমিক নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে অন্তত ৩০ জন। এদের মধ্যে ৫ জনকে গুরুতর আহত অবস্থায় নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টায় ইপিজেডের এভারগ্রীণ কারখানার শ্রমিকদের সঙ্গে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিহত হাবিব উত্তরা ইপিজেডের ইকু প্লাস্টিক কারখানার শ্রমিক ও নীলফামারী সদর উপজেলার কাজিরহাট এলাকার দুলাল হোসেনের ছেলে । পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রলে রাখতে ইপিজেড এলাকায় অতিরিক্ত আইনশৃংঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে
জানা যায়, অকারণে শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ,অবসরকালীন সুবিধা প্রদানসহ বিভিন্ন দাবিতে উত্তরা ইপিজেডের পরচুলা তৈরীর কারখানা এভারগ্রীন কোম্পানির শ্রমিকরা গত কয়েকদিন ধরেই আন্দোলন করে আসছিলেন। শ্রমিক আন্দোলনের কারণে সোমবার রাতে কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেন এভারগ্রীন কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। এরই জের ধরে গতকাল মঙ্গলবার সকালে ইপিজেডের মূল গেটে অবস্থান নেয় শ্রমিকরা। ইপিজেডের অন্য কোম্পানির শ্রমিকদের কাজে যোগদান বাধা প্রদান করতে থাকে তারা। এ সময় সৈয়দপুর-নীলফামারী সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। খবর পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার চেষ্টা করেন। এসময় তাদের সাথে শ্রমিকদের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ বাধে। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাহিরে গেলে আইনশৃংঙ্খলা বাহিনী লাঠিচার্জ,টিয়ার সেল ও ফাঁকা গুলি বর্ষণ শুরু করেন। এ সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে হাবিব নামে এক শ্রমিক গুলিবিদ্ধ হয়। তাকে নীলফামারী হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া গুরুত্বর আহত অবস্থায় মোমিনুর রহমান (২৫), জমিলা খাতুন (৩০), শাহিন ইসলাম (২৫), নুর আলম (৩০), লিপি আক্তার (২৭) ও মোস্তাক আহমেদকে (২৬) নীলফামারী আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ইপিজেডের শ্রমিক মমিনুর রহমান বলেন, “আমরা অন্য কারখানার কোনো শ্রমিককেই প্রবেশে বাধা দেই নি। বরং তারাই আমাদের আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে আমাদের সঙ্গে অবস্থান নেয়। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে প্রধান গেটের সামনে অবস্থান নিয়েছিলাম। এসময় সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা অমানবিকভাবে এক নারী শ্রমিককে মারধর করতে ছিল। তখন আমরা সব শ্রমিকরা এগিয়ে গেলে তারা আমাদের উপর নির্বিচারে গুলি চালাতে থাকে।
লিপি আক্তার নামে আরেক শ্রমিক বলেন,“আমরা ডিউটি করতে গেছি। যেয়ে দেখি গেট বন্ধ। হঠাৎ করে সেনাবাহিনী-পুলিশ আমাদের উপর হামলা ও গুলি চালায়। তারা কার অনুমতি নিয়ে আমাদের উপর গুলি চালালো। আমাদের এক ভাই নিহত হইলো। এর দায়ভার কে নিবে।
নীলফামারী জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ডা. তানভীরুল ইসলাম বলেন,“আমাদের এখানে মোট ৬ জনকে নিয়ে আসা হয়। এদের মধ্যে হাবিব নামে একজন ব্যক্তি ছিল তাকে আমরা মৃত অবস্থায় পাই। বাকিরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।”
৫৬ বিজিবি নীলফামারীর অধিনায়ক লে. কর্নেল এস.এম বদরুদ্দোজা বলেন,“বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। কোনো ধরনের মব সৃষ্টির সুযোগ নেই। প্রশাসনিক পর্যায়ে কাজ চলছে। বর্তমানে ইপিজেড এর সকল কোম্পানি বন্ধ রয়েছে।”
এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উত্তরা ইপিজেডের মহাব্যবস্থাপকের কার্যালয়ে শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সঙ্গে ইপিজেড কর্তৃপক্ষ,এভারগ্রীন কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর উদ্ধর্তণ কর্মকর্তাদের বৈঠক চলমান থাকায় তাদের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।